ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ারিং-বিতর্ক নতুন ঘটনা নয়। প্রতি মৌসুমেই ম্যাচ পরিচালনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্বচ্ছতা আনতে ২০২১ সাল থেকে প্রিমিয়ার লিগ সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করে বিসিবি। তাতেও বিতর্ক থামছে না। সম্প্রতি মুশফিকুর রহিমের আউট নিয়ে সরগরম ক্রিকেটাঙ্গন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মুশফিক নিজেও ফেসবুকে পোস্ট করে এই বিতর্কে রসদ জুগিয়েছেন।
মুশফিক আউট হননি, এই দাবি তুলে ফিল্ড আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছিলেন তামিম ইকবাল। শুধু এই আউট নন, বাঁহাতি ওপেনার নাকি ‘মনমতো সিদ্ধান্ত’ না পেলে সবসময়ই জেরার মুখে ফেলেন আম্পায়ারদের। এ কারণে আম্পায়াররা তামিমের ম্যাচ পরিচালনা করতে চান না বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির একটি সূত্র।
মূল ঘটনা
২৫ এপ্রিল, মিরপুরে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল মোহামেডান। প্রাইমের ইনিংসের ৩৪তম ওভারে নাঈম হাসানের বলে কাউ কর্নারে উড়িয়ে মারেন মুশফিকুর রহিম। মিডউইকেট থেকে অনেকটা দৌড়ে লাফিয়ে পড়ে ক্যাচ নেন আবু হায়দার রনি। তবে ওই ক্যাচ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
আউট ধরে নিয়ে মুশফিক ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছিলেন। তবে বাউন্ডারি লাইন পার হওয়ার আগে থেমে যান। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেটাররা ততক্ষণে ড্রেসিংরুম ছেড়ে বাইরে। কারণ ওই আউট মেনে নেননি তারা। এ নিয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কও চলে বেশ কিছুক্ষণ। অনফিল্ড আম্পায়ার মনিরুজ্জামান ও চতুর্থ আম্পায়ার শাহিন আল আসাদ আলভির সঙ্গে কথা বলেন প্রাইম ব্যাংকের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে দুই পক্ষ।
কিন্তু থার্ড আম্পায়ার না থাকায় ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই এখানে চূড়ান্ত। ফলে নিয়ম মেনে মুশফিকের ক্যাচ আউট মানতে হয়েছে তামিম-সালাউদ্দিনদের।
ভয়ে থাকেন আম্পায়াররা
২০২১ প্রিমিয়ার লিগের ঘটনা। আবাহনীর বিপক্ষে ফিল্ড আম্পায়ারের একটি এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি মোহামেডানের সাকিব আল হাসান। মেজাজ হারিয়ে স্টাম্পে লাথি মারেন তিনি। পরে স্টাম্প তুলে মাটিতে আছাড় মারতেও দেখা যায় তাকে। ক্রিকেটারদের এমন কাজে মাঠে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান আম্পায়াররা।
ওই ঘটনার পর লাথি-কাণ্ড আর হয়নি। তবে প্রতি মৌসুমে সিদ্ধান্ত দিয়ে জেরার মুখে পড়েন আম্পায়াররা। এই মৌসুমে যেমন একটি ম্যাচে কানকাশন বিতর্কে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলা থামিয়ে দেয় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তবে সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তামিম। ‘মনমতো সিদ্ধান্ত’ না হলেই তিনি নাকি প্রশ্নের মুখে ফেলেন আম্পায়ারদের।
আম্পায়ার্স কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, “ক্রিকেটাররা এখন শুধু শুধু আম্পায়ারদের ওপর চড়াও হচ্ছে। দুঃখজনক হলো, সিনিয়র ক্রিকেটাররা যদি এমন করে তাহলে ছোটরা কী করবে। মুশফিক সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করেন। তামিম মনমতো সিদ্ধান্ত না হলে আম্পায়ারদের চার্জ করেন। আম্পায়াররা এখন তামিমের ম্যাচ কেউ করতে চায় না। আউট না দিলেই সে দৌড়ে আসছে। সবকিছুতে দৌড়ে আসছে।”
নিয়ম কী বলছে
২৫ এপ্রিল মুশফিকের আউটে ফেরা যাক। যেসব লিগে টিভি আম্পায়ার থাকে না, সেখানে খালি চোখে স্পষ্ট না এমন ক্যাচ আউটের ক্ষেত্রে ফিল্ডারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়। ডিআরএস পূর্বযুগে আইসিসি থেকে এই নিয়ম স্বীকৃত ছিল।
প্রাইম ব্যাংক-মোহামেডান ম্যাচের ফুটেজে দেখা যায়, বাউন্ডারি লাইনের বাইরে মোবাইল রিপ্লে দেখছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার না থাকলে ফিল্ডার ছাড়া আর কোনও মাধ্যম থেকে আউটের সংকেত নেওয়ার নিয়ম নেই ফিল্ড আম্পায়ারদের। সংকেত তারা নিতে পারবেন শুধুমাত্র ক্যাচ নেওয়া ফিল্ডারের কাছ থেকে। আম্পায়াররা সেই পথেই হেঁটেছে। মুশফিকের ক্যাচ নেওয়া আবু হায়দার রনির কাছে জেনেই আউট দেন তারা।
এ ব্যাপারে সঠিক নিয়ম কী জানতে চাওয়া হলে সকাল সন্ধ্যাকে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু বলেছেন, “যে আউটটার কথা হচ্ছে, ভদ্রলোকের খেলা বলা হয় ক্রিকেটকে। সেখানে ফিল্ডাররাও সর্বোচ্চ সততা রেখে সংকেত দেবেন। ডিআরএসের আগে কী হতো? আম্পায়াররা আউট না দিলেও শচীন (টেন্ডুলকার) হেঁটে চলে গেছেন, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্টও গেছেন। এখন রনি সেই ক্যাচ ধরে আউট বলেছেন, এটা বিশ্বাস করে আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এখন তাদের কী দোষ। মনঃপূত না হলে নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ রেফারির কাছে লিখিত অভিযোগ তো তারা করতে পারে।”
বাইরের কোনও কিছুই আমলে নেওয়ার নিয়ম নেই আম্পায়ারদের, সেটাও জানিয়ে রাখলেন মিঠু, “আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দেন এটাই চূড়ান্ত। এরপর বাইরে থেকে মোবাইলে বা কারও কথা শুনে যদি অন্যকিছু মনেও হয় সেটা তো আম্পায়ার বিবেচনায় নিতে পারছে না।”
থার্ড আম্পায়ারে যত বাধা
প্রিমিয়ার লিগে থার্ড আম্পায়ার সহসাই যুক্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য বাজেটের পাশাপাশি লাগবে উপযুক্ত স্টেডিয়াম। সিসিডিএম চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী লিগে থার্ড আম্পায়ারের আবেদন জানিয়ে রেখেছেন আম্পায়ার্স কমিটির কাছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটা তার একার নয়।
লিগে থার্ড আম্পায়ার যুক্ত করতে হলে সম্প্রচারের মান, ক্যামেরা ও উপযুক্ত স্টেডিয়াম প্রয়োজন। মিঠুর বক্তব্য, “এখন সিসিটিভির ক্যামেরা দিয়ে লাইভস্ট্রিম করা হচ্ছে। এটা দিয়ে থার্ড আম্পায়ারিং সম্ভব নয়। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ভালোমানের ক্যামেরা লাগবে। বিপিএল মানের ক্যামেরা ফ্যাসিলিটি দরকার। বিকেএসপির খোলা মাঠে তা সম্ভব না। স্টেডিয়াম লাগবে, বড় অঙ্কের বাজেটের ব্যাপার আছে। সেটা একা আম্পারিং কমিটির সিদ্ধান্ত নয়। এটা বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আসতে হবে।”