Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করল তুরস্ক

গাজায় যুদ্ধ শুরুর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি : বিবিসি
গাজায় যুদ্ধ শুরুর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি : বিবিসি
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। ফিলিস্তিনের গাজায় ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের’ প্রেক্ষাপটে তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই ঘোষণা এসেছে।

তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ‘বাধাহীনভাবে ও যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহের’ অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে তুরস্কের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত থাকবে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে গত বছর প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়।

তুরস্কের এমন পদক্ষেপের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরশাসকের’ মতো আচরণের অভিযোগ তুলেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎয বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ‘তুরস্কের জনগণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে অসম্মান করেছেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সমঝোতাকে উপেক্ষা করেছেন’।

তিনি আরও বলেন, তিনি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্যের বিকল্প খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন যে যাতে স্থানীয় উৎপাদন এবং অন্য দেশ থেকে আমদানিতে জোর দেয়া হবে।

গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের জন্য চলতি সপ্তাহে ইরেয ক্রসিং পুনরায় খুলে দেয় ইসরায়েল। ছবি : বিবিসি

এক বিবৃতিতে তুরস্ক জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করার এই সিদ্ধান্ত সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “তুরস্ক কঠোরভাবে নতুন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না ইসরায়েল সরকার গাজায় বাধাহীনভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢোকার অনুমোদন দেয়।”

প্রথম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ১৯৪৯ সালে তুরস্ক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। তবে বিগত কয়েক দশকে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির দিকেই গেছে।

ইসরায়েলের অবরোধ না মেনে ২০১০ সালে তুরস্কের মালিকানাধীন একটি জাহাজ গাজায় ভেড়ার চেষ্টা করলে ইসরায়েলি কমান্ডোদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ ফিলিস্তিনপন্থী তুর্কি অধিকারকর্মী নিহত হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সঙ্গে সে সময় কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করেছিল তুরস্ক।

এরপর ২০১৬ সালে অবশ্য দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপন হয়। কিন্তু এর দুই বছরের মাথায় গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ দুটি একে অন্যের শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে তিনি মন্তব্য করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যে সামরিক অভিযান চালিয়েছেন তা ‘কোনও অংশে হিটলার যা করেছিল তার চেয়ে কম নয়’।

গাজা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পিয়ার নির্মাণ করেছে। ছবি : বিবিসি

জবাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “এরদোয়ান, যিনি কুর্দিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত করেছেন এবং যিনি তার শাসনের বিরোধিতা করায় সাংবাদিক বন্দির ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড করেছেন, তিনিই হলেন শেষ ব্যক্তি যিনি আমাদের নৈতিকতা শেখাচ্ছেন।”

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য গাজা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী যে পিয়ার নির্মাণ করেছে তা কয়েকদিনের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে।

অবশ্য জাতিসংঘ বলেন, সামুদ্রিক করিডোর কখনও স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না। আর সড়কপথ হলো একমাত্র উপায় যেখানে একসঙ্গে অনেক ত্রাণ পরিবহন করা যায়।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষাপটে গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের জন্য চলতি সপ্তাহে ইরেয ক্রসিং পুনরায় খুলে দেয় ইসরায়েল।

তবে জর্ডান বলছে, ওই ক্রসিং পার হওয়ার সময় তাদের কিছু ত্রাণবাহী লরি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার শিকার হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, গাজার মানবিক বিপর্যয় একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে।

গাজায় খাবার ও পানির জন্য হাহাকার চলছে। ছবি : বিবিসি

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভলকার তুর্ক বিবিসিকে বলেন, এটা এখন ‘বিশ্বাসযোগ্য’ যে ইসরায়েল ক্ষুধাকে গাজা যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

তবে ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি উল্টো গাজায় যাদের প্রয়োজন তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে তাতে এ পর্যন্ত মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর দিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এছাড়া ইসরায়েল থেকে আরও ২৫৩ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা।

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য সবশেষ আসা প্রস্তাবের বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীরা এখন হামাসের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, যেখানে শর্ত হিসেবে ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি কিছু বন্দির মুক্তির কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত