Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

আমরা কেন মরি বা কীভাবে মৃত্যুকে ধোঁকা দিতে চাই

Dengue cases break annual record in Bangladesh as death toll nears 500

নতুন বই ‘হোয়াই উই ডাই: দ্য নিউ সায়েন্স অব এইজিং অ্যান্ড দ্য কোয়েস্ট ফর ইমরটালিটি’ সেটি নিয়েই একটি অত্যন্ত চমকপ্রদ বই। নোবেল জয়ী মলিউকিউলার জীববিজ্ঞানী ভেঙ্কাটারামন রামকৃষ্ণান দীর্ঘায়ুর উচ্চাকাঙ্ক্ষী তত্ত্ব যেমন এতে উপস্থান করেছেন, তেমনি তুলে ধরেছেন অমরত্বের কিছু নৈতিক সীমাবদ্ধতাও।

এ সংক্রান্ত সব ধরনের গবেষণা ও বিশ্লেষণের যাত্রায় নিজের বইয়ে রামকৃষ্ণান চিরকাল বেঁচে থাকার সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক খরচ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন।

রোগ এবং তাদের বিস্তার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধির কারণে ১৫০ বছর আগের তুলনায় মানুষের আয়ুষ্কাল ইতিমধ্যেই প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এটি কি আমাদের আরও আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে তিন বা চারগুণ করার পথ দেখায়?

রামকৃষ্ণান বার্ধক্য, মৃত্যু এবং অমরত্বের বাস্তবতা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সম্প্রতি সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাংবাদিক জেসিকা ডুলং

সিএনএন: বার্ধক্য কী? এটা কীভাবে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়?

রামকৃষ্ণান: বার্ধক্য হলো আমাদের কোষের ভেতরে জমা আণবিক বস্তুগুলোর মোট রাসায়নিক ক্ষতি, যা প্রথমে কোষগুলোকে, তারপর টিস্যুকে এবং সবশেষ জীব হিসেবে আমাদেরকে আক্রান্ত করে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, আমরা যখন মাতৃগর্ভে থাকি তখনই আমরা বার্ধক্যের যাত্রা শুরু করি। তবে সেই সময়ে আমাদের কোষ মোট ক্ষতির চেয়ে অনেকগুণ বেশি গতিতে বাড়তে থাকে। বার্ধক্য আমাদের জীবনজুড়ে ঘটে, একেবারে শুরু থেকেই।

বয়স সংক্রান্ত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের ডিএনএ এবং শরীর যে কোনও ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরির পর, সেটি সংশোধনের জন্য প্রচুর প্রক্রিয়াও তৈরি করেছে। এই ধরনের সমস্যাগুলো সংশোধনের উপায় ছাড়া, আমরা যতদিন বাঁচি ততদিন বাঁচতাম না। তবুও, সময়ের সাথে সাথে, কোষের ক্ষতির পরিমাণ আমাদের শরীর মেরামত করার ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে।

দেহটিকে এমন একটি শহরের মতো মনে করুন, যেখানে প্রচুর সিস্টেম রয়েছে যা একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ ব্যর্থ হলে, আমরা মারা যাই। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমাদের পেশীগুলো এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে আমাদের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, তবে এটি আমাদের অঙ্গগুলোর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পুষ্টিধারণকারী রক্তকে পাম্প করতে পারে না এবং আমরা মারা যাই। যখন আমরা বলি কেউ মারা গেছে, তখন আমরা বলতে চাই একজন ব্যক্তি হিসেবে তাদের মৃত্যু। প্রকৃতপক্ষে, যখন আমরা মারা যাই, আমাদের বেশিরভাগ অঙ্গগুলোই হয়তো জীবিত থাকে। এ কারণে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন বেঁচে থাকাদের দান করা যেতে পারে ।

সিএনএন: মানুষের আয়ুষ্কালের কি একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে?

রামকৃষ্ণন: পোকামাকড় থেকে শুরু করে তিমি, হাঙ্গর, এবং দৈত্যাকার কাছিম পর্যন্ত সমস্ত জীবের নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আমরা দেখতে পাই। সেটি হতে পারে কয়েক মুহূর্ত, মিনিট, বছর বা কয়েক শ বছর। একজন সাধারণ মানুষ এটি মনে করতেই পারেন যে, জীবনের সৃষ্টি হয়েছে নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল পার করার পরে মরে যাবে বলে এবং এর পুরোটাই পূর্বনির্ধারিত। কিন্তু জীববিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন না যে, একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু যেমন শিশু তৈরির জন্য প্রোগ্রাম করা ঠিক একইভাবে মানুষের জিনে বার্ধক্য ও মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত বা প্রোগ্রাম করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বরং বিবর্তনের ধারা সম্পদ বরাদ্দের ভিত্তিতে সমস্ত প্রাণীর আয়ুষ্কাল নিয়ে একটি সমীকরণ দাঁড় করিয়েছে। যেমন- দীর্ঘকায় প্রাণীরা বেশিদিন বাঁচে। আর ছোট প্রাণী হলে কারও শিকারে পরিণত হওয়া, অনাহারে বা বন্যায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর সেক্ষেত্রে এইসব প্রাণীদের আরও বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিবর্তন প্রক্রিয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কেননা, এদের আয়ুষ্কাল বাড়াতে সীমিত সম্পদের যে অপচয়টুকু হবে, তা অপচয় করার কোনও অর্থ নেই। এর পরিবর্তে বিবর্তন বেছে নেয় এমন প্রক্রিয়া, যাতে কোনও প্রাণী দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে কম সময়ের মধ্যে পরিপক্কতা অর্জন করে পুনরুৎপাদনে জড়াবে এবং তাদের জিন  প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে পারবে।  

একটি বড় প্রাণীর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে তার যথার্থ সঙ্গী পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আর এ সুযোগের মধ্য দিয়ে এই দুই দম্পতি দীর্ঘ জীবনে সন্তান-সন্ততি নিতে পারে। আয়ুষ্কাল পুরোটাই হচ্ছে বিবর্তনমূলক সেই সর্বোচ্চ সুযোগ, যা আপনার জিনকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত করতে সহযোগিতা করে। এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যাপারটি মানুষকে সর্বোচ্চ ১২০ বছর বাঁচতে দেয়।

কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা জীববিজ্ঞান পরিবর্তন করতে পারি না এবং বার্ধক্যের এই প্রক্রিয়াগুলোর গতি কমিয়ে দিতে পারি না। আমাদের জীবনকে দীর্ঘায়িতও করা সম্ভব। অনেক দক্ষ ও আয়ুবিজ্ঞানীদের মতো, আমিও বিশ্বাস করি যে এটা সম্ভব। যদিও এই ধরনের হস্তক্ষেপ কতটা কার্যকর ও বাস্তবসম্মত হবে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের আশাবাদ নিয়ে আমি কোনও কথা বলতে চাই না।

সিএনএন: এখন পর্যন্ত কে সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে আছেন বা ছিলেন?

রামকৃষ্ণান: আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য রেকর্ডের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বয়সী ব্যক্তি যিনি বেঁচেছিলেন, তিনি একজন ফরাসী নারী। ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। জীবনের শেষ পাঁচ বছর বাদে তিনি বাকি পুরো জীবন সিগারেট খেয়েছেন এবং প্রতি সপ্তাহে দুই পাউন্ডেরও বেশি চকোলেট খেতেন। কিন্তু আমি দীর্ঘায়ুর জন্য সম্ভবত চকলেট খাওয়া ছাড়া তার অন্য পথ অনুসরণের সুপারিশ করব না।

বিজ্ঞানী ভেঙ্কাটারামান রামকৃষ্ণান

সিএনএন: বয়সের ঘড়ি কি কখনো পেছন দিকে চলতে পারে?

রামকৃষ্ণন: বয়সে ঘড়িটি প্রতি প্রজন্মেই পেছন দিকে চলতে পারে। যেমন- একজন শিশু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের গর্ভে ৪০ বছর বয়সে এলো। আরেকটি শিশু একজন ২০ বছর বয়সী মায়ের পেটে হলো। তাদের দুই শিশুর মায়ের বয়সের পার্থক্য ২০ বছর। কিন্তু দুইটি শিশুরই কিন্তু শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করতে হচ্ছে। একজন আরেকজনের চেয়ে কিন্তু ২০ বছরের বড় নয় তারা। সুতরাং, কিছু ক্ষেত্রে বয়সের ঘড়ি বিপরীত হতে পারে।

আবার ক্লোনিং এর কথাও বলা যেতে পারে।

যদিও ক্লোনিং করে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত ভেড়া ডলি অসুস্থই জন্মেছিল এবং তার স্বাভাবিক বয়সের অর্ধেক সময়ও পার করতে পারেনি, মারা গিয়েছিল- তবে অন্যান্য ক্লোন ভেড়াগুলো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে শুরু করেছে। এর দ্বারা এটুকু বোঝা যায় যে, বয়সের ঘড়ি বেশ বিস্তৃতভাবেই পেছনের দিকে হাঁটানোও সম্ভব। ইতিমধ্যে বয়স্ক কোষগুলোকে আবার ভ্রূণাবস্থার মতো করা সম্ভব হয়েছে। তবু আমি বলবো, বাস্তবের কিছু অসুবিধা ক্লোনিং প্রক্রিয়াকে খুব অদক্ষ করে তোলে। ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক কোষে খুব বেশি ক্ষতি হয়, ফলে একেকটি একক প্রাণীর বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

ইঁদুরের ওপর কোষ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা গিয়েছে রিপ্রোগ্রামিং করার মধ্য দিয়ে ইঁদুরের কোষ আগের মতো নতুন অবস্থায় ফিরে যেতে পারে, আংশিকভাবে, নতুন টিস্যু পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা ফিরে পায়। কোষগুলোকে আগের অবস্থায় রূপান্তর করে, বিজ্ঞানীরা আরও ভালো রক্তের এবং উন্নত পশম, ত্বক এবং পেশীর ইঁদুরে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ক্ষেত্রে গবেষণার সব ধরনের সফলতা সত্ত্বেও, আমি নিশ্চিত নই যে এটি মানুষের ক্ষেত্রে ঠিক কতোটা কাজে দেবে।  

সিএনএন: আপনার বাবা কিছুদিন আগে ৯৮ বছরে পা দিয়েছেন। তার সুস্বাস্থ্য এবং শারীরিক সক্ষমতা আপনার জীবনে কী প্রভাব ফেলবে? বার্ধক্য এবং দীর্ঘায়ু কতটা জেনেটিক্স দ্বারা প্রভাবিত হয়?

রামকৃষ্ণান: বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের বয়সের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে, কিন্তু তা নিখুঁত নয়। ২,৭০০ জন ডেনিশ যমজ সন্তানের ওপর করা একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে উত্তরাধিকার বা আমাদের দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনায় জিন কেবল প্রায় ২৫ শতাংশের মতো ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও বিজ্ঞানীরা শুধু একটি জিনে মিউটেশন একটি নির্দিষ্ট ধরনের কৃমির জীবনকালকে দ্বিগুণ করেছে। স্পষ্টতই আয়ুষ্কাল বাড়াতে জিনের ভূমিকা রয়েছে, কিন্তু সেটিকে বাস্তবে রূপদান এবং এর প্রভাব বেশ জটিল।

সিএনএন: অ্যান্টি-এজিং বা বয়স ঠেকানোর গবেষণা সম্পর্কে ক্যান্সার বিজ্ঞান কী বলে?

রামকৃষ্ণান: ক্যান্সার এবং বার্ধক্যের মধ্যে সম্পর্ক জটিল। একই জিন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা যখন ছোট থাকি তখন আমাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু বয়স হলে ডিমেনশিয়া এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়, কারণ আমাদের ডিএনএ এবং জিনোমে ত্রুটিগুলো জমা হতে থাকে, যা ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের অনেক কোষীয় মেরামত সিস্টেম- যা জীবনের প্রথম দিকে ক্যান্সার এড়াতে ডিজাইন করা হয়েছে বলে মনে হয়, পরবর্তীতে সেটি বার্ধক্যের কারণ হয়।

উদাহরণস্বরূপ, বিভাজিত হতে থাকা কোষগুলোতে ক্রোমোজোমগুলো ভুলভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যেটি ক্যান্সারে রূপ নেয়। এখন ক্যান্সার ঠেকাতে তাদের এই সম্মিলন রোধ করা জরুরী। সেক্ষেত্রে একটি কোষ হয় নিজেকে হত্যা করবে বা সেন্সেসেন্স (বা বার্ধক্য) নামক একটি অবস্থায় প্রবেশ করবে, যেখানে এটি আর বিভক্ত হতে পারে না। মানুষের মতো একটি জীবের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ কোষ এভাবে ধ্বংস হয়ে গেলেও বাকি কোষগুলো আমাদের রক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিভাজিত হতে না পারা ‘সেনসেন্ট’ কোষ গঠনই আমাদের বয়স বাড়ার অন্যতম কারণ।

সিএনএন: ‘আমরা কেন মারা যাই’- আপনার এ সংক্রান্ত গবেষণা কি আপনার নিজের জীবনযাপন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেছে?

রামকৃষ্ণান: মজার বিষয় হলো, আমাদের দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনযাপনে প্রমাণ-ভিত্তিক ও গবেষণালব্ধ যে সুপারিশগুলো উঠে এসেছে, সেসবের পুরোটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসা সাধারণ জ্ঞানের মতোই। আমাদের দাদী-নানীরাই বলতেন- পেটুক না হতে, ব্যায়াম কতে। দুঃশ্চিন্তা বা স্ট্রেস এড়িয়ে চলার কথা বলেছেন তারা- যা হরমোনের প্রভাব তৈরি করে আমাদের বিপাককে পরিবর্তন করে এবং বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করতে পারে। যথেষ্ট ঘুমের পরামর্শও দিয়েছেন তারা।  

বার্ধক্যের ওপর গবেষণা আমাদের এইসব পরামর্শের সঙ্গে জৈবিক সংযোগের ব্যাপারটি বুঝতে শিখিয়েছে। পরিমিত পরিমাণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া স্থূলতা জনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে পারে। ব্যায়াম আমাদের মাইটোকন্ড্রিয়া— যা আমাদের কোষের ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে শক্তি দেয়, তাকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। ঘুম আমাদের শরীরের মলিকিউলার স্তরে মেরামতে সাহায্য করে। শরীর নিয়ে শেখা এই প্রাচীন, প্রস্তর-কঠিন পরামর্শগুলো আমাদেরকে অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যেগুলো দীর্ঘ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।

ব্যক্তিগতভাবে, আমি প্রায়ই বলি যে আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ চলে গিয়েছে, কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে, আমি এখনও অনুভব করি যে আমি বেঁচে আছি এবং অবদান রাখার মতো কিছু আছে।

সিএনএন: বয়সকে ধোঁকা দেওয়া এবং মৃত্যুকে আরও কিছুকাল পিছিয়ে দেওয়ার সামাজিক বৈষম্যগত মূল্য কী পরিমাণ গুণতে হয়?

রামকৃষ্ণান: ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ১০ শতাংশ আয়কারীরা, সবচেয়ে নিচের ১০ শতাংশ আয়কারীর চেয়ে এক দশকেরও বেশি সময় বাড়তি বেঁচে থাকে। আপনি যদি এদের মধ্যে স্বাস্থ্যকরভাবে বেঁচে থাকার বছরের তুলনা করেন, তাহলে বৈষম্য আরও প্রকটাকারে ধরা পড়বে। দরিদ্র মানুষ কম বাঁচছে, কম স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছে।

অনেক ধনী ব্যক্তি বার্ধক্য রোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আশায় গবেষণায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালছেন। এই প্রচেষ্টাগুলো সফল হলে, খুব ধনী ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে উপকৃত হবেন, তারপরে খুব মোটা অংকের স্বাস্থ্যবীমা গ্রহিতারা উপকার পাবেন এবং আরও অনেকেই কিছুটা সুফল পাবেন। ধনী দেশগুলো সম্ভবত দরিদ্র দেশগুলোর আগে সেই উন্নত চিকিৎসার সুযোগটা পাবে। সুতরাং বয়স ঠেকানোর চিকিৎসা আবিষ্কৃত হলে, দেশের ভেতরে এবং বিশ্বব্যাপি- দুইক্ষেত্রে অসমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েই যায়।

সিএনএন: অন্বেষণ ও গবেষণা কি বার্ধক্য এবং মৃত্যু সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি পরিবর্তন করেছে?

রামকৃষ্ণান: আমাদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ হতে বা এই জীবন ছেড়ে যেতে চাই না। উৎসব চলার মধ্যে সেটি ছেড়ে কে চলে যেতে যায়! আমাদের শরীরের ভেতরে কোষগুলো যেমন তৈরি হয়, তেমনি সব সময় মারাও যাচ্ছে, আমরা বেঁচে থাকি। একইভাবে, পৃথিবীতে জীবন চলতে থাকবে, যেমন মানুষ আসে এবং যায়। কিছু স্তরে, আমাদের মেনে নিতে হবে যে এটি জগতেরই পরিকল্পনার অংশ মাত্র।

আমি মনে করি অমরত্বের এই অনুসন্ধান একটি মরীচিকা। একশো পঞ্চাশ বছর আগে, আপনি প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করতে পারেন। আজ, আয়ু প্রায় ৮০। লেখক স্টিভেন জনসন বলেছেন, প্রায় পুরো অতিরিক্ত জীবন যোগ করার মতো। কিন্তু আমরা এখনও মৃত্যু নিয়ে আচ্ছন্ন। আমি মনে করি যদি আমরা ১৫০ বছর বেঁচে থাকতাম, তাহলে আমরা কেন ২০০ বা ৩০০ বছর পর্যন্ত বাঁচছি না, সেটি নিয়ে বিচলিত হতাম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত