ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ, দখলদারিত্বের অবসান ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ‘মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে ছাত্র-জনতার মিছিল’ ব্যানারে বারিধারায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে মিছিল শুরু হয়।
ফিলিস্তিনের পতাকাসহ প্রতিবাদী স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে দূতাবাসের দিকে এগোতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। এসময় ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত কর’, ‘ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ কর’ স্লোগানও দিতে দেখা যায় তাদের।
উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহজাদপুরে পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে বিক্ষোভ মিছিলটি। এরপর সেখানেই অবস্থান করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিক্ষোভকারীরা। সমাবেশে গাজায় চলমান ইসরায়েলের আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন বন্ধের দাবি জানানো হয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের হামলায় সেদিন ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়। আর জিম্মি হয় ২৫২ জন।
হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিনই গাজায় হামলা করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে। সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৯ লাখ মানুষ।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা বন্ধে দেশে দেশে বিক্ষোভ চলছে। খোদ ইসরায়েলের মানুষ আগ্রাসন বন্ধে এবং জিম্মিদের ফেরত পেতে রাজপথে নেমে তাদের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে গাজায় নেতানিয়াহু সরকারের হত্যাযজ্ঞের মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রকেও নিজ দেশে বিক্ষোভ দেখতে হচ্ছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এরপর সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) থেকে শুরু করে দেড়শর বেশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনপন্থী ও ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে।
যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন শিক্ষকরাও। তাদেরকেও বিক্ষোভস্থল থেকে আটক করা হচ্ছে।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরোধিতা ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে দেখা হবে- এই সংক্রান্ত একটি বিল ১ মে পাস করে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের জবাবে এই বিল পাস করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ এখন কেবল যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ নেই। এর ছোঁয়া লেগেছে ইউরোপেও।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক হয়েছে শত শত শিক্ষার্থী।