Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

আইনেও বাধা পড়ে কিডনি রোগীর জীবন

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।
Picture of জাকিয়া আহমেদ

জাকিয়া আহমেদ

কিডনি যখন বিকল হয়ে পড়ে, তখন সমাধান হয়ে ওঠে এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের। কিন্তু বাংলাদেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের জটিলতায় অনেকে প্রয়োজনীয় অঙ্গটি নিতে পারেন না।

আইনের বেড়াজালে কিডনি না পেয়ে মারা যেতে হয় কাউকে কাউকে। তাদেরই একজন সামিরা (ছদ্মনাম)।

২০২২  সালের অগাস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বিকল কিডনি নিয়ে ভর্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, একমাত্র উপায় কিডনি প্রতিস্থাপন।

কিন্তু কোনওভাবেই পরিবারের কারও সঙ্গে সামিরার টিস্যু মিলছিল না। সামিরার বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে সব কিছু মিললেও কিডনি প্রতিস্থাপন আটকে যায় আইনের কারণে। সে বছরের নভেম্বরে সামিরার মৃত্যু হয়।

তার মা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “আইন কি জীবনের চাইতেও বড়? মানুষের জীবনে কেন আইন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে?”

‘সংকীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ’ এই আইন নিয়ে জীবদ্দশায় সরব ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যার গড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসার জন্য দেশে কিডনি রোগীদের অন্যতম ভরসাস্থল।

তিনি বলতেন, দেশের মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ত্রুটিপূর্ণ ও সংকীর্ণ হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী একজনকে সঙ্গে নিয়ে চলে যায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর কিংবা আমেরিকায়। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকা বিদেশে ব্যয় হয়।

বাংলাদেশে এখন কিডনি জটিলতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখের মতো বলে দুই বছর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল। এই রোগীদের শেষ ধাপ হচ্ছে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন।

প্রাণঘাতী হিসেবে কিডনি রোগের অবস্থান দুই যুগ আগে ২৭ নম্বরে থাকলেও এখন তা সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তা আরও এগিয়ে পঞ্চম স্থান নেবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি মানুষ কিডনি বিকল হয়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর মুখে পড়বে।

কিন্তু আইনের কারণে প্রতিস্থাপন সহজ না হওয়ায় বাংলাদেশে রোগীদের অনেকেই চলে যাচ্ছেন বিদেশে, বেশিরভাগই ভারতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। কিন্তু রোগীরা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এতে যেমন রোগীর খরচ বাড়ে, ভোগান্তি বাড়ে, তেমনি প্রচুর অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। আর এর কারণ বর্তমান আইন।

কী আছে আইনে

কিডনি বাণিজ্য এড়াতে দেশে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে কার কার কিডনি নেওয়া যাবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে।

২২ ধরনের আত্মীয়ের কাছ থেকে কিডনি নিয়ে কোনও রোগীরে শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়। তালিকায় রয়েছেন মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা, নানি, দাদা, দাদি, নাতি, নাতনি এবং আপন চাচাত, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই বা বোন।

এই ২২ জন ছাড়া আর কেউ কাউকে কিডনি দিতে পারবে না।

২০১৫ সালে মেয়েকে কিডনি দেন ফাতেমা জোহরা নামে এক নারী। প্রতিস্থাপনের পরেও মেয়ের উন্নতি না হওয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনটি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করেন।

২০১৯ সালে হাই কোর্ট আইন সংশোধন করে আত্মীয়ের তালিকা বড় করার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালত বলেছিল, আত্মীয় না হয়েও কেউ আবেগের বশবর্তী হয়ে (ইমোশনাল ডোনার) কাউকে কিডনি দিতে চাইলে তা যেন তিনি করতে পারেন।

কিন্তু উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশ পাঁচ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব সেই নির্দেশনা আমলেই নেয়নি। অথচ, তা করলে অনেক মানুষ বেঁচে যেত।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী রাশনা ইমাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা বারবার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তখন তারা করোনার কথা বলেছে। বলেছে, পরে দেখছি।”

এখনও কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আরজি করা যায় বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।

তবে সে পথে এখনই হাঁটতে চাইছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী (সামন্ত লাল সেন) অনেক বেশি মানবিক, তার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব।”

কী বলছেন চিকিৎসকরা

জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের (নিকডু) ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌহিদ বেলাল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ডায়ালাইসিস সারাজীবন বার বার করে যেতে হয় বলে কিডনি প্রতিস্থাপনই রোগীদের জন্য সুবিধাজনক বেশি।

দেশে প্রথম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টেশনে ( মৃত ঘোষিত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপন ) কিডনি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান ও সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান।  
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের ডোনারের তালিকা আরও বড় করতে হবে, তাহলেই অনেক মানুষ বেঁচে যাবে।”

সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের সদস্য সচিব এবং বিএসএমএমইউর সহকারী অধ্যাপক ডা. মোাহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আপন বোনের সঙ্গেও ভাইয়ের টিস্যু যখন মেলে না, তখন ভাইয়ের কিডনি বোনকে দেওয়া যাবে না।

“যাদের পরিবারে ডোনার নেই, তাদের জন্য ‘সেইফ এক্সিট’ ভারতের মতো কিছু দেশ। ফলে আত্মীয় না হয়েও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আত্মীয়ের কাগজপত্র বানিয়ে রোগীরা দেশের বাইরে চলে যায়, যেখানে এসব কিছুই দেখা হয় না।”

ইউরোপ-আমেরিকায় বন্ধুকেও কিডনি দেওয়া যায় জানিয়ে ডা. আশরাফুজ্জামান বলেন, দেশের আইনটি সহজ হলে বাইরে যেমন যেতে হবে না, তেমনি দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যেরও অবসান ঘটবে।

জীবিত মানুষ থেকে কিডনি দিয়েও এখন চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে চিকিৎসকরা এখন জোর দিয়েছেন ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লন্টেশনের দিকে। যে প্রক্রিয়ায় ব্রেইন ডেথ মানুষের কিডনি অন্যের অঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হয়।

ব্রেইন ডেথ কী

মৃত্যুর আগে মানুষের হার্ট বা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়, তা বন্ধ হওয়া মানে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হওয়া, অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হওয়া মানে প্রতিটি অঙ্গ অচল হয়ে যাওয়া। এটাই হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৃত্যুর সহজ সংজ্ঞা।

কিন্তু হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে গেলে এই ধরনের রোগী থেকে কোনও অঙ্গ নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তার সব অঙ্গই তখন অচল। এরই বিকল্প হিসেবে ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘ইউনিফর্ম ডিটারমিনেশন অব ডেথ অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে।

এতে দুই ধরনের মৃত্যুকে প্রতিষ্ঠিত করে। একটা হচ্ছে সার্কুলেটরি ডেথ (হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধজনিত মৃত্যু, অন্যটি নিউরোলজিক্যাল বা ব্রেইন ডেথ (মস্তিষ্কের পুরো কর্মকাণ্ড বন্ধ কিন্তু হৃদযন্ত্র সচল থাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।

“ব্রেইন ডেথ রোগী কোনওদিনই আর জীবিত ফিরবে না, শতভাগ মৃত্যু। আজ পর্যন্ত কোনও ব্রেইন ডেথ রোগীই ফিরে আসেনি,” বলেন ডা. আশরাফুজ্জামান।

ব্রেইন ডেথ আর সার্কুলেটেড ডেথ রোগীর বড় পার্থক্য হলো ব্রেইন ডেথ রোগীর হার্ট সচল রাখা যায় মেকানিক্যাল সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে। তাই রোগীকে ডেথ ঘোষণা করার আগ থেকে হার্ট বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। তখন স্বজনদের অনুমতি নিয়ে তার কিডনি অন্য রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়।

ডা. আশরাফুজ্জামান বলেন, “ভারতে গত ১০ বছর ধরে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লাল্টেশন বেড়েছে। তারা লিভিং ডোনার থেকে সরে এখানে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা তো আরও অনেক আগেই গুরুত্ব দিয়েছে।”

একজন ব্রেইন ডেথ রোগী থেকে আট ধরনের অঙ্গ নিয়ে অন্য মানুষকে বাঁচানো সম্ভব, যেগুলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘লাইফ সেভিং অর্গান’। এর মধ্যে রয়েছে দুটো কিডনি, দুটো ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি যকৃৎ বা লিভার, একটি অগ্নাশয় এবং একটি অন্ত্রনালী, দুটো কর্নিয়া এবং চামড়া।

ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টেশনে কী সুবিধা

চিকিৎসকরা বলছেন, জীবিত ব্যক্তি বা লিভিং ডোনার থেকে যদি একটা কিডনি নেওয়াও হয়, তাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ তার ভবিষ্যতে তো সমস্যা হতে পারে। ব্রেইন ডেথ রোগীর ক্ষেত্রে সেই জটিলতা থাকে না।

চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে কিডনির যে চাহিদা, তার একমাত্র সমাধান ক্যাডাভেরিক অর্গান ডোনেশন।

সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষে মৃত্যু হয়, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ইউরোপে তাদের বেশিরভাগেরই লাইফ সেভিং অর্গান সংগ্রহ করা হয়, চীনেও করা হয়, ভারতেও হয় এখন।

ব্রেইন ডেথ ব্যক্তিদের কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে দিক-নির্দেশনা, তদারকি ও পরামর্শ দেওয়ার কাজ করে ‘ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি’।

দেশে প্রথম ক্যাভাভেরিক অঙ্গ দান করেন সারাহ ইসলাম। তার কিডনি নিয়েই গত বছরের ১৯ জানুয়ারি দুজনের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর বিএসএমএমইউতে গড়ে তোলা হয় সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল।  

চিকিৎসকদের ভয় যেখানে

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের জটিলতার কারণে চিকিৎসকরা আইনি জটিলতায় পড়ার শঙ্কায় থাকেন। ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের ক্ষেত্রেও তাদের শঙ্কা থেকে যায়।

ডা. তৌহিদ বেলাল বলেন, “রোগী তো আইসিইউতে, পরিবারকে অ্যাপ্রোচটা করবে কে? রোগীর আত্মীয়রা আবার বলে বসে যে চিকিৎসা না করিয়ে কিডনি নেওয়ার ‘ধান্ধা’ করছে ডাক্তার।”

এর সঙ্গে মামলার ভয়ও চিকিৎসকদের মধ্যে ঢোকে বলে জানান ডা. আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, “কোনও রোগী পক্ষ চিকিৎসকের নামে মামলা করে দিতে পারে। সেটা কোর্টে হয়ত প্রমাণ হবে। কিন্তু মামলা তো আগে হয়ে যাবে।”

ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “কারণ রোগীকে মৃত ঘোষণার পর তার অর্গান বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আমরা তখন হয় ওষুধ, নয় ভেন্টিলেশন মেশিন অথবা অন্য কোনোভাবে তার সব সচল রাখার চেষ্টা করি। নয়ত তার অর্গান নিয়েও কোনও কাজ হবে না।”

এজন্য ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা থাকবেন, তাদের আলাদা করে আইনি সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করছেন এই চিকিৎসক।

একই আতঙ্কের কথা জানালেন বিএসএমএমইউর সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, “আইনে লেখা রয়েছে, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের ক্ষেত্রে কোনও লেনদেন হবে না। অথচ এমনও দেখেছি, যাকে কিডনি দেওয়া হয়েছে তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। হয়ত সেখানে লেখা হয়েছে দান, কিন্তু আদতে সেটা বিক্রি হয়েছে কিডনির বিনিময়ে।”

কিডনি বেচা-কেনা বন্ধে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে কী করা যাবে আর যাবে না, সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আছে। বলা আছে, প্রত্যয়ন বোর্ড কিডনি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন, দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক, কে কোন পরিস্থিতিতে কিডনি দিতে চাচ্ছে, সম্পর্কের দালিলিক প্রমাণ, দাতা মাদকাসক্ত নন, এসব দেখবে।

চিকিৎসকদের কিডনি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার সুযোগ রয়েছে কি না- প্রশ্নে ডা. আশরাফুজ্জামান বলেন, “রোগী আইসিইউতে থাকা অবস্থা থেকে শুরু করে তার শরীর থেকে কিডনি নিয়ে গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন পর্যন্ত চারটা টিম কাজ করে। চাইলে কি চার টিমের সবাইকে ম্যানেজ করা সম্ভব?”

ধর্মীয় বাধা নেই

অন্যের অঙ্গ নিজের দেহে নেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় কোনও বাধা আছে কি না, তা অনেকে জানতে চান।

গত ৫ মার্চ ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাথেরো, মিরপুর ব্যাপ্টিক চার্চের ফাদার রিভেন্ড মার্টিন অধিকারী, ফাদার লিন্টু ফ্রান্সিস ডি কস্তা, গীতা পাঠক ও প্রশিক্ষক ধীমান দাস, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা।

সেখানে তারা মরণোত্তর অঙ্গদান এবং ‘ব্রেইন ডেথ’ রোগীর অঙ্গদানে ধর্মীয় কোনও বাধা নেই বলে জানান।

তারা এক সুরেই বলেন, প্রতিটি ধর্মেই মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে। মৃত্যুর পর কিংবা চিকিৎসকের ভাষায় মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানের মধ্য দিয়ে যদি অন্য কারও প্রাণ বাঁচে এর চেয়ে পুণ্যের কাজ আর কিছুই হতে পারে না।

ইরান, সৌদি আরব, কুয়েতের মতো মুসলমান প্রধান দেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার কথাও উঠে আসে ওই বৈঠকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত