Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের যত বিক্ষোভ

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।
গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের হুমকিতেও থামছে না শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ, যার কেন্দ্রে রয়েছে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি।

চলমান এই বিক্ষোভে আরও রয়েছে হার্ভার্ড, ইয়েল, এমআইটি, কর্নেল, ইউএসসি, ইউসি বার্কলে, ক্যাল পলি, ইউসিএলএ, ইউটি অস্টিন, ইউ-মিচ, ভান্ডারবিল্ট, ব্রাউন, জর্জ ওয়াশিংটন, এমারি, টাফ্টস, নর্থওয়েস্টার্ন এবং টেক্সাস ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাস।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাঁবুর মতো অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে বিক্ষোভ করছে। তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধকে জিইয়ে রাখতে সহযোগিতা করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সম্পর্ক ছিন্ন করে।

অবাক করা বিষয় হলো, বিক্ষোভ ও সমাবেশের অনেকগুলোতেই ইহুদি শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছেন। এর আগে ফিলিস্তিন প্রশ্নে এমনটা দেখা যায়নি কখনও।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির দুই ছাত্র সংগঠন – ‘জুইশ ভয়েস ফর প্যালেস্টাইন’ ও ‘প্যালেস্টাইন স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে। হার্ভার্ড, ইয়েল, এমআইটি, প্রিন্সটন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়েও একইভাবে ইহুদি শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের হাতে নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবে প্রতিবাদকারী ও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর।

নিউ ইয়র্কের হোস্টোস কমিউনিটি কলেজের ইতিহাস বিভাগের আমেরিকান স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিজমের ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস জনস্টন বলেন, “চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো, ১৯৬০-এর দশকের তুলনায় এবারের আন্দোলনে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক কম আক্রমণাত্মক ও চরমপন্থী কৌশল দেখতে পাচ্ছি।

“এই আন্দোলনে আমরা খুব কমই শারীরিক আঘাত বা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি দেখতে পাচ্ছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা ভবন দখল না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে প্রতিবাদ করছে। ১৯৬০-এর দশকে, বিশেষ করে শেষের দিকের বিক্ষোভের তুলনায়, বর্তমান আন্দোলন অনেকটাই শান্তিপূর্ণ। তবুও সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলনকে খুবই কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করছে।”

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (এনওয়াইইউ) মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামিক স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক হেলগা তাভিল-সৌরি আল জাজিরাকে বলেন, গাজা প্রশ্নে এনওয়াইইউর শিক্ষার্থীরা থানার বাইরে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ করছিল। তারা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি সদস্যের মুক্তির অপেক্ষা করছিল।

তিনি বলেন, “নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ২০ বছর ধরে কর্মরত থাকায় অনেক বিক্ষোভ দেখেছি। কিন্তু আমার মনে হয়, এত কঠোরভাবে বিক্ষোভ দমনের ঘটনা আমি আগে কখনও দেখিনি।”

উত্তর ক্যারোলিনার গ্রিনসবোরোতে নর্থ ক্যারোলাইনা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজের চার আফ্রিকান আমেরিকান শিক্ষার্থী।

১৯৫৪-৬০: ব্রাউন বনাম শিক্ষা বোর্ড ও গ্রিনসবোরো অবস্থান কর্মসূচি

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৫৪ সালে এক রায়ে জানায়, বিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় অনুমোদিত বর্ণবৈষম্য অসাংবিধানিক। ১৮৯৬ সাল থেকে ওই রায় দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে এমন বৈষম্য চালু ছিল।

১৯৬০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উত্তর ক্যারোলিনার গ্রিনসবোরোতে নর্থ ক্যারোলাইনা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজের চার আফ্রিকান আমেরিকান শিক্ষার্থী বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভ করে। ওই চার কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী হলেন- ইজেল ব্লেয়ার জুনিয়ার, ডেভিড রিচমন্ড, ফ্রাঙ্কলিন ম্যাককেইন ও জোসেফ ম্যাকনেইল।  

‘গ্রিনসবোরো ফোর’ নামে পরিচিত ওই চারজন ‘শুধু শ্বেতাঙ্গদের’ জন্য সংরক্ষিত একটি রেস্তোরাঁয় বসে প্রতিবাদ শুরু করেন। রাতারাতি ওই অবস্থান কর্মসূচি (সিট-ইন) দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হয়ে ওঠে।

রেস্তোরাঁয় সেবা বঞ্চিত হলে শিক্ষার্থীরা চেয়ার থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানায়। ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ নাগাদ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়। আন্দোলনটি দ্রুত অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। আর এতে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ উভয়েই যোগ দেয়।

গ্রিনসবোরো সিট-ইন আন্দোলন সফল হয়। ১৯৬০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে রেস্তোরাঁগুলোতে আবার বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে খাবার পরিবেশন শুরু হয়। এই প্রতিবাদগুলো নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্যের একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই সফলতার ধারাবাহিকতায় ১৯৬০ সালে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের একটি দল ননভায়োলেন্ট কোঅর্ডিনেটিং কমিটি (এসএনসিসি) গঠন করে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।

১৯৬৮-৬৯ : ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

ভিয়েতনাম যুদ্ধের শুরু ১৯৫৪ সালে। আর শেষ ১৯৭৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। যুদ্ধের বর্বরতায় অসন্তুষ্ট হয়ে ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও এর অধীন বার্নার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করে। তারা ক্যাম্পাসের পাঁচটি ভবন দখল করে। এমনকি একজন ডিনও তাদের হাতে জিম্মি হয়।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ চলার পর কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট গ্রেসন এল কির্ক নিউ ইয়র্ক সিটি ট্যাকটিক্যাল পেট্রোল ফোর্সের প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্যকে ডেকে পাঠান। পুলিশ অপরাধমূলক অনুপ্রবেশ ও অসামাজিক আচরণের অভিযোগে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। কিছু ভবনে পুলিশের বলপ্রয়োগের ঘটনায় ১৪৮ শিক্ষার্থী আহত হয়।

বিক্ষোভের কারণে শেষমেষ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিকে পেন্টাগনের একটি ইনিস্টিটিউটের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। এই প্রতিষ্ঠান ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্য গবেষণা পরিচালনা করছিল। আন্দোলনের এক পর্যায়ে এতে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষমাও করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ওই শিক্ষার্থীরা তখন শুধু ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়নি। তারা স্থানীয়দের অধিকার রক্ষায়ও লড়াই করেছিলেন। তারা স্থানীয় মর্নিংসাইড পার্কে একটি জিম (ব্যায়ামাগার) নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। জিমটি হলে এর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা হার্লেমের কৃষ্ণাঙ্গরা পেতেন না।

প্রতিবাদের কারণে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট গ্রেসন এল. কির্ক ও প্রোভোস্ট ডেভিড বি. ট্রুম্যান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা কেবল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দিয়েছিল।

হার্ভার্ডে ১৯৬৯ সালের ৯ এপ্রিল রাতে শুরু হয় বিক্ষোভ। এর নেতৃত্ব ছিল ‘স্টুডেন্টস ফর এ ডেমোক্রেটিক সোসাইটি’ (এসডিএস) নামক একটি জাতীয় সংগঠনের হাতে। সংগঠনের কর্মীরা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টের বাড়ির দরজায় তাদের দাবি সংবলিত একটি তালিকা টানিয়ে দিয়েছিল।

এসডিএস কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নীতির সঙ্গে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জড়িত থাকার বিরুদ্ধে ছিল। বিশেষ করে তারা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ডাউ কেমিক্যালসের সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে নাপাম বোমা সরবরাহ করত।

১৯৬৭ সালে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ডাউ কেমিক্যালসকে। এসডিএস কর্মীরা এই আমন্ত্রণের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। তারা ক্যাম্পাসে রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কর্পসের (আরওটিসি) উপস্থিতিরও বিরোধিতা করে। আরওটিসি একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি যা শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্য হতে প্রস্তুত করে।

হল দখল ও ধর্মঘট

এসডিএসের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েকটি আবাসিক হল দখল করে। এই ঘটনায় বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে এবং আট দিনের ধর্মঘট শুরু হয়।

প্রতিবাদের ফলে আরওটিসি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

১৯৭০ সালের ৪ মে কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিল। তারা ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যুদ্ধের সম্প্রসারণ এবং ক্যাম্পাসে ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। উত্তেজনাপূর্ণ এক পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের উপর গুলি চালায় ওহাইয়ো ন্যাশনাল গার্ড। এতে ৪ শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হয়।

কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গুলির ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী দেশব্যাপী শত শত কলেজ ও হাই স্কুলে প্রতিবাদ ও ধর্মঘট করে।

কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গুলিবর্ষণের মাত্র ১১ দিন পর ১৫ মে আরেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। মিসিসিপির জ্যাকসন স্টেট কলেজের ক্যাম্পাসে পুলিশ ১০০ জন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালায়। এতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ১২ জন আহত হয়।

এই প্রতিবাদ ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে যাওয়া সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ও জাতিবিদ্বেষী গালি দেওয়া শ্বেতাঙ্গ ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল।

মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে বর্ণবাদবিরোধী সমাবেশ।

১৯৮৫: দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী প্রতিবাদ

১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটো শহরের সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা আফ্রিকান্স ভাষায় বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান ও স্কুলে ভিড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। তৎকালীন বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থা কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের আফ্রিকান্স ভাষায় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিল। এছাড়া সোয়েটার স্কুলগুলো কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের সংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিল না। ফলে শ্রেণিকক্ষে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অপর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত তৈরি হয়েছিল।

সোয়েটোর প্রতিবাদের খবর দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে নতুন জীবন দেয়।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি কয়েকটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কলম্বিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পরিচালকদের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। এই আহ্বানটি বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থার উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়েছিল।

এই আন্দোলনেও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কোয়ালিশন ফর আ ফ্রি সাউথ আফ্রিকা (সিএফএসএ) নামক একটি সংগঠন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। ১৯৮৫ সালের ৪ এপ্রিল সিএফএসএ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হ্যামিলটন হলের মূল গেট অবরোধ করে। বেশ কয়েক দিন ধরে চলা এ কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয় সিএফএসএ কর্মীদের।

১৯৮৫ সালের ৮ এপ্রিল ম্যানহাটনের রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক বিক্ষোভকারীদের হ্যামিলটন হলের মূল গেট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরদিন সিএফএসএ কর্মীরা বিচারকের নির্দেশ মেনে হ্যামিলটন হলের সিঁড়িতে ও সংলগ্ন প্রাঙ্গণে নির্ধারিত এলাকায় বিক্ষোভ করে।

ওই বছরের ২৫ এপ্রিল হ্যামিলটন হল অবরোধ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি ছয় সদস্যের ট্রাস্টি প্যানেল গঠন করে। এর কাজ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা।

আগস্টের শেষের দিকে প্যানেল একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় যে, বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা কেবল নৈতিকভাবেই সঠিক নয়, বরং আর্থিকভাবেও সম্ভবপর।

ওয়াশিংটন ডিসিতে উপসাগরীয় যুদ্ধ বন্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ।

১৯৯১ : উপসাগরীয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হুসেইন ১৯৯০ সালের আগস্টে প্রতিবেশী দেশ কুয়েতে আক্রমণ করে। এর এক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বহর সৌদি আরবে পৌঁছায়। সৌদি ও অন্যান্য পারস্য উপসাগরীয় দেশের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে শুরু করে ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’। ৪৩ দিন ধরে চলা অভিযানে জোট বাহিনী ইরাক ও কুয়েতে ব্যাপক বোমা হামলা চালায়।

এই যুদ্ধের প্রতিবাদে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে- মিশিগান, কলাম্বিয়া, জর্জ ওয়াশিংটন ও জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সান্তা ক্রুজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ২০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছিল তখন।

ক্যালিফোর্নিয়ায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

২০২০ : ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন

মিনেসোটা রাজ্যে ২০২০ সালের ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড নামে ৪৬ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ ডেরেক চৌভিন। প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, চৌভিন প্রায় আট মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন।

এর প্রতিবাদে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ ব্যানারে আবারও আন্দোলন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। বর্ণবাদ ও পুলিশের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কয়েক লাখ মানুষ তখন রাস্তায় নামে। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী সমর্থন পায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ বিভাগে সংস্কার, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও জাতিগত ন্যায়বিচারের দাবি জানায়।

এই বিক্ষোভের অনেকগুলোতেই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালে মার্টিন নামে আরেক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেছিল এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। তখনও ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছিল।

২০১৪ সালে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে প্রাণ হারায় ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ মাইকেল ব্রাউন। এই হত্যাকাণ্ডের পরও শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ নির্বিশেষে বিক্ষোভে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত