Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

অনলাইনে যাওয়ার সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় সরকারি স্কুল-কলেজ

hot-weather-210424-03

দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে রোজা, ঈদুল ফিতরের ২৬ দিনের ছুটি আরও সাতদিন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশ মানছে না।

শনিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন বলেন, চলমান তাপদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।

পরের দিন রবিবার ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধের নির্দেশ দেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। 

সরকারি এই নির্দেশ অমান্য করে রবিবারও কয়েকটি স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। আবার কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলেও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে চালু করেছে অনলাইন ক্লাস।

মূলত বেসরকারি ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। এ বিষয়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর তাদের অনলাইন ক্লাস নেওয়া নির্ভর করছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, কোনও প্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে অনলাইন ক্লাস চালু করে, তাহলে কর্তৃপক্ষের কোনও আপত্তি নেই।

কোভিড মহামারির সময় দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস চালু রেখেছিল। তবে এবার শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই সে পথে হাঁটছে।

অনলাইন ক্লাস চালু রাখছে যারা

সরকারি নির্দেশ মেনে ঢাকার মহাখালীর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রিন্সিপাল রায়হানা আক্তার।

তিনি বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুল পুরোপুরি বন্ধ। তবে পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের আমরা অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছি।”

অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে বলেন জানান ভাইস প্রিন্সিপাল রায়হানা।

অনলাইন ক্লাসে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত দেখানো হবে কি না- জানতে চাইলে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি তিনি। বলেন, ‘‘আমরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’’

ঢাকার ধানমন্ডির ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল রবিবারও খোলা ছিল। সোমবার সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষক রাশেদা রশীদ স্বর্ণা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে।’’

সরকারের নির্দেশের পরও রবিবার কেন স্কুল খোলা ছিল এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইংলিশ মিডিয়ামের জন্য আমরা গতকালই নির্দেশনা পেয়েছি। আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেরিতে পাওয়ায় আমরা সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে।”

তীব্র গরম থেকে বাঁচতে পানিতে নেমেছে একদল কিশোর। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

তীব্র তাপদাহের কারণে শনিবার থেকে সাতদিন স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্রিসবেল ব্রাইট স্কুল রবিবার পর্যন্ত তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুরভী ফেরদৌস বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল খোলা নেই। আজ (সোমবার) থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।”

শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করানোর ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সুরভী ফেরদৌস বলেন, ‘‘সেটা তো করোনার সময় হয়েছে। এখন হবে না।’’

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সরকারি স্কুলগুলো এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলে তারা অনলাইন ক্লাস শুরু করবে।

এ বিষয়ে ঢাকার আবুল খায়রাত রোডের আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘‘অনলাইন ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পাইনি। তাই আমরাও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারি নির্দেশের মাত্র তো দুদিন গেল। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এলেই অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে চিন্তা করব।’’

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন তালুকদার বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমরা ভাবছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করব। পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’’

তবে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে স্কুল-কলেজ খুলে রাখার বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ জাফর আলী।

তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না মানায় কোনও অংশীজন আপত্তি তুললে আমরা ব্যবস্থা নেব। স্কুল-কলেজ কারা কেন খোলা রাখছে, এতে তাদের স্বার্থই বা কী, এসবও বিবেচনা করা হবে।’’

অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আপত্তি নেই জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় এক সপ্তাহ পিছিয়ে পড়ল। কারিকুলাম তো শেষ করতে হবে।

তবে সেখানেও কিছু জটিলতার দিক দেখিয়ে তিনি বলেন, “অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত না থাকলেও অনুপস্থিত দেখানো হয় না। কারণ অনেকের ডিভাইস নেই। পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।’’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত