Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

হাসিয়ে-কাঁদিয়ে চলে গেলেন ‘রুমি ভাই’

তিন যুগ ধরে অভিনয় জগতে কাজ করেছেন ‘রুমি ভাই’
তিন যুগ ধরে অভিনয় জগতে কাজ করেছেন ‘রুমি ভাই’

শরীরে কোলন ক্যানসার বাসা বাঁধলেও তা কিছুদিন আগে জানতে পারেন অভিনয় শিল্পী অলিউল হক রুমি। ভারতের চেন্নাইতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে চিকিৎসা চলছিল বেসরকারি হাসপাতালে। তারপর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জীবনের ইতি টানলেন নাটক ও সিনেমার এই মুখ।

ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে সোমবার ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান।

অভিনয় জগতের একজন ‘রুমি ভাই’ তিন যুগ আগে থিয়েটার বেইলি রোডের ‘এখনো ক্রীতদাস’ নাটক দিয়ে শুরু করেছিলেন। ওই বছর অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে ছোট পর্দাতেও অভিষেক ঘটে তার। বিটিভিতে ফখরুল আবেদীন দুলাল প্রযোজিত এবং নাট্যকার ইমদাদুল হক মিলনের ‘কোন কাননের ফুল’ থেকে আজকে একাধিক চ্যানেলের নাটকের মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।

২০০৯ সালে ‘দরিয়া পাড়ের দৌলতী’ চলচ্চিত্র দিয়ে বড় পর্দায় আগমন ঘটে অলিউল হক রুমির।  

দীর্ঘ দিন ধরে বহু সিনেমা-নাটকে অভিনয় করেও রুমি মনে করতেন,  ‘দর্শকের ভালোবাসা, দর্শকের এপ্রিসিয়েশন অনেক অনেক বড় অ্যাওয়ার্ড’।

শুটিংয়ের ফাঁকে একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যে কোনো অ্যাওয়ার্ড প্যানেলের বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রভাবিত হবেন না। কারণ আপনারা  একটা জায়গা থেকে এসেছেন; না হলে আপনারা বিচারক হতে পারতেন না।”

ওই আলাপে রুমির জীবন দর্শন নিয়েও জানা যায়।

তিনি দর্শক এবং সবার উদ্দেশে বলেন, “প্রতিশোধ নিয়েন না। প্রতিশোধ না নিয়ে নীরবে প্রস্থান করাটাই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ।

“প্রতিশোধ নিলে সব চুকেবুকে যায়। ল্যাঠা চুকে যায়। আর যদি প্রতিশোধ না নিয়ে আপনি নীরবে প্রস্থান করেন তবে আপনার যে দীর্ঘশ্বাস তা প্রকৃতির কাছে জমা থেকে যায়। প্রকৃতিই এক সময় প্রতিশোধটা নিয়ে নেয়।”

বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক এবং মা হামিদা হকের সন্তান অলিউল হক রুমি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট হলেন রুমি। প্রয়াত রুমি পরিবারে রেখে গেছেন স্ত্রী এবং দুই সন্তান।

বরিশালের বরগুনা জেলায় জন্ম রুমির। সেই সুবাদে নাটকে তাকে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলতে দেখা গেছে বহু বার।

রুমি খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আবার অভিনয় দিয়ে দর্শক হাসিয়েছেন অসংখ্য নাটকে; যে কারণে দর্শকের কাছে তিনি কমেডি অভিনেতাও।    

তার অভিনীত নাটকের ভিডিও পোস্ট করে আরটিভি ফেইসবুক পাতায় লিখেছে, “কমেডি অভিনয়ে অনবদ্য ছিলেন অলিউল হক রুমি।”

দীপ্ত টিভিতে ধারাবাহিক নাটক  বকুলপুর সিজন-২ চলছে। এই নাটকেও ছিলেন অলিউল হক রুমি।  এই নাটকেই তিনি ‘জীবনের শেষ অভিনয়’ করেছেন; ফেইসবুকে অফিসিয়াল পেইজে এ কথা বলছে দীপ্ত টিভি।

নাটক পাড়ার লোক রুমি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদনা সহকারী পদেও কাজ করেছেন।

রুমিকে হারিয়ে সারাদিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকারা ফেইসবুকে শোক জানিয়ে চলেছেন।

‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ গানটির গায়ক লুৎফর হাসান নিজের টাইমলাইনে ‘রুমি ভাইকে’ নিয়ে লিখেছেন, “অলিউল হক রুমি অভিনীত সবচেয়ে প্রিয় নাটক ‘যমজ’। তিনি সেই ‘মাস্টের’। মোশাররফ করিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে কী অভিনয় তার!

“অভিনয়টা করতেন চাকুরির অবসরে। চাকুরি করতেন দৈনিক ইত্তেফাকে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রুমি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হতো।”

“তিনি অসুস্থ হবার আগে শেষ দেখা। শেষ কথাটা হৃদয়ে গেঁথে আছে। ‘ভাই, দুপুর ভালো আছে?’ এটুকুই। সম্ভবত বকেয়া বেতন তুলতে এসেছিলেন, সেরকম একটা মিটিং করছিলেন তার অফিসের সামনে। মানুষটা আজ চলে গেলেন।”

আনোয়ারা বেগমের প্রযোজনায় এবং রোকেয়া প্রাচীর নির্মাণে ২০১৫ এসেছিল নাটক সেলাই পরিবার। এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন অলিউল হক রুমি।

সেকথা  মনে করে অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী নিজের ফেইসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, “রুমি ভাই বিদায়। আমার পরিচালনায় প্রথম ধারাবাহিক সেলাই পরিবার নাটকের সময়টা মনে হচ্ছে খুব।”

কয়েক মাস আগের ছবিতে অলিউল হক রুমি। ছবি: নাট্যশিল্পী তানভীন সুইটির ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া

মডেল ও নাট্যশিল্পী তানভীন সুইটি রুমি ভাইয়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে শোকবার্তায় লিখেছেন,  “ছবিটা পাঁচ-ছয় মাস আগের তোলা। আমি তাকে দেখলেই বড় ভাই বলতাম, তিনি আমাদের থিয়েটার দলের বড় ভাই ছিলেন।

“আমি মিডিয়ায় কাজ শুরু করার সময় থেকেই চিনতাম, ভীষণ ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন তিনি, আমি কখনো তাকে রাগ করতে দেখি নাই। সবাইকে খুব নিয়ে আনন্দে থাকতে পছন্দ করতেন।”

মারা যাওয়ার আগে শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল অভিনেতা রুমির। সেসময় তার কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছিল সংযোগ কানেক্টিং পিপল।

এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ জামাল ওই সময়ে রুমির ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “অভিনেতা রুমি ভাই।  মৃত্যুর কিছুদিন আগে সংযোগ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে আসা হলো উনার বাসায়। শুকিয়ে গিয়েছিলেন অনেকখানি। কী পরিমাণ অসহায় হয়ে যায় মানুষ যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন!”

মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে অসুস্থ অলিউল হক রুমি। ছবি: আহমেদ জাভেদ জামালের ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া

অসুস্থতার কথা জানতে জানতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল অভিনেতা রুমির। ক্যানসার ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত হাসি মুখেই তাকে কাজ করতে দেখেছেন সবাই।

এ কথা সকাল সন্ধ্যাকে জানালেন অভিনেতা এবং টেলিভিশন নাটকের সবচেয়ে বড় সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম।

তিনি বলেন, “উনি আসলে বুঝতে পারেননি যে এমন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। উনি খুবই হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। শুটিংয়ে উনি কখনও গম্ভীর থাকতেন না। যে কারণে উনার কলিগরা উনাকে খুব পছন্দ করতো। সহশিল্পীরা আমরা সবাই তাকে খুব পছন্দ করতাম।”

“যখন ইন্ডিয়াতে চেকআপ করানো হলো তখন বুঝতে পারলেন অসুখটা কয়েক ধাপ অতিক্রম করে গেছে। ফলে খুব দ্রুত শরীরে অবনতি ঘটতে থাকে। এখানে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এক মাসের মতো। শেষ পর্যন্ত তো আজ সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।”

বরগুনাতে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রুমিকে।

সকাল সন্ধ্যাকে নাসিম বলেন, “আমাদের খুব ইচ্ছে ছিল সবাই এক সঙ্গে মিলে তাকে বিদায় জানাবো। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে এবং আবহাওয়ার কারণে … গরম … সবকিছু মিলে চিকিৎসক এবং তার পরিবারের সিদ্ধান্ত তাকে দ্রুত তার নিজ গ্রামে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত