Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ব্ল্যাক ব‍্যান্ডের সবাই, একসঙ্গে একদিন

Black_Ressurection
Picture of সৈয়দ ফরহাদ

সৈয়দ ফরহাদ

বাংলা রকের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’। বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ রক জনরার ব্যান্ড হিসাবে ব্ল্যাককে পুরোধা বললেও ভুল হবে না। যে সময়ে কনসার্ট মানেই ‘এলআরবি’ আর ‘নগর বাউল’, ঠিক সেই সময়ে রক শ্রোতাদের সামনে হাজির হয় এই ব্যান্ড। রকপ্রেমী শ্রোতারাও জেনে যায় ‘ব্ল্যাক’ একেবারেই হাঁটছে না পূর্বসুরিদের পথে। এ যেন এক নতুন আওয়াজ।

‘ব্ল্যাক’ ব্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। তিন বন্ধু জন কবির, খাদেমুল জাহান এবং মেহমুদ আফ্রিদী টনির সঙ্গে শুরু করেন এই যাত্রা। একে একে যুক্ত হন মিরাজ এবং তাহসান। ২০০২ সালে জি সিরিজের ব্যানারে প্রকাশিত হয় ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘আমার পৃথিবী’। দ্রুত অ্যালবামটি রক শ্রোতাদের কাছে পায় জনপ্রিয়তা।

বাংলাদেশে যারা পশ্চিমের রক গানের শ্রোতা, তাদের কাছে অল্টারনেটিভ রক মানেই পার্ল জ্যাম, নির্ভানা, সাউন্ড গার্ডেন কিংবা স্টোন টেম্পল পাইলটস। কিন্তু বাংলা রক গানেও এই জনরা যে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে, তা প্রতিষ্ঠিত করে ব্ল্যাক।

অ্যালবাম কভার ‘আবার’। ছবি-সংগৃহীত

তার মানে ব্যান্ড সঙ্গীতে এই চর্চার চল যে একেবারেই ছিল না তা- নয়। ছিল, তবে বিচ্ছিন্নভাবে। বিচ্ছিন্নভাবে এই জনরার আভাস পাওয়া যেত এলআরবি কিংবা ফিলিংস- এর কোন কোন গানে। কিন্তু এই জনরাকে ব্যান্ডের পরিচয়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে বাংলাদেশের রক ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’।

২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় ব্ল্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উৎসবের পরে’। প্রথম অ্যালবামের সাফল্য বজায় ছিল এই অ্যালবামেও। বরং আরও একটু পরিণত ‘ব্ল্যাক’-কে পাওয়া যায় এতে। এই অ্যালবামের ‘উৎসবের পরে’, ‘শ্লোক’, ‘পরাহত’ এবং ‘প্রাকৃতিক’ গানগুলো রকপ্রেমী শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।   

২০০৪ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ব্যান্ডের বেইজিস্ট মিরাজ। ব্ল্যাকের হয়ে থেমে যায় তার সঙ্গীত চর্চা। একই বছর ব্যান্ড ছাড়েন তাহসানও।

পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে প্রকাশ হয় তৃতীয় অ্যালবাম ‘আবার’। চিরচেনা ‘ব্ল্যাক’ বহাল ছিল এতেও। অনেকের মতে এটাই ব্ল্যাকের সেরা অ্যালবাম। ২০১১ সালে তাদের ৪র্থ অ্যালবাম ‘ব্ল্যাক’ প্রকাশিত হবার পর ভোকাল জন কবিরকেও আর ব্যান্ডের সঙ্গে পারফর্ম করতে দেখা যায়নি।

২০১৬ সালে এই ব্যান্ডের পঞ্চম অ্যালবাম ‘ঊনমানুষ’ যখন প্রকাশ হচ্ছে, তখন তাদের পুরোনো ৩ সদস্যই ব্যান্ড ছেড়েছেন। জন কবিরও ততদিনে তার নতুন ব্যান্ড ‘ইন্দালো’ নিয়ে কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। ২০১৮ সালের পর থেকে ড্রামার টনিও সময় দিচ্ছেন না ব্যান্ডে। বর্তমানে তিনি কানাডাপ্রবাসী।  

এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ব্ল্যাকের পুনর্মিলনীর গুঞ্জন উঠলেও বাস্তবে তার ছায়ামাত্র দেখা যায়নি। তবে এবার সত্যি সত্যি ব্যান্ডের পুনর্মিলনী দেখতে পাবেন বাংলা রকপ্রেমী শ্রোতারা। আর এই সুযোগটি ঘটবে ‘রক অ্যান্ড রিদম ৪.০’ কন্সার্টে। কন্সার্টটির আয়োজক অ্যাডভেন্টর কমিউনিকেশন্স।

১০ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই কনসার্টের ব্যাপারে আমরা কথা বলেছিলাম ব্ল্যাকের গিটারিস্ট খাদেমুল জাহানের সঙ্গে।

ব্ল্যাকের বর্তমান সদস্যরা। ছবি- ব্ল্যাকের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ

ব্যান্ডের পুনির্মিলনী এবং কনসার্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান লাইনআপের ‘সমান্তরাল’ গানটি ওইদিন রিলিজ হবে। পাশাপাশি আমরা (ব্ল্যাক) ওয়েবসাইট লঞ্চ করতে যাচ্ছি এই শো’র মধ্য দিয়ে। এই উপলক্ষে আমাদের পুরনো ৪ সদস্যকে আমরা গেস্ট হিসেবে পাব এই কনসার্টে।”

ফিরে আসবে পুরনো লাইনআপ?

তবে কি এই কনসার্টের মধ্য দিয়ে আবার ফেরত আসছে ব্ল্যাক ব্যান্ডের পুরোনো সেই লাইনআপ? ভক্ত অনুরাগীদের মাঝে উঠেছে এমন আওয়াজ।

বিষয়টি খোলাসা করলেন ব্যান্ডের গিটারিস্ট জাহান।

“ব্যান্ডের বয়স প্রায় ২৫ বছর। এরই মধ্যে পালটে গেছে বহু কিছু। কিছুই আগের মতো নেই। কথায় আছে না একটা ফুল ফুটলে সেটার বীজ অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে! আবার সেই বীজ থেকে নতুন ফুল গাছ হয়। বিষয়টা খানিকটা তাই। ওই জায়গা থেকে তো আবার সেই আগের গাছটিতে ফিরে যাওয়া একেবারেই সম্ভব না। এটা একটা স্পেশাল শো। বর্তমান এবং অতীত সদস্যদের মিলিয়ে।”

অর্থাৎ পুরনো লাইনআপে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন জাহান।

পুনর্মিলনী সম্পর্কে ব্যান্ডের সাবেক ভোকাল জন কবিরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, হঠাৎ করেই এই সুযোগটি এসেছে। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না।

বর্তমান ‘ব্ল্যাক’ এর কিছুই দেখা হয় না জনের  

ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে জন বলেন, “ব্ল্যাক ছাড়ার পর বর্তমান লাইনআপের কোন কিছু আসলে আমার শোনা হয় নাই… দেখাও হয় নাই। আমি আসলে কিছু বলতে পারবো না।”

ব্ল্যাকের বহু ভক্তের চাওয়া ব্ল্যাক হয়তো আবার পুরোনো লাইনআপে ফেরত যাবে। এই বিষয়টি নিয়ে ব্যান্ডের অনেক অনুরাগীর নস্টালজিয়া ও আফসোসও কাজ করে। এই বিষয়টি জন কবিরকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “দেখেন অতীতে ভালো-খারাপ যাই ঘটুক তার কোন কিছুই মনে রাখার মতো মানুষ আমি নই। কিন্তু যখন মানুষ বলে যে আমাদের ফিরে যাওয়া উচিৎ তখন মনে হয় আমরা হয়তো ভালো কিছুই করেছিলাম। তবে কেউ এমন বললে যে খুব খুশি হয়ে যাই তা-ও না। সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে আমি খুবই সম্মুখবর্তী মানুষ।”

জন কবির। ছবি- সংগৃহীত

এ কথা বলেই তিনি জানালেন তার বর্তমান ব্যান্ড ‘ইন্দালো’র কার্যক্রম সম্পর্কে।

জন বলেন, “আমার ব্যান্ড ইন্দালোর একটা গান বেড়িয়েছে যার নাম ‘একান্ত গোলাপ’। আমাদের অ্যালবাম বের হতে যাচ্ছে। তো এখন আমার পুরোটা জুড়ে এটাই। আর একটি গান হয়তো আগামী মাসেই বের করবো। এখন আমার একটাই লক্ষ্য আমার ব্যান্ডের অ্যালবামটি বের করা।”

১৯ বছর পর মিরাজ

ব্ল্যাকে ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বেজিস্ট হিসেবে সক্রিয় ছিলেন মাহমুদুল করিম মিরাজ। তিনি জানালেন, ব্ল্যাকের পুরোনো এই লাইনআপের সাথে ১৯ বছর পর পারফর্ম করতে যাচ্ছেন তিনি।

আগামী ১০ মে ‘রক অ্যান্ড রিদম ৪.০’ কন্সার্টে ব্ল্যাকের সঙ্গে মঞ্চে দেখা যাবে তাকেও।

ভক্ত শ্রোতাদের কথা চিন্তা করে ব্ল্যাকের পুরোনো লাইনআপে ফেরত আসার কোনও সম্ভাবনা আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “৫ জনের মধ্যে বোঝাপরা অথবা যোগাযোগ আগের মতো নাই। এটা খুবই ডিফিকাল্ট। ফ্যামিলি মেম্বারদের মধ্যে কোন মিল-টিল নাই। শুধু শুধুই ফ্যামিলিটা কন্টিনিউ করার কোন কারণ নাই”।

১০ মে’র কন্সার্ট নিয়ে তিনি বলেন, “এটা জাস্ট আরেকটা শো। আমরা পুরোনোরা একসাথে বাজাবো। এর চেয়ে বেশি কিছু না।”

কথায় কথায় মিরাজ আরও বললেন, “বাস্তবতা সবসময় একই রকম থাকে না। জীবন বহমান। এখন ব্যান্ডের যদি ২-৩ জন না থাকে, আর বাকিরা যদি মনে করে যে তারপরও ব্যান্ড চলবে, এটাও ঠিক আছে। এখন (বর্তমান লাইন আপে) যারা আছে তাদেরও সম্ভাবনা আছে, সামর্থ্য আছে দারুণ কিছু করার। আসলে চাইলেই তো আর পেছনের সব কিছু ফিরিয়ে আনা যায় না। আমরা ছোটবেলায় ম্যাকগাইভার দেখেছি। এখন ওই একইরকম জিনিস কি আবারও সম্ভব? সম্ভব না। আমাদের ছোটবেলা থেকেই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দেখে আসছি। এটা এখনও চলছে। ‘ইত্যাদি’ পেরেছে তার মানে সবাই যে পারবে তা কিন্তু নয়।”

অনুপ্রেরণায় যারা

প্রথম অ্যালবাম দিয়েই বাজিমাত করে ফেলে রক ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’। আর এমন ব্যান্ডের অনুপ্রেরণায় কারা সে প্রশ্ন চলে আসে খুব স্বাভাবিকভাবে। ব্ল্যাক নিয়ে আলোচনা জমে উঠলে পশ্চিমের শক্তিশালী গ্রাঞ্জ এবং অল্টারনেটিভ রক ধারার কিছু ব্যান্ডের নামও চলে আসে।

আমরা গিটারিস্ট জাহানের কাছে বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছিলাম ব্ল্যাকের অনুপ্রেরণা, প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে।

উত্তরে জাহান শুরু করলেন তার শৈশবের স্বপ্নময় দিনগুলো স্মরণ করে। যখন তিনি সবে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন। সময়টা ৯০ দশকের শুরুর দিকে।

“তখন সবেমাত্র ডিশের লাইন দেশে এসেছে। এম টিভিতে তখন রক ব্যান্ডগুলোর গানের পাশাপাশি মিউজিক ভিডিও দেখাতো। গানের পাশাপাশি একটা ভিজুয়্যাল রিপ্রেজেন্টেশন। যেটা আমাদের টানতো। সময়টা গ্রাঞ্জ এর। আমরা ওই গানগুলোই শুনে বড় হচ্ছি। তখন আয়রন মেইডেন, মেটালিকা, মেগাডেথ এগুলো তো চলতোই, পাশাপাশি পার্ল জ্যাম, স্টোন টেম্পল পাইলটস, নির্ভানা এবং সাউন্ড গার্ডেনের মতো ব্যান্ডগুলোর সময় তখন। ফলে আমরা যখন ব্যান্ড ফর্ম করছি তখন আমাদের মিউজিকেও এদের ইনফ্লুয়েন্স চলে আসে। সে সময় আবার ব্যান্ড ক্রিড জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অল্টারনেটিভ রক থেকে তাদের জনরার (পোস্ট গ্রাঞ্জ) দিকে আমরা ঝুঁকছি। ফলে গিটারের টিউনটাও ড্রপ ডি করে বাজানো… রেগুলার টিউনের মতো না- এভাবেই আমাদের গানে এই প্রভাবগুলো চলে আসে।”         

স্মৃতিতে ইমন জুবায়ের

ব্ল্যাকের অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে জি-সিরিজের সিইও এবং ব্ল্যাকের গিটারিস্ট জাহান স্মরণ করলেন অকাল প্রয়াত ইমন জুবায়েরকে। লেখক ব্লগার ইমন জুবায়ের ছিলেন ব্ল্যাকের গীতিকার। নিয়মিত লিখতেন একসময়ের জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সামহোয়্যার ইন ব্লগে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ২০১৩ সালে অকালমৃত্যু ঘটে এই লেখকের।

অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে তিনি স্মরণ করেন প্রয়াত এই লেখককে। তার কাছেই জানা যায় ব্ল্যাক প্রকাশিত ৯০টি গানের প্রায় ৮০টিই ইমন জুবায়েরের লেখা।

ইমন জুবায়ের। ছবি-সংগৃহীত

জাহান বলেন, “আমাদের মিউজিকের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন ইমন ভাই।  উনার লিরিক্স ছিল পোস্ট-মর্ডান ধাঁচের।”  

ব্ল্যাকের নিবিড় শ্রোতা মাত্রই জানেন ইমন জুবায়ের সম্পর্কে। তার  কলম থেকেই ‘উৎসবের পরে’, ‘মিথ্যা’ কিংবা ‘আমার পৃথিবী’র মতো গানের জন্ম হয়।

স্মৃতি হাতড়ে জাহান ফিরে যান ব্যান্ডের সেই শুরুর দিনগুলোতে। যার পুরোটা জুড়ে আছে অকাল প্রয়াত কবি ইমন জুবায়ের।

ইমন জুবায়েরের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, “ইমন ভাই তাহসানের আপন খালাতো ভাই। তবে ইমন ভাইয়ের সাথে আমাদের পরিচয়টা ঘটে আসিফের মাধ্যমে। আসিফ আমাদের ব্যান্ডের প্রথম (আসিফ হক) গিটারিস্ট। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় আসিফই আমাদেরকে ইমন ভাইয়ের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় নিয়ে যায়। আসিফ আবার টনি, তাহসান এদেরও বন্ধু ছিল। ব্যান্ডের সূত্রপাতও ইমন ভাইয়ের বাসাতেই। উনার রুমেই আমাদের গান বাজনা চলতো।”

ব্ল্যাকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গিটারিস্ট জাহান

ইমন জুবায়েরের গীতিকবিতা সম্পর্কে জাহান বলেন, “উনার লিরিক্স ছিল বেশ ইউনিক। বাংলা গীতিকবিতায় অন্ত্যমিল দিয়ে লেখার যে ধারা তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তার কবিতাকে পোস্ট-মর্ডান বলা যায়। তার কবিতার উপর সুর বসিয়ে আমাদের গান হয়েছে। যেটা আমাদের ভিন্নতা দিয়েছে।”

জাহানের সাথে আলাপে জানা যায়, ইমন জুবায়েরের কবিতাগুলোয় উঠে আসতো একদিকে প্রকৃতি আর অন্যদিকে আধুনিক মানুষের টানাপোড়েন। আর এইসব নিয়েই গড়ে উঠতো ব্ল্যাকের গান।

গল্পে গল্পে খাদেমুল জাহান জানালেন আরও একটি তথ্য। ব্ল্যাকের প্রথম রেকর্ডিং এর জন্য অর্থ দিয়েছিলেন ইমন জুবায়ের। যদিও সেই গানটি কখনও প্রকাশিত হয়নি।

একটি দুর্ঘটনা এবং ইমরান আহমেদ চৌধুরী মবিন

ইমরান আহমেদ চৌধুরী মবিন ছিলেন দেশ সেরা শব্দ প্রকৌশলী। বহু ব্যান্ডের শব্দ প্রকৌশলের কাজটি মবিন করতেন। একটা সময় ছিল যখন ব্যান্ড অ্যালবাম মানেই তাতে অবধারিতভাবে থাকবে মবিনের নাম।

বাংলাদেশের কিংবদন্তী বহু ব্যান্ড লাইভ কন্সার্টে মবিনকে সাউন্ডের দায়িত্ব না দিয়ে মঞ্চেই উঠতে চাইতেন না।

একসময় লাইভ কনসার্টগুলোতে ব্ল্যাকেরও শব্দ প্রকৌশলের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন মবিন। কিন্তু সে দায়িত্ব খুব বেশিদিন পালন করা হয়নি এই মেধাবী প্রকৌশলীর। সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তার প্রাণ।

 

ইমরান আহমেদ চৌধুরী মবিন। ছবি-সংগৃহীত

ঘটনাটা ২০০৫ সালের। চট্টগ্রাম থেকে কনসার্ট শেষ করে ঢাকায় ফিরছে ‘ব্ল্যাক’। ব্যান্ড সদস্যদের সঙ্গে একই মাইক্রোবাসে ছিলেন মবিনও। গাড়ি যখন চৌদ্দগ্রামে, ঠিক তখন আচমকা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসটি সড়কের বাইরে ছিটকে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন মিরাজ। কিন্তু সদা হাস্যোজ্জ্বল মবিনকে আর বাঁচানো যায়নি।

১৯ বছর পর ব্ল্যাকের পুরোনো সদস্যরা ফিরতে যাচ্ছেন মঞ্চে। অথচ থাকবেন না তাদের প্রিয় ‘মবিন ভাই’।

ইমন জুবায়েরের নিয়ে বলতে গিয়ে জাহান এক পর্যায়ে ইমরান আহমেদ চৌধুরী মবিনের কথাও না বলে পারলেন না। আদতে এই দুই নাম ‘ব্ল্যাক’ ব্যান্ডের সঙ্গে মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে।

মবিনকে স্মরণ করতে গিয়ে জাহান বলেন, “আমরা তখন আমাদের প্রথম অ্যালবামের কাজ করছিলাম। ঠিক সে সময় ইসা খান দুরে ভাইয়ের সমন্বয়ে ‘ছাড়পত্র’ নামের মিক্সড অ্যালবামে আমাদের কাজ করার সুযোগ ঘটে। ওই অ্যালবামেই ২০০১ সালে আমাদের প্রথম গান ‘চেনা দুঃখ’ রিলিজ পায়। পরে দুরে ভাই আমাদের মবিন ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

“সাউন্ড গার্ডেনের শব্দ প্রকৌশলের কাজ করতেন ইমরান আহমেদ চৌধুরী মবিন ভাই। আমাদের (ব্ল্যাকের) দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ করতে গিয়ে মবিন ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। উনি আমাদের সিনিয়র মানুষ। ফলে একটু দূরত্বই ছিল শুরুতে। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি।”

ইমরান আহমেদ চৌধুরী সম্পর্কে জাহান দিলেন আরও কিছু তথ্য-

“মবিন ভাই একসময় উইনিং এর বেইজিস্ট ছিলেন। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর কথা যদি বলি তাহলে বলবো- মবিন ভাই ছিলেন দেশের সবচেয়ে নলেজেবল, স্মার্ট এবং এফিশিয়েন্ট সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। পরে তিনি আমাদের লাইভ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করতেন।”

জাহানের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল ব্ল্যাক পুরোনো লাইন আপ নিয়ে শেষ কনসার্টটি করে। কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সুলতানা কামাল মহিলা কমপ্লেক্সে।

নতুন ভোকাল ইশান : শ্রোতা থেকে মঞ্চে

ইশান হোসেন ২০২১ সাল থেকে ব্ল্যাকে ভোকাল হিসেবে পারফর্ম করছেন। যিনি একসময় ছিলেন এই ব্যান্ডের ফ্যান। ব্ল্যাকের কনসার্ট উপভোগ করতেন শ্রোতার সারিতে দাঁড়িয়ে। ১০ মে’র পুনর্মিলনী নিয়ে তাকে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত মনে হলো।

ইশান হোসেন। ছবি- সংগৃহীত

ইশানের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি বলেন, “আমি ব্ল্যাকের ফ্যান আগে, ভোকাল পরে। হতে পারে নিজের চেষ্টা কিংবা ভাগ্যের জোরে ব্ল্যাকে গান গাইছি।”

ব্ল্যাকের মতো প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে ইশান বলেন, “আমাকে শ্রোতারা খুব ইতিবাচকভাবে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যতবার পারফর্ম করেছি, ততবারই খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি যেটা বলার মতো নয়। ব্ল্যাকের গান দিয়েই আমার মিউজিকের যাত্রা শুরু হয়। আমার নিজেরও একটি ব্যান্ড ছিল। সে সুবাদে স্টেইজে পারফর্ম করা হতো। তাই ব্ল্যাকের ভোকাল হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।”

১০ মে, ২০২৪: রেজারেকশন অব ব্ল্যাক

বসুন্ধরার আইসিসিবি এক্সপো জোনে বসতে যাচ্ছে দেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর মিলনমেলা। এইদিন ব্ল্যাকের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেবে ক্রিপটিক ফেইট, অনি হাসান, পপাই, ফারুক ভাই প্রজেক্ট, রিকল এবং ওল্ড স্কুলের মতো ব্যান্ড ও শিল্পীরা। ফলে এই কনসার্ট রকপ্রেমীদের জন্য অনেকটা ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারার’ মতন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত