Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

নারী কি বুড়িয়ে যায় গর্ভধারণে

pregnancy-250424

গর্ভধারণ করা নারীদের শরীরে কি বাকিদের তুলনায় বয়সের ছাপ জলদি দেখা যায়?   

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমে পড়েন একদল গবেষক। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন ছেপেছে প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।  

গবেষকরা বলছেন, যারা কখনও সন্তান নেননি তাদের তুলনায় গর্ভধারণ করা নারীরা একটু তাড়াতাড়িই বুড়িয়ে যান।

আর একবারের বেশি গর্ভধারণ করলে শরীরে বয়স বাড়ার এই প্রক্রিয়া আরও বেগবান হয়।

মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলতের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এজিং সেন্টারের সহযোগী গবেষক ক্যালেন রিয়ান হলেন এই গবেষণার প্রধান গবেষক।

তিনি বলেন, “গর্ভধারণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকে শরীরে; গবেষণা করতে গিয়ে আমরা এসব জেনেছি। এরমধ্যে সব পরিবর্তন খারাপ না হলেও, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতে বিশেষ কিছু রোগের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে; যা আবার বাড়াতে পারে মৃত্যুহারও।”  

ফিলিপিন্সের এক হাজার ৭৩৫ জনের উপর এই জরিপ করা হয় ২০০৫ সালে; যাদের বয়সসীমা ছিল ২০ থেকে ২২ বছর। এদের সবার রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছিল।

গবেষণায় অংশ নেওয়াদের প্রজনন, যৌনচর্চা এবং গর্ভধারণের তথ্যও নেওয়া হয়। নারী-পুরুষের বয়সে প্রভাব ফেলে বলে আর্থসামাজিক অবস্থা এবং দূষণের অনুঘটকও বিবেচনা করা হয়েছে এই গবেষণায়।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে নারী অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে যেসব উপাত্ত পাওয়া গেছে সেসবের সঙ্গে এই গবেষণার তথ্যও তুলনা করে দেখা হয়।  

সংগ্রহ করা রক্তের নমুনা থেকে বয়স, ডিএনএ রূপান্তর অর্থ্যাৎ এপিজেনেটিক রূপান্তরে কাজ করা  জৈব নির্দেশক পরীক্ষা করে দেখা হয়।

পরিণত হতে হতে কোষ সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় জিন শনাক্ত করতে পারা অণুগুলোকে একজোট করে।  এখান থেকে কোষের বয়স নিয়ে বিষদ ধারণা করা যায়।  

আয়ুর পূর্বাভাস দেওয়া এপিজেনেটিক ঘড়ি বলে দিতে পারে, অবসাদ এবং মানসিক ও শারীরিক কারণে কোষের উপর দিয়ে কতটা ঝড় বয়ে যায়। কারণ এসব প্রভাব কোষের আসল বয়স কম বা বেশি করে তুলতে পারে।

গবেষণা যা যা বলছে

  • গর্ভধারণ করা নারীর শরীরে বাকি নারীর তুলনায় বয়সের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে
  • যারা কখনও সন্তান ধারণ করেননি তাদের তুলনায় গর্ভধারণ করা নারীর প্রতি বছর  অন্তত তিন শতাংশ বয়স বাড়ে; অর্থাৎ এক বছরের সঙ্গে আরও চার মাস বয়স যোগ হয়
  • কম সন্তান নেওয়াদের চেয়ে বারবার সন্তান নেওয়া নারীরা আরও পাঁচ মাস যোগ করেন বয়সে; অর্থ্যাৎ প্রতিবার সন্তান নেওয়ার কারণে নারীর বয়স বাড়ছে আরও প্রায় দুই শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

এই গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ ইন্ডিয়া টুডে কথা বলেছিল চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।

ভারতে গুরুগ্রামের ক্লাউডনাইন গ্রুপ অব হসপিটালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের পরিচালক চিকিৎসক চেতনা জৈন আগে বয়স কাকে বলে তা বোঝার উপর গুরুত্ব দেন।

তিনি বলেন, “বয়স হচ্ছে মানে কোষের কার্যকারিতা এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতে ক্রমশ ভাটা পড়ছে। এতে করে অসুখের মাত্রা বাড়ে এবং স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। জিন, জীবন যাপন এবং পরিবেশগত কারণ প্রত্যেকের বয়সের গতি নির্ধারণ করে।”

“২০১৯ সালের  সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ফল বলছিল, গর্ভধারণের কারণে বিশেষ করে টেলোমেরেস ও বাকি কোষের বয়স বাড়তে থাকে। টেলোমেরেসের শেষ প্রান্ত যত ছোট হতে থাকবে কোষে ততই বার্ধক্য দেখা দেবে। এর সঙ্গে অসুখেরও যোগসাজশ রয়েছে।”

অবশ্য যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আরও গবেষণা করে দেখা দরকার বলে মনে করছেন দিল্লির ম্যাক্স স্মার্ট সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ পরিচালক অনুরাধা কাপুর।

“কতটা বয়স বাড়তে পারে তা এই গবেষণা থেকে পুরোপুরি স্পষ্ট হচ্ছে না। গবেষণার ফল বলছে চার মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে। যদিও গর্ভধারণ করেনি এমন কারো থেকে সন্তান নেওয়া নারী আরও বেশি বুড়িয়ে যায়।”

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চেতনা জৈন বলেন,  “ভ্রুণের বেড়ে ওঠায় পুষ্টি জোগাতে গর্ভকালে নারীর শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে। হরমোনের মাত্রা, খিদে বেড়ে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক রকম পরিবর্তন দেখা দেয়।

“এসব বদল স্বাস্থ্যসম্মত গর্ভকালের জন্য জরুরিও। তবে এর কারণে কোষ ও শরীরের বয়সও বাড়তে থাকে।”

এই বুড়িয়ে যাওয়া কি ফেরানো যায়?

প্রজনন সক্ষমতা মানব প্রজাতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। গর্ভধারণের কারণে শরীরে সাময়িক কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এসব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয়ে থাকে না। আবার এসব প্রভাব ঝেরে ফেলে আগের মতো হওয়া যাবে না, তাও নয়।    

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জৈনের পরামর্শ হলো, “এই গবেষণা বয়স ঘড়ি পেছনে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখায়নি। অথচ বয়সের ঘড়িকে ধীরে চালানোর উপায় খুঁজতে অনেক গবেষণাই চলছে। জীবন যাপন, খাদ্যাভ্যাস এবং জরুরি ওষুধ সেবন করে বয়সের ঘড়িকে সুস্থ্য ভাবে চালু রাখা যায়।”

ফলাফল কী দাঁড়ালো তবে?

মানব ইতিহাসের গোড়া থেকেই নারী সন্তান জন্ম দিচ্ছে; একেবারে আদম-হাওয়ার যুগ থেকে। গর্ভকালে প্রত্যেক নারীর নিজের মতো অভিজ্ঞতা থাকে। কারও জন্য এই সময় খুব সহজ ভাবে পার হয়ে যায়। কারও আরও মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে রীতিমতো যুঝতে হয়।

এই গবেষণায় উঠে আসা প্রসঙ্গ বিবেচনায় নেওয়া মতো হলেও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুসারে,  এখানে অনেক জরুরি প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা রয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত