Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

উল্টো হাঁটা কেন উপকারী

retrowalking final
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

১৯ শতক জুড়ে ‘উল্টো হাঁটা’কে একটি অদ্ভুতুড়ে অভ্যাস বলেই মনে করতো লোকে। কিন্তু বর্তমান সময়ের গবেষণা বলছে, পেছনে হাঁটা শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।

১৯১৫ সালের গ্রীষ্মকাল। প্যাট্রিক হারমন নামের একজন ৫০ বছর বয়সী সিগারেট দোকানি ঝোঁকের মাথায় বাজি ধরে বসলেন যে, সামনের দিকে মুখ করে নয় বরং উল্টো হেঁটে সান ফ্রান্সিসকো থেকে নিউ ইয়র্ক যাবেন।

বুকে গাড়ির আয়না বেঁধে এক বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে ২৯০ দিনে ৩ হাজার ৯০০ মাইল উল্টো হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলেন হারমান। তিনি দাবি করেছিলেন, ওই ভ্রমণ তার গোঁড়ালি এতোই শক্তিশালী হয়েছিল যে, কেবল হাতুড়ি দিয়ে জোরে আঘাত করলেই ব্যথা পেতেন।

তার এই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

গবেষণা বলছে, পেছন ফিরে হাঁটা শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। সম্প্রতি এ নিয়ে বিবিসিতে প্রচারিতরা মাইকেল মোসলের পডকাস্টও বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে।

পেছন ফিরে হাঁটাকে অ্যাকাডেমিকভাবে ‘রেট্রো ওয়াকিং’ বলে। এ ধরনের হাঁটার ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ১৯ শতকের গোড়া থেকেই এ ধরনের  ‘পিছে হাঁটা’ নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদনও পাওয়া যায়। সেসব প্রতিবেদনে দেখা যায়, মানুষ কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত উল্টা হেঁটেছেন। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হুট করে বাজি ধরা কিংবা অদ্ভুত রেকর্ড করার ইচ্ছা থেকেই তখন মানুষ উল্টো হাঁটতো।

কিন্তু শরীরবিদ্যা বলছে, উল্টো হাঁটার কারণে উপকারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে ফিজিওথেরাপি অনেক ক্ষেত্রেই মেরুদণ্ডের ব্যথা কমাতে এভাবে হাঁটার পরামর্শ দেয়। হাঁটুর ব্যথা এবং গেঁটে বাতের ক্ষেত্রেও এটি উপকারী। কিছু গবেষণা এমনটাও বলছে, উল্টা হাঁটার কারণে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। কোনও ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও বেড়ে যায়।

উল্টো হাঁটার এ চর্চা প্রাচীন চীনেই শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই সময়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে পিছু হাঁটার ব্যাপারে গবেষখরা আবার নতুন করে মনোযোগী হয়েছেন। বিশেষ করে খেলাধুলার পারফর্মেন্স ভালো করা এবং পেশিকে শক্তিশালী করতে এটি বেশ কাজে দেয়।

ইউনিভার্সিটি অব নেভাডার বায়োমেকানিক্স বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জানেট ডুফেক উল্টো গতি নিয়ে ২০ বছর ধরে গবেষণা করছেন। তিনি ও তার গবেষক দল ১০ জন স্বাস্থ্যবান নারী শিক্ষার্থীর প্রতি গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, চার সপ্তাহব্যাপী প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট উল্টো হাঁটলে হ্যামস্ট্রিংয়ের পেশির শিথিলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পিঠের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে এটি স্থিরতা এবং অধিকতর নমনীয় করে তোলে।

ডুফেকের নেতৃত্বে ৫ জন অ্যাথলেইটের ওপর চালানো আরেক গবেষণার ফল বলছে, উল্টো হাঁটার কারণে তাদের ব্যাকপেইন বা পিঠে ব্যথা কমেছে।

কেবল অ্যাথলেইটরা নন, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, স্থুলতার সমস্যায় ভোগা মানুষ, আর্থাইট্রিস রোগী এমনকি স্ট্রোকের কারণে চলাফেরায় সমস্যা তৈরি হয়েছে- এমন ব্যক্তিরাও পিছু হাঁটার কারণে উপকার পান।

এছাড়াও, সোজা হাঁটার চেয়ে উল্টো হাঁটলে ক্যালরি খরচের পরিমাণ বেশি হয়।

উল্টো হাঁটার উপকারের নেপথ্য বিজ্ঞান

সামনের হাঁটা তুলনায় পিছু হাঁটার ব্যাপারটি কিছুটা আলাদা। যেমন পিছু হাঁটলে হাঁটুর নড়াচড়া কমে যায়। কাজেই হাঁটুর অস্ত্রপচার হয়েছে এমন ব্যক্তিরা উপকার পান।  

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, পেছনে হাঁটা পশ্চাৎদেশ ও হাঁটুর ওপর চাপ ব্যাপকভাবে কমায়। সামনে হাঁটা গোঁড়ালি থেকে শুরু হলেও, পিছু হাঁটলে চাপ পড়ে মূলত পায়ের অগ্রভাগে অর্থাৎ আঙুলে। আর এ কারণেই হাঁটুর ওপর চাপ কম পড়ার পাশাপাশি অন্য মাংসপেশিগুলো বেশি কাজ করে। গোঁড়ালির বদলে পায়ের পাতার ওপর চাপ পড়ায় এটি বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

মস্তিষ্কের ওপর পিছু হাঁটার প্রভাব নিয়ে একটি মজার গবেষণা হয়েছে। ৩৮ জন মানুষের ওপর একটি গবেষক ডাচ দল সেটি চালিয়েছিল। সামনে, পাশাপাশি এবং পিছু হাঁটিয়ে- তিন দলে অংশগ্রহণকারীদের ভাগ করা হয়েছিল।  

তাৎক্ষণিকভাবে সামনে লাল কালিতে ‘নীল’ শব্দটি লেখা হয়েছিল। যারা পিছু হেঁটেছিলেন তারা খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পেরেছিল, অর্থাৎ ‘নীল’ বলতে পেরেছিলেন।     

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মস্তিষ্কের যে অগ্রভাগ কাজ করে, উল্টো হাঁটলে সেই অংশটি বেশি কাজ করে।

আরেকটি গবেষণা বলছে, পিছু গতি- সেটি হতে পারে পিছু হাঁটা, ট্রেইনে ভ্রমণের সময় ভিডিও দেখা এবং এমনকি পেছনে গতির কল্পনাও- অংশগ্রহণকারীদের তথ্য মনে করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

তবে পিছু হাঁটার বিপদও রয়েছে। পিছু হাঁটতে গিয়ে কোনও কিছুতে বেঁধে পড়ে গেলে মারাত্মক আহত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। ফিজিওথেরাপি দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের দুর্ঘটনার উদাহরণ কম নয়।

তবে পিছু হাঁটার বিকল্প কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- চীনা শরীরবিদ্যার আর্ট তাইচি। চীনা গবেষকদের একটি দল বলছেন, উল্টা হাঁটার বিকল্প হতে পারে সাঁতার কিংবা তাইচি যা খেলোয়ারদের পিঠ ও মেরুদণ্ডের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত