Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

বিচ্ছেদের আংটি দিচ্ছে দিন বদলের বার্তা

divorcering-130424

জীবনের উদযাপনের মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে গহনা। কিন্তু ডিভোর্স রিং মানে বিচ্ছেদের আংটিও কি জীবনের অংশ হতে পারে?

হালে বিচ্ছেদের আংটি গড়িয়ে আঙুলে পরে আলাদা হয়ে যাওয়া নিয়ে নিজের ভাবনাকে স্পষ্ট করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে অনেকেই।

২০০৯ সালের বলিউড হিট ‘লাভ আজ কাল’ সিনেমার চোর বাজারি গানটি মনে থাকার কথা অনেকের। গানের পেছনের গল্প হলো, প্রেমের অবসান হলে দুজন তরুণ-তরুণী তা উদযাপনে ব্রেকআপ পার্টি আয়োজন করে। আজ থেকে এক যুগেরও বেশি সময় আগে এসব ভাবা খুব সহজ ছিল না। অথচ আজকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর ডিভোর্স রিং গড়িয়ে নিয়ে জীবনকে উদযাপন করা হচ্ছে।

একাধারে মডেল, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক এমিলি ও’হারা রাতাজকোস্কি আঙুলে বিচ্ছেদের আংটি পরে ইনস্টাগ্রামে ছবি দিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। তখন থেকে ডিভোর্স রিং নিয়ে চলছে আলোচনা।

২০২২ সালে পরিচালক সেবাস্টিয়ান বিয়ার-ম্যাকক্লার্ডের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন রাটাকাউস্কি।

রাটাকাউস্কির বাগদানের আংটিতে দুটি হৃদয় বোঝাতে দুটি পাথর বসানো ছিল। ফ্রেঞ্চ ভাষায় এমন নকশাকে বলে তোয়া-এ-মোয়া অর্থ্যাৎ ‘তুমি এবং আমি’। বিচ্ছেদের পর ওই একটি আংটি ভেঙ্গে দুটো আংটি গড়িয়ে নেন তিনি।

এসব নিয়ে ভোগ ম্যাগাজিনের কাছে এমিলি রাটাকাউস্কি বলেন,  “এই আংটি আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার কথা বলে।

“একজন পুরুষের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে বলেই নারীকে হীরা থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে এমনটা মনে হয় না আমার।”

বিচ্ছেদ যদি হয়েই যায়, তারপর বিয়ের আংটি গহনার বাক্সে ফেলে রাখতে না চাইলে ডিভোর্স রিং গড়িয়ে নেওয়ার কথা ভাবা যেতেই পারে।

রাতাজকোস্কি অবশ্য প্রথম নয়, বিচ্ছেদের আংটি পশ্চিমে সাড়া তুলেছে আরও আগে। নিউ ইয়র্কের অনেক গহনার দোকান ব্রেক আপ এবং ডিভোর্সের গহনা গড়িয়ে দিচ্ছে গত দুই-তিন বছর ধরেই।    

গহনা নিজেকে প্রকাশের অনন্য ভাষা এবং একে স্পর্শ করে নিজের মধ্যে শক্তি অনুভব করা যায়।

বিচ্ছেদের আংটি শুধু জনপ্রিয় গহনা নয়, বরং এই নতুন ধারার মধ্যে দিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তনও উঠে আসছে। বিচ্ছেদ হলে লোকলজ্জার ভয়ে সিঁটিয়ে না থেকে আজকাল খোলাখুলি ভাবে এ নিয়ে কথা হচ্ছে, এমনকি উদযাপনও চলছে।   

ইন্ডিয়া টুডের কাছে মুম্বাইয়ের মনোবিদ অ্যাবসি স্যাম বলেন, “ডিভোর্স নিয়ে মানুষ নতুন ভাবে ভাবতে শিখছে; এসব সত্যি দারুণ।এক সময় বিয়ে বা প্রেমে নিপীড়ন, ভালোবাসার অভাব আর তিক্ততা নিয়েও মানুষ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতো।

”আজকাল এসবে বদল দেখা যাচ্ছে। সামাজিক ট্যাবুতে আটকে গলার কাঁটা হয়ে ওঠা বিবাহিত জীবন থেকে সরে আসা দরকার বলে মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।”

একটা যন্ত্রণাময় সম্পর্ক থেকে মুক্ত হয়ে কেক কেটে অথবা পার্টি করে মানুষ জানান দিচ্ছে মন থেকে জগদ্দল পাথরের ভার নেমে যাওয়ার কথা। এর সঙ্গে নতুন সংযোজন হলো আঙুলে ডিভোর্স রিং পরা; যার অর্থ নিজের প্রতি যত্নশীল থাকা।

স্যাম বলেন, “এসব আসলে সবাইকে বলতে চাইছে, ‘শোনো, আমি আমার নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নেব। আর এভাবেই হবে আমার নতুন সূচনা।’”

বিবাহ বিচ্ছেদ অনেকের কাছেই সাহসী পদক্ষেপ। বিয়ের অনেকখানি জুড়ে থাকে গহনা; যেমন বাগদানের আংটি অথবা হিন্দু বিয়েতে মঙ্গলসূত্র। আর সেই কারণেই বিচ্ছেদ হলেও গহনা জোগাচ্ছে ভেঙে না পড়ার আত্মবিশ্বাস। বিয়ে অর্থ যেমন সম্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, বিচ্ছেদও তেমনি মর্যাদার।

বিচ্ছেদ নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে ফেলবেন এমন প্রত্যাশা রাখেন রাটাকাউস্কি।

তিনি বলেন, ”এই আংটি আমার কাছে বিশেষ প্রতীকি হয়ে উঠেছে। আমার জীবন যে আবার আমারই হলো সেসব কথাই বলতে চাইছে।”

বিচ্ছেদের আংটি পরবেন কোন আঙুলে?

এনা জে সিং একজন পেশাদার গহনা নকশাকারী। যারা বিচ্ছেদের আংটি বানাতে চান তাদের জন্য এনা জে সিং কিছু পরামর্শ রেখেছেন।

বিয়ে বা বাগদানের আংটি নিয়ে প্রথমেই যেতে হবে গহনার দোকানে। গহনার নতুন নকশা এমনভাবে হতে হবে যেন আগের সঙ্গে একেবারেই মিল না থাকে। বাম হাতের বদলে বিচ্ছেদের আংটি ডান হাতের আঙুলে পরা যেতে পারে। বিয়ের আংটি অনামিকায় পরতে হয়; আর বিচ্ছেদের আংটি পরা যেতে পারে মধ্যমায়।

এনা বলেন, “আংটির পাথর দিয়ে গলার লকেটও করা যেতে পারে। বিচ্ছেদের এই লকেটও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সামনে।”

অবশ্য ডিভোর্স রিং মানেই যে আগের আংটি থেকে নতুন গহনা গড়িয়ে নিতে হবে তা নয়।

”বিয়ের আংটি বিক্রি করেও দেওয়া যায়। তারপর একেবারে নতুন গহনা কেনা যেতে পারে নতুন জীবনের নামে।  ভিন্ন আকার সলিটায়ার পাথরও কেনা যেতে পারে।”

গহনার এই নকশাকারী মনে করেন, বিচ্ছেদের পর বিয়ের আংটির আঙুল খালি হয়ে যাওয়ার অনুভূতি থেকেই হয়তো ডিভোর্স রিং বানাতে ঝুঁকছে সবাই।

এক্ষেত্রে হাতে ব্রেসলেটও পরা যেতে পারে। এমন গহনাও নিজের ভেতরের আত্মবিশ্বাসকে চাঙ্গা রাখবে।

ইনডিয়া টুডের প্রতিবেদন বলছে, আসল কথা হলো নিজেকে ভালোবাসা এবং জীবনে থেমে না গিয়ে এগিয়ে চলা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত