Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

এমপিদের স্বজন নিয়ে ‘বেকায়দায় নেই’ ইসি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

এবারের উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়া নিয়েই চলছে ব্যাপক আলোচনা; তবে তাতে কোনও সমস্যা বোধ করছে না নির্বাচন কমিশন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটে কেউ যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি আছে ইসির। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশে মোট ৪৯৫ উপজেলা। এগুলোতে কয়েক ধাপে ভোট করছে ইসি। বুধবার প্রথম ধাপে ১৪০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে ২২টি উপজেলায় ইভিএমে হবে ভোটগ্রহণ।

এই উপজেলাগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। সেখানে সাধারণ ছুটি ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান এই তিন পদে ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

বিএনপি বর্জন করায় এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ না নিয়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাতে উপজেলাগুলোতে এই দলের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অনেকের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোটের মাঠ ছাড়তে বলা হলেও প্রথম ধাপে নয়জন এমপির ১৩ জন স্বজন তা উপেক্ষা করে রয়ে গেছেন লড়াইয়ে।

সংসদ সদস্যরা তাদের হয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে; যদিও স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেওয়াও আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এই নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ঠেকাতে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে ইতোমধ্যে চিঠিও দিয়েছেন।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এনিয়ে প্রশ্ন করেন সিইসিকে। জবাবে তিনি বলেন, “আমরা কোনও বেকায়দায় নেই।”

সংসদ সদস্যদের কেউ প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা ইসি করছে বলে জানান তিনি।

“মন্ত্রী-এমপিদের নিবৃত্ত করা হয়েছে, প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু (পদক্ষেপ) নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং সেখানে যেন অনিয়ম না করতে পারে, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।”

বিভিন্ন এলাকায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ইতোমধ্যে এসেছে। এক্ষেত্রে ইসি নিশ্চুপ বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সেবিষয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “সংসদ সদস্য, মন্ত্রী অনেককে নিবৃত্ত করতে পেরেছি। হয়তবা অনেকে এলাকায় আছেন। সরকারের তরফ থেকে যত দূর দেখেছি, দলীয়ভাবে হোক বা সরকারের পক্ষ থেকে হোক-যাতে নির্বাচনটা অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, কেউ যেন প্রভাব বিস্তার না করেন, সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ইসিও ব্যবস্থা নিতে দেরি করছে না দাবি করে তিনি বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে কারও কারও প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয়, সেজন্যে ইসির তরফ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

“প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু অ্যাকশন নিয়েছি। ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয়, এজন্য একজনকে ডাকিয়ে এনে বক্তব্য নিয়েছি, প্রার্থিতা বাতিল করেছি।”

‘কে কোন দলের, দেখছি না’

বিএনপি দলীয়ভাবে ভোটের মাঠে না থাকায় এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মূলত আওয়ামী লীগের নিজেদের লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। নৌকা-ধানের শীষ না থাকায় দলীয় েভাটের আমেজও এবার নেই।

এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কে কোন দল করে, আমরা জানি না। নির্বাচন আয়োজন করা আমাদের কাজ। আমরা দেখছি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। কেউ এল কি কেউ এল না, তা (দেখার বিষয়) নয়।”

সব দলের অংশগ্রহণ না থাকায় এটাকে কেউ কেউ নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বললেও তা মানতে নারাজ সিইসি। প্রার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

“প্রতিটি উপজেলায় অন্তত চারজন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে যাচ্ছি না, প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।”

স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সংঘাত তুলনামূলক বেশি হয় বলে সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়ালের পর্যবেক্ষণ। তার মাথায় রেখেই ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ইসি সচেষ্ট রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

“স্থানীয়ভাবে এসব (সংঘাত) বেশি হয়ে থাকে। এগুলো যেন না হয়, সতর্ক থাকি, যাতে উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষ, সহিংসতা না হয়। ভোটের দিন আমরা সতর্ক থাকব, কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করব। প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক, কতটুকু হয়।”

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

সিইসি জানান, ভোটের জন্য উপজেলাগুলোতে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি জানতে প্রতিদিনই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ইসি কর্মকর্তাদের কথা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “এ নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যাতে নির্বাচনটা অবাধ, নিরপেক্ষ হয়।

“আইন-শৃঙ্খলা সঠিকভাবে তদারকিতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন ভবনে পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। যাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়। সে লক্ষ্যে বিভাগ, জেলা পর্যায়ে কমিশন মতবিনিময়ও করেছে।”

উপজেলাগুলোতে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে এবং পার্বত্য এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২১ জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

উপজেলাগুলোতে এরই মধ্যে বিজিবি সদস্যরা টহলে নেমেছে। প্রথম ধাপে বাহিনীর ৪১৮ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।

উপজেলা ভোট সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, “সংশ্লিষ্টরা নিয়ম-কানুন প্রতিপালন করলে নির্বাচনটা সহজ হবে; তারা যদি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা দুরূহ হবে।

“এবার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থীসহ সবার সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। নির্বাচনটাকে স্বচ্ছ করার চেষ্টা করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সিইসির সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, ফরহাদ আহাম্মদ খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত