Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

৭ দিনে ভবন ভাঙার নির্দেশ, অন্ধকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৪টি ভবন সাত দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করে দিতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে। ছবিটি গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের।
‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৪টি ভবন সাত দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করে দিতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে। ছবিটি গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের।

গত ৩ এপ্রিল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রাজধানীর ৪৪টি ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন খালি করে সিলগালা বা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ নির্দেশ সেগুলোর প্রধানদের অনেকেই সে বিষয়ে জানেন না কিছুই।

মাউশির সেই নির্দেশনায় বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউকের) তালিকায় থাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো মজবুত করতে হবে। আর ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৪টি ভবন সাত দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করে দিতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে।

তালিকায় থাকা ২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটির প্রধানদের সঙ্গে ৭ এপ্রিল রবিবার কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা। তারা বলেছেন, এখনও মাউশির পক্ষ থেকে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি। তারা সকাল সন্ধ্যার কাছ থেকেই নির্দেশনার বিষয়টি জেনেছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা এখন কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ, ঈদের বন্ধ চলছে। এর মধ্যে ভবনের জিনিসপত্র স্থানান্তর করা সম্ভব না।

মাউশি সূত্রে জানা যায়, ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প: রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকা মহানগর উন্নয়ন প্রকল্প ডিএমডিপি এলাকার সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার এই সুপারিশ করে।

অন্ধকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা

ঢাকা শহরের যেসব সরকারি বিদ্যালয় পরিচিত, তাদের একটি খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের দুই তলা একটি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রাখা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানালে প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করেননি।

অবিশ্বাসের সুরে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমার স্কুলের নাম থাকতেই পারে না। আপনি ভুল করছেন।”

ঢাকার সায়েদাবাদের করাতিটোলা সিএমএস উচ্চ বিদ্যালয় আছে এই তালিকায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

প্রজ্ঞাপনে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম আছে জানানোর পর তিনি সেটি দেখতে চেয়ে বলেন, “আপনি কোনও নিউজ পাঠাবেন না। সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকলে সেটা পাঠান।”

প্রজ্ঞাপনটি পাঠানোর পর আবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন এই শিক্ষক বলেন, “আমি তো কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। আমাদের তো অন্ধকারে রাখা হয়েছে।”

এখন আপনারা কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি তো কিছুই বুঝছি না। আমার কথা বলতে হবে বাকিদের সঙ্গে। জানলে না পরিকল্পনা করতাম। আমাদের সঙ্গে কথা না বলে, এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই উচিৎ হয়নি।”

একই প্রতিক্রিয়া জানান গোড়ান আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাসিমা পারভীনও। তিনিও সকাল সন্ধ্যার ফোনেই প্রথম জানতে পারেন যে তালিকায় তার প্রতিষ্ঠানেরও নাম আছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি পাঁচতলা ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলার সময় নাসিমা পারভীন বলেন, “আমি তো আগে থেকে কিছু জানি না। অফিসিয়ালি আমাদের তো কিছু জানানো হয়নি।”

পাঁচতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জানতেন কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি জানতাম, আমাদের এই ভবনটি নিয়ে সমস্যা আছে। কিন্তু এই ভবনের প্রথম দুই তলা সরকার বানিয়ে দিয়েছে। এরপর সব নিয়ম মেনে স্কুলের প্রয়োজনে বাড়ানো হয়েছে।

“আমাদের এসে বলেছিল, এইটা ঝুঁকিপূর্ণ। কী করা যায়, তারা জানাবেন। কিন্তু এইরকম কোনও সিদ্ধান্ত আসবে- এই ব্যাপারে কখনোই কিছু বলেনি। আর এই ভবনে যে কিছু সমস্যা আছে, তাও জানিয়েছে বছরখানেক আগে। এরমধ্যে আর কিছুই তো জানানো হয়নি।”

বিরক্তি প্রকাশ করে এই অধ্যক্ষ বলেন, “এখন ঈদের বন্ধ চলছে। এখন ওই ভবনে আমাদের বিজ্ঞানাগার আছে। এখন আমি কীভাবে এই জিনিসপত্র সরাব? আমাদের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা করে করা উচিৎ ছিল। এখন আমি বাকিদের সঙ্গে কথা বলি দেখি কী করা যায়।”

খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং গোড়ান আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধানের মতো অবস্থা দেলপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফজলুল কবীরের।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনিও বলেন, অফিসিয়ালি কোনও নির্দেশনা তার কাছে না আসার বিষয়টি।

ফজলুল কবীর বলেন, “আমি তো এখনও কিছু জানি না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম।”

এখন কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার কাছে তো চিঠি আসতে হবে। আমি মুখের কথা শুনে কীভাবে কী করি? যোগাযোগ করে দেখি, কী করা যায়। ভাবতে হবে।”

গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ আছে তালিকায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

দায়সারা বক্তব্য মাউশির

মাউশির এই অফিস আদেশে স্বাক্ষর ছিল অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. আ. খালেকের।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিরক্তির সুরেই সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তারা জানবে না কেন? নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে কপি ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হয়েছে। তারা ওয়েবসাইট দেখেন নাই কেন? তারা ওয়েবসাইট খুলে দেখবে না- এইটার দায় কি আমাদের নাকি?”

মাউশির এই সহকারী পরিচালক আরও বলেন, “রাজউক তো নিশ্চয়ই তাদের ওইখানে গিয়েছে। ফিজিক্যালি দেখে এসেছে। তারা কীভাবে বলে তারা জানেন না?”

ঈদের বন্ধের মধ্যে কেন এমন সিদ্ধান্ত জানানো হলো- সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রে আমরা পোস্ট অফিসের ভূমিকায় আছি। রাজউক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে। আমরা অফিস আদেশ হিসেবে এটা জানিয়ে দিয়েছি। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”

তবে এখনই ভবনগুলো ভাঙা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সাত দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করতে বলছি। ভবন ভাঙবে সরকার। তার আলাদা নিয়ম আছে। নিয়ম মেনেই হবে।”

খালেক প্রথমে সকাল সন্ধ্যার ফোন না ধরলে কথা বলা হয়েছিল একই বিভাগের উপ-পরিচালক মুহ. খালেকুজ্জামানের সঙ্গে।

নিজের দপ্তরের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি না। আমি কিছু বলতে পারব না।”

আপনার বিভাগ থেকেই প্রজ্ঞাপনটি গিয়েছে, আপনি জানবেন না কেন- এ প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে খালেকুজ্জামান বলেন, “আমি তো বলেছি জানি না। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”

তালিকায় আছে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

যেসব ভবন ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’

মাউশির নির্দেশনায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৪ ভবনকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ বলা হয়েছে সেগুলো হলো- বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভারের ভাকুর্তা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, দেলপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মিরপুর-১ নম্বরের সরকারি বাংলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি কদম রসুল কলেজ, গাজীপুরের সরকারি কালিগঞ্জ শ্রমিক কলেজ, ডেমরার হায়দার আলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর-১৩ নম্বরের হাজী আলি হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুরের কালিগঞ্জ আর আর এন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, কেরানীগঞ্জ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকার সায়েদাবাদের করাতিটোলা সিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভারের ভাকুর্তার শ্যামলনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তেজগাঁও মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কবি নজরুল স্কুল এন্ড কলেজ, এ কে এম রহমতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ , কে এম মাইনুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয় , কদমতলীর একেকে উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড ব্রাইট কলেজ, আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোতোয়ালি থানার আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি, গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং লালবাগের আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত