Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

একটি বটগাছ বাঁচাতে প্রশাসনের মুখোমুখি

দুপুরে বটগাছটি কাটতে এলে তাতে বাধা দেন স্থানীয়রা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
দুপুরে বটগাছটি কাটতে এলে তাতে বাধা দেন স্থানীয়রা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, রাঙামাটি

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, রাঙামাটি

বৈশাখের বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে বটগাছটির পাতা। ঘন ডাল-পাতা আর নেমে আসা ঝুরির ফাঁক দিয়ে চুইয়ে পড়ছে রোদ। সুবিশাল গাছটি তার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করেছে যতদূর, ততদূরই ছায়া দেয় ক্লান্ত পথচারীকে।

রাঙ্গামাটি শহরের ট্রাইবাল আদাম এলাকায় এই বটগাছটির অবস্থান। তবে কে কবে এই গাছ লাগিয়েছিল, এর বয়সই বা কত, তা জানে না কেউ। এলাকার বর্ষীয়ান নাগরিকরাও বলছেন, ছোটবেলা থেকেই গাছটি দেখে আসছেন তারা। স্থানীয়দের কাছে এটি শতবর্ষী হিসেবেই পরিচিত।   

সেই গাছ এখন কাটতে চায় প্রশাসন। কারণ বটগাছটি যে জমিতে, সেটি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে জেলা তথ্য অফিসের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য।

আর এতেই বাধ সেধেছেন স্থানীয়রা। না, কোনও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে আপত্তি নেই তাদের, আপত্তি গাছটি কাটা নিয়ে। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েক দফায় গাছটি কাটতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে ফিরে যেতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

সবশেষ মঙ্গলবার দুপুরেও গাছ কাটতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জোবাইদা আক্তারসহ অন্যরা।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কুমার জোয়ার্দার, রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ আলী।

গাছ কাটতে না পারলেও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এলাকাবাসীর দাবি মন্ত্রণালয়ে জানাবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাইবাল আদাম বটতলা ছাড়েন কর্মকর্তারা।

তবে এসময় ঘটনার ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে সাংবাদিকদের বাধা দেন পুলিশ কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম।

জোবাইদা আক্তার বলেন, স্থানীয়দের দাবি তিনি মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ট্রাইবাল আদাম এলাকার বাসিন্দা রিনা চাকমা, গীতা চাকমা ও মুনা চাকমার মালিকানাধীন জমিটি তথ্য অফিসের স্থায়ী ভবনের জন্য অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হলেই স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।  

তারা বলছেন, যে গাছটি দীর্ঘকাল ধরে ছায়া ও অক্সিজেন দিয়ে আসছে সেটির গায়ে তারা আঘাত লাগতে দেবেন না। স্থানীয় হিন্দু ও বৌদ্ধা ধর্মাবলম্বীরা বছরের বিভিন্ন সময়ে বটগাছটির পূজা করেন। এর ছায়ায় বসে তারা বিশ্রাম নেন।

ট্রাইবাল আদাম এলাকার বাসিন্দা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি সদানন্দ চাকমা বলেন, “শত বছরের বটগাছটি কেটে ফেলতে একটি পক্ষ কাজটি করছে। এই গরমের দিনে স্থানীয়রা এখানে এসে বিশ্রাম নেন। বটগাছটি নিয়ে স্থানীয়দের অনেক-আবেগ অনুভূতি রয়েছে। আমরা প্রশাসনকে দাবি জানিয়েছি, আমাদের একটাই কথা এই বটগাছ কাটতে দেব না।”

স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত অভয় প্রকাশ চাকমাও বললেন একই কথা।

রাঙ্গামাটি পৌরসভার কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন বলেন, “এই বটগাছটি শত বছরের; গাছটির কারণে এই এলাকাকে সবাই বটতলা নামে চেনেন। বটগাছটা পুরো এলাকার আশ্রয়স্থলের মতো। বিশাল অংশজুড়ে ছায়া দেয়। শুনেছি এটা অধিগ্রহণ হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য। গাছটি যদি কেটে ফেলে স্থানীয়দের ছায়া বসে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা থাকবে না। এতদিনের সঙ্গী গাছটি তাই তারা কাটতে দেবেন না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত