ঘরোয়া ফুটবলে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা গেছে। ম্যাচ চলাকালে দলের অধিনায়ক রেগে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে সতীর্থরা। এমন ঘটনা ঘটেছে শনিবার প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে।
আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক রবসন রবিনহো হঠাৎই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ম্যাচে তখন ২-১ গোলে এগিয়ে বসুন্ধরা কিংস। খেলা শেষ হতে বাকি তখনও ১১ মিনিট।
ঠিক ওই সময় রবসন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এমনকি হাত থেকে খুলে ফেলেন অধিনায়কের বাহুবন্ধনী। তাকে মাঠে থাকার জন্য দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করছিলেন রাকিব হোসেন ও দরিয়েলতন গোমেজ। এই ঘটনার জন্য ম্যাচ প্রায় মিনিট খানেক বন্ধ ছিল।
ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকার এমন কাণ্ড দেখে খেলার ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন, “কিছু একটা হয়েছে। তবে ঘটনাটা কি সেটা আগে বোঝা প্রয়োজন।”
স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন শুরু থেকেই দলটির সঙ্গে আছেন। দুই ব্রাজিলিয়ানের এমন আচরণ বুঝিয়ে দিল যেন তাদের ওপর কোচের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিগেল ফেরেইরার সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রবসন।
মিগেলের আচরণে এমনিতেই বিব্রত ক্লাবের কোচ, খেলোয়াড়েরা। এর আগে মিগেল রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচে এক ফুটবলারের গলা চেপে ধরেন।
কিংসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘আসলে দুই ব্রাজিলিয়ান তো বন্ধু। ওদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। কখনও ওদের এমন আচরণ আগে দেখিনি। কালই মনে হলো। তবে বিষয়টা তো কাল থেকে শুরু হতে পারে না। হঠাৎ করে পুষে রাখা ক্ষোভ মাঠে দেখিয়েছে।”
এই ম্যাচে আবাহনীর ডিফেন্ডার মিলাদ শেখের করা ফাউলে পেনাল্টি পায় বসুন্ধরা কিংস। সাধারণত পেনাল্টি নিতে এগিয়ে আসে রবসন। কিন্তু এবার মিগেলই আগে থেকে পেনাল্টি নিয়েছে। এটাও হতে পারে দুজনের মনো মালিন্যের অন্যতম একটি কারণ। এমনটাই বললেন ওই কর্মকর্তা, “কালকে পেনাল্টিও মিগেল নিয়েছে। সাধারণত দেখা যায় পেনাল্টি রবসনই নেয়। মিগেল নেয় না।’’
এই দুজনের খেলার ধরন প্রায় একই রকম। একজন যদি কোনও কারণে একাদশে না থাকেন তাহলে অস্কার ব্রুজোনকে কৌশলও পাল্টাতে হয় সেদিনের ম্যাচে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হয়তো রবসন মনে মনে ভাবতে পারে মিগেল থাকলে সে গোল কম পায়। তার মনোযোগ কম আসতে পারে। মিগেলের আচরণগত কিছু সমস্যাও আছে।”
ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিরাও অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে দুই ব্রাজিলিয়ান যা করেছেন, তা রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছে। রেফারি নাসির উদ্দিন কিছুই করেননি। তাছাড়া রহমগতগঞ্জের বিপক্ষে গলা চেপে ধরার কারণে মিগেলকে তো লাল কার্ডই দেখানো হয়নি!
অথচ গতকাল আবাহনী-কিংসের ম্যাচটির ঘটনা ২০০৪-০৫ মৌসুমে ইংলিশ লিগে নিউক্যাসল ও অ্যাস্টন ভিলা ম্যাচকে মনে করে দেয়। যে ম্যাচে নিউক্যাসলের দুই ফুটবলার নিজেদের মধ্যে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাদের সতীর্থরা কোনওমতো থামাতে পেরেছিলেন। যদিও ইংলিশ রেফারি বাংলাদেশের মতো চুপ থাকেনি। নিউক্যাসলের দুই ফুটবলারকে লাল কার্ড দিয়ে মাঠে বাইরে পাঠিয়ে দেন।