Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

গরমে লোডশেডিংয়ে কাহিল এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

চরম গরমে যে যেখানে পানি পাচ্ছে, মাথা ভিজিয়ে নিচ্ছে। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
চরম গরমে যে যেখানে পানি পাচ্ছে, মাথা ভিজিয়ে নিচ্ছে। ছবি : হারুন-অর-রশীদ

এইচএসসি পরীক্ষার বাকি আর দুই মাস, কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ নিয়ে পড়াশোনার কথা। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে গরম, তার সঙ্গে লোডশেডিং যোগ হয়ে ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে।

এবার গ্রীষ্মের শুরুতেই গরম চরমে উঠেছে। তাপদাহ চলছে দেশজুড়ে। এই কারণে স্কুল-কলেজেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোদে বাইরে না থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ঘরে থাকলেও তাদের প্রস্তুতিতে পড়ছে গরমের প্রভাব। তারা বলছে, গরমের কারণে শতভাগ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না।

ঢাকার পাশের নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার খাড়াব গ্রামে বেশ কিছুদিন বিদ্যুৎ থাকে না দিনের বেশিরভাগ সময়। অন্য সময় লোডশেডিং হলে বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে গিয়ে পড়াশোনা করতেন ফারজানা আক্তার। কিন্তু এবার তা পারছেন না।

মনোহরদী সরকারি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এই এইচএসসি পরীক্ষার্থী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গরমে প্রস্তুতি ভালো না। পড়তে পারি না। খালি মাথা ঘোরে। পুকুরপাড়ে গিয়াও বাতাস নাই।”

বিদ্যুৎ একটানা আধ ঘণ্টার বেশি থাকে না বলে দাবি করেন ফারজানা।

গরমের সমস্যায় রয়েছেন ঢাকার হলিক্রস কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসরুরা কায়সার সারাও।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গরমে ঘুম ঠিকমতো হয় না। তাই পড়তে একটু কষ্ট হয়। যাদের ঘরে এসি বা আইপিএস নেই, তাদের কষ্ট আরও বেশি।”

গরমে বাইরে বের হলে ছাতা সঙ্গে রাখছেন অনেকেই। ছবি : হারুন-অর-রশীদ

রাজধানীর পূর্ব নাখালপাড়ায় সারাদের বাসা। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি তাকেও পড়তে হয়। তবে মনোহরদীর ফারজানার মতো অতটা না।

তিনি বলেন, “দিনে কখনও একবার অথবা দুবার লোডশেডিং হয়। কোনোবার ঘণ্টাখানেকের জন্য। কখনও আবার আধ ঘণ্টা পরই চলে আসে।”

গরমের কারণে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রাফিকুল আল-আমিনের। তবে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “পড়শোনায় গরমের কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে যারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, তাদের সে চাপটা একটু কম। যারা আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়নি, তাদের ওপর খানিকটা প্রভাব ফেলতে পারে।”

তবে বিদ্যুতের সমস্যা ভোগাচ্ছে বলে জানান শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা এই পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, “গতকাল (শনিবার) প্রায় দুই ঘণ্টা ছিল লোডশেডিং। বেশ কয়েকদিন ধরে কারেন্ট বেশি যাচ্ছে। আগে এত ছিল না।”

গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, শনিবার যেখানে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট, সেখানে চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট।

ফলে ঘাটতি সামাল দিতে লোডশেডিংই সমাধান এখন বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। সামনে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ এই মাসে তাপপ্রবাহ প্রশমনের কোনও আভাস নেই।

শনিবার ঢাকাসহ ১২টি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছিল।

যে কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা বেশি তার একটি রাজশাহী। শনিবার সেখানে থার্মোমিটারে পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল, যেখানে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী সিটি কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিসা আরজু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “লোডশেডিংয়ের কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে। দিনের বেলা দুই থেকে তিন বার, আবার রাতেও দুই বার কারেন্ট যাচ্ছে।”

গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে পড়াশোনার প্রস্তুতিতে ঘাটতির কথা বলেছেন ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী সায়েম হোসেনও। তার বাসা তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ায়।  

লোডশেডিংয়ে বিরক্ত সায়েম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রাত ১০টা থেকে ১১টার দিকে কারেন্ট থাকে না। বিকালেও আরেকবার কারেন্ট যায়। পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

“আমরা যারা ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি, কোভিডের কারণে আমরা এমনি সময় কম পেয়েছি। ৬ থেকে ৭ মাসে প্রথম বর্ষ এবং ৪ থেকে ৫ মাসে অর্থাৎ ১ বছর ২ মাসে টেস্ট পরীক্ষা দিতে বসেছি,” বলেন তিনি।

২০২৩ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন। এবারও সংখ্যাটি তেমনই হবে বলে ধারণা করা যায়। আগামী ৩০ জুন শুরু হবে এবারের এই পাবলিক পরীক্ষা।

চরম গরমের কারণে স্কুলগুলোতে ঈদের ছুটি এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার। ছবি : হারুন-অর-রশীদ

গরমে শিক্ষার্থীদের কী করণীয়

গরমে হিটস্ট্রোক এড়ানোসহ কীভাবে সুস্থ থাকা যাবে, তা নিয়ে নানা পরামর্শ এরই মধ্যে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তা অনুসরণের পাশাপাশি আরও কিছু পরামর্শ দিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যারা এইচএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থী, তাদের তো পড়াশোনায় থাকতে হবে। তাদের বেশিরভাগেরই বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং তরল খাবার তারা পান করবে। যাদের ঘামের পরিমাণ বেশি হয়, তাদের পানি বেশি পান করতে হবে। তরমুজ, শসাজাতীয় রসাল ফল ও তরল খাবার খেতে হবে।”

তবে রাস্তার পাশের শরবত কিংবা খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন এই চিকিৎসক।

ঘর থেকে স্বল্প দূরত্বে বের হলেও সঙ্গে ছাতা ও পানি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ডা. লেনিন বলেন, “বেশি দূরত্বে যেতে হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। এমন যানবাহন ব্যবহার করতে হবে, যাতে রোদ না লাগে।”

গরমে আরাম পেতে সুতি ও ঢিলেঢালা পোশাক পরার পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত