Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

অপেক্ষার বৃষ্টিতে ভিজবেন না কি এড়াবেন

rain-030524-01
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

বৃষ্টির মৌসুম এলেই টিকটকারদের  ‘টিপ টিপ বারসা পানি’ গানের সঙ্গে উত্তাল নেচে আর ভিজে ভিডিও বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। বৃষ্টি শুরু হলেই গ্রামে শিশু-কিশোররা উঠানে নয়তো মাঠে গিয়ে ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকে। আর শহরের মানুষ খোলা ছাদে দু হাত মেলে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করে।

এই সময় হয়তো বাড়ির মুরুব্বি গোছের কেউ চোখ পাকিয়ে বলে বসেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে তো! সর্দি-জ্বর হবে!’

বৃষ্টির অপেক্ষায় গোটা শহর

অনেকেই ঢাকা ছেড়ে সিলেট কিংবা চট্টগ্রাম ঘুরতে যেতে চাইছেন আজকাল; কারণ সেখানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েকদিনে এই দুই বিভাগে ভালোই বৃষ্টি ঝরেছে।

কয়েক সপ্তাহজুড়ে তীব্র দাবদাহ ও গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে কোনও কোনও জায়গায় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার জন্য হাত তুলেছে মানুষ। কোথাও বা আবার ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিভাগে বৃষ্টি হলেও, তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। অনেক এলাকায় এখনও বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা চোখে এবং হাহাকার বুকে।

এরমধ্যে ছোটখাটো আকারে হলেও প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, যে দেশের শহর বায়ু দূষণে অহরহ শীর্ষে নাম লেখায়, যেখানে গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইটের ভাটার ধোঁয়া আর কারখানার দূষণে পরিবেশ-বাতাস আক্রান্ত, কেমিকেল দূষণে নদীর পানি বিষাক্ত  সেখানে বৃষ্টির জলে ভেজা কি আশীর্বাদ না অভিশাপ?

বাংলাদেশে কি অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে?

বছর দুয়েক আগে, ২০২২ সালের জুনে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আগুনে একশটির বেশি কন্টেইনার পুড়ে যায়। এসব কন্টেইনারের মধ্যে অন্তত ২৪ থেকে ৩০টিতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল বলে জানা গিয়েছিল।

আগুনের ঘটনার পর অনেকে বলতে থাকেন, কেমিকেলের কারণে দূষিত বাতাসের সঙ্গে মিশে  ‘অ্যাসিড বৃষ্টি’ হবে এই এলাকায়। আর তাই চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় বৃষ্টি  ‘এড়িয়ে’ চলার কথা চাওড় হয়ে যায় সোশাল মিডিয়াতে।  

তারপর একাধিক সংবাদমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হলে জানা যায়, ওই সময় আগুনে ব্লিচিং এজেন্ট বা অক্সিডাইজিং এজেন্ট হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড প্রায় সবটুকুই পুড়ে গিয়েছিল। রাসায়নিক যৌগ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডে সালফার ডাই-অক্সাইড বা সালফার ট্রাই-অক্সাইডের উপস্থিতিও নেই। ফলে পরে আর অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল না তখন। অর্থাৎ এসব প্রচার আসলে ‘গুজব’।

সালফিউরিক অ্যাসিডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে। সালফার অক্সাইড বৃষ্টির পানিতে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঝরায়। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশে তাই অ্যাসিড বৃষ্টি বাড়ছে।

অ্যাসিড বৃষ্টি মানুষ, অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা এমনকি ঘরবাড়ির জন্য ক্ষতিকর। অ্যাসিড বৃষ্টির বাষ্প মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি করে, ভবনের রঙ উঠে যেতে পারে। এই অ্যাসিড বৃষ্টিতে ভিজলে মানুষের ত্বক কতটা ক্ষতির মুখে পড়বে তা তো সহজেই অনুমেয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দূষণ নিয়ে তথ্য যোগ করা হয় না সাধারণত। ধারণা করা যায়, এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয় না অথবা বৃষ্টির পানি নিয়ে এই বিশ্লেষণ করে দেখার মতো কারিগরি ব্যবস্থা নেই দেশে।

তবে ডিসেম্বর, জানুয়ারি এমন সময় যখন কম বৃষ্টি হয় তখন বৃষ্টির পানিতে কিছুটা অ্যাসিড থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা কখনও কখনও বলেছেন। শিল্পকারখানা থাকা এলাকায় এই অ্যাসিড বৃষ্টি হয়; তখন বৃষ্টির পানি লালচে রঙের হতে পারে। দেশে অ্যাসিড বৃষ্টি নিয়ে এর থেকে বেশি তথ্য, আলোচনা এবং উদ্বেগের দেখা মেলে না সাধারণত।

প্লাস্টিক বৃষ্টি যখন বড় হুমকি

যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও অনেক দেশ যখন অ্যাসিড বৃষ্টির প্রকোপ কমিয়ে আনতে কিছুটা সফলতার মুখ দেখেছে, তখন জানা গেল প্লাস্টিক বৃষ্টি আরও বড় হুমকি। বিজ্ঞানিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১১টি বিশেষ এলাকায় এক হাজার টন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রতি বছর বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়ে। বিশেষ বালতিতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে দেখা যায়, নমুনার ৯৮ শতাংশেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা।

বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ, নদী, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠলেও প্লাস্টিক বৃষ্টি নিয়ে আলোচনা এখানে বিরল।

তাহলে কী বৃষ্টিতে ভিজবেন না?

একটু বৃষ্টি পেলেই পথঘাট আধভেজা হয়ে ওঠে। আর ঝুম বৃষ্টিতে গাছপালা ধুয়ে চকচকে সবুজ হয়ে ওঠে।

রিকশাচালকেরা মাথায় প্লাস্টিক বেঁধে গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে দ্বিগুণ বেগে প্যাডেল ঘোরান। দিনমজুরেরা গরমের বৃষ্টিতে গা ডলে ডলে গোসল করে নেন। নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশু-কিশোররা শহরের পথে হল্লা করে বৃষ্টি উদযাপনে নামে। যানজটে বসে না থেকে ছাতা মেলে বৃষ্টির সঙ্গে লুকোচুরি করে ভিজে ভিজেই হাঁটা দেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বন্ধু-সহপাঠী আর যুগলের চায়ের কাপে টুপ করে পড়ে বৃষ্টির ফোঁটা।

বাগানিরা টবের গাছগুলো ঝুম বৃষ্টির তলে এনে বসিয়ে দেন। বৃষ্টির পানির নাইট্রোজেন, ম্যাগনেসিয়ামে শখের বাগান হেসেখেলে ওঠে।

বৃষ্টির দিনে সোশাল মিডিয়া জুড়ে চলে বৃষ্টি বন্দনা। কেউ হয়তো ফেইসবুক স্টোরিতে গান জুড়ে দিচ্ছেন,  ‘আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।’ কেউ আরেকটু পুরনো দিনে ফিরে গাইছেন, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’। আবার কেউ ভিজতে ভিজতে অপর্ণা সেনের মতো মুগ্ধতা নিয়ে ফেইসবুকে রিল বানাচ্ছেন  ‘বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি এ কোন অপরূপ সৃষ্টি’ গানে।

গোটা শহরে শিশু থেকে বুড়ো, নদী থেকে পিচ ঢালা পথ, গাছপালা থেকে পাখি এবং পথের চারপেয়ে প্রাণীরাও এখন বৃষ্টির জন্য মুখিয়ে আছে। সেই প্রতিক্ষার বৃষ্টি যখন ঝরবে তখন কি আর কেউ নিজেকে বেঁধে রাখতে পারবে ঘরে ও কাজে?

‘ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি, কী অনাসৃষ্টি’

টানা বিরতির পর কোনো এলাকায় প্রথমদিককার কয়েকদফা বৃষ্টিতে কিছু হলেও দূষণ থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্রীষ্মে পরিবেশ ও নদীর দূষণ আরও বেড়ে যায়। বিষাক্ত পানি বাষ্পায়িত হয়ে পরে আবার বৃষ্টির সঙ্গেই ঝরে পড়ে।

বৃষ্টি না হওয়াতে লোকালয় এখন যথেষ্ট তপ্ত হয়ে আছে। হুট করে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে আসবে অনেকখানি। তাপমাত্রার হঠাৎ এই ফারাক অনেকের শরীর মানিয়ে নিতে না-ও পারে। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু হলেও ধাক্কা খাবে এই সময়।

আবার বৃষ্টি হতেই দুই পায়ে ছুট লাগানোর সময় একটু তাল না সামলালে ঘরে আর পথে বিপত্তি ঘটতেই পারে।

  • ছাদে রেলিং আছে তো? গ্রাম-শহরে অনেকের বাড়িতে ছাদের চারদিকে রেলিং দেওয়া থাকে না। বৃষ্টিতে দাপাদাপি করতে গিয়ে ছাদের ধারে চলে গেলে শিশু ও বড়দের পা পিছলে দুর্ঘটনা হতে পারে। এজন্য বৃষ্টি হোক আর নাই হোক, বাড়ির ছাদে রেলিং থাকা খুবই জরুরি।
  • ভেজা পায়ে ধীর কদমে চলা: ছাদে বৃষ্টিতে ভেজার পর ভেজা পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে, ঘরে মেঝেতে পা রাখতে গিয়ে পিছলে বেসামাল হয়ে হাতপা, কোমর মচকানোর ভয় রয়েছে। তাই ভেজা পায়ে চলার সময় সিঁড়ির রেলিং ধরে পা টিপে টিপে চলুন। বৃষ্টিতে ভেজা শেষে ঘরে ঢুকে টাইলস বসানো মেঝেতেও ছুটোছুটি না করে ধীর পায়ে চলতে হবে।
  • সড়কে গাড়ির গতি সামলে: বৃষ্টির সময় সড়ক ও ফ্লাইওভার ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়। এসময় গাড়ির গতি কমিয়ে রাখা দরকার। বিশেষ করে মোড় নেওয়ার সময় গতি নিয়ে খুব সাবধানে থাকতে হবে। যারা মটরসাইকেল চালক, তাদের জন্য বৃষ্টির সময় রাস্তাঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সম্ভব হলে কিছুক্ষণ কোনো নিরাপদ জায়গায় বসে এক কাপ চা-কফি হাতে বৃষ্টি উপভোগ করুন। বৃষ্টি থামলে সাবধানে মটরবাইক নিয়ে পথে নামুন।
  • পিরিয়ডে বৃষ্টিতে ভিজবেন কীভাবে? পিরিয়ড চলছে আর বৃষ্টির মুখে পড়ে গেলেন, এমন হলে নারীর জন্য খুব বিড়ম্বনা। বিশেষ করে যারা স্যানিটারি প্যাড পরেন। এজন্য বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কি না দেখে নিন আগে। ব্যাগে ছাতা এবং রেইনকোট রাখুন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে। আর যদি পিরিয়ডের দিনেও একেবারে জুবুথুবু হয়ে ভিজে বৃষ্টি উপভোগ করতে চান, তাহলে অবশ্যই মেনস্ট্রুয়াল কাপে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন।          
  • চুল মুছে নিন: বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি-জ্বরের ভয় থাকেই। তবে ভেজার পর যদি হালকা গরম পানিতে চট করে গোসল করে নেন গা মুছে নেন তাহলে আর জ্বরের ভয় নেই। যদি গোসল নাও করেন, তবে অবশ্যই আগে মাথার চুল তোয়ালে দিয়ে মুছে ফ্যানের বাতাসে অথবা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে ঝরঝরে করে নিতে হবে। আর গায়ে বৃষ্টির পানি শুকাতে দেওয়া যাবে না; মুছে নিতে হবে।  যাদের চট করে ঠান্ডা লেগে যায়, তারা টানা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজবেন না।
  • ভেজা শেষে চা-কফি: বৃষ্টিতে খুব দাপাদাপির পর গা-মাথা মুছে ঝরঝরে হয়ে একটু চা-কফি খেয়ে নিন ঘরে বসে। সঙ্গে থাকতে পারে মুড়ি-চানাচুর মাখা, তেলে পিঠা, চাল ভাজা, পেঁয়াজু এমন সব আড্ডা জমানো নাশতা। ছোটরা হালকা গরম দুধ খেয়ে নিলে একেবারে ঝরঝরে বোধ করবে।
  • ভেজার পর এসি নয়: বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফেরার পর এসি চালিয়ে বসে থাকবেন না। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর না এলেও এরপর এসির ঠান্ডা জ্বর ডেকে আনতে পারে।  
  • ফুল ঝরা ভেজা পথ: কড়া রোদে কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, লাল সোনাইল ফুল একেবারে হেসেখেলে উঠেছে। তবে একটু বৃষ্টি হলেই কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি টিকতে পারে না। বৃষ্টির পরপরই ভেজা পথে কৃষ্ণচূড়া ফুল লেপ্টে থাকে। শিশু ও বয়স্করা এমন পথে চলতে গিয়ে পিছলে যেতে পারেন, তাই মন যতই সতেজ হোক না কেন চলাফেরার একটু সতর্ক হতেই হবে।

বজ্র ও শিলা বৃষ্টিতে ভেজা এড়াতে হবে

আবহওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেশ কয়েকদিন ভালো বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে।

তাদের পূর্বাভাস সত্যি প্রমাণ করে বৃহষ্পতিবারই ঢাকায় নেমে এসেছে বৃষ্টি। চলেছে মেঘের হাঁকডাকও।

দেশে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ঘটনা প্রতিবারই জানা যায় । তাই গ্রাম ও শহর যেখানেই থাকুন না কেন, বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হলে নিরাপদ জায়গায় থাকতে হবে।

শিলাবৃষ্টিতে বাইরে গিয়ে শিল কুড়ানোর আনন্দ সামলে রাখা খুবই কঠিন। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এবং অনেকের আহত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

সবশেষ কথা, বৃষ্টি ভীষণভাবে উপভোগ করুন, তবে নিজেকে ও প্রিয়জনকে নিরাপদে রেখেই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত