Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিনকে পশ্চিমারা স্বীকৃতি দিলে কি গাজায় যুদ্ধ থামবে

জার্মানির বার্লিনে গত শুক্রবার হওয়ার কথা ছিল ফিলিস্তিন কনফারেন্স। পুলিশের বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত সম্মেলনটি হয়নি। তবে সম্মেলনে যোগ দিতে আগত অনেককে ফিলিস্তিনের পতাকা তুলে ধরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে দেখা গেছে। ছবি : এএফপি
জার্মানির বার্লিনে গত শুক্রবার হওয়ার কথা ছিল ফিলিস্তিন কনফারেন্স। পুলিশের বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত সম্মেলনটি হয়নি। তবে সম্মেলনে যোগ দিতে আগত অনেককে ফিলিস্তিনের পতাকা তুলে ধরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে দেখা গেছে। ছবি : এএফপি
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

বেশ কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্র সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তাদের অনেকে এই স্বীকৃতিকে গাজায় চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধের উপায় হিসেবেও দেখছে।

নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের নেতারা চলতি সপ্তাহের শুরুতে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি সম্মিলিত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য স্পেনের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।

আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও তাদের অনুসরণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি ফের সামনে আসে।

স্পেনের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে উদ্ধৃত করে চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা ও স্লোভেনিয়া মার্চের শেষদিকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল, তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত।

শুক্রবার ডাবলিনে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে দেখা করেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস। ওই বৈঠকের পর তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ড শিগগিরই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়। তবে এক্ষেত্রে স্পেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী তারা।

এর আগে একই দিনে সানচেজ নরওয়ের রাজধানী অসলোতেও ভ্রমণ করেছিলেন। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর বলেছিলেন, তার দেশও সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ডাবলিনে সংবাদ সম্মেলনে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস (বামে) স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ (ডানে)।

সানচেজ বলেছিলেন, স্পেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়। এর মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল সম্প্রতি বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে শান্তি স্থাপনে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের’ জন্য একযোগে এগিয়ে যেতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে মাত্র আটটি দেশ বর্তমানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৯টি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রও নতুন করে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছে।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় মৃত্যুর মিছিল, অনাহার এবং অবকাঠামোর ক্ষতির ফলে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পরিকল্পনা এসেছে।

গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের ফলে ইউরোপের আরও অনেক দেশই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। অনেক দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

বেলজিয়ামের মন্ত্রীরাও পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির সমর্থনে তাদের প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজায় বেসামরিক মানুষদের ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে একই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে।

যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তাদের নিয়ে একটি জোট গড়ে তোলার ব্যাপারে আয়ারল্যান্ড ও স্পেন বারবার তাদের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। তারা আগামী সপ্তাহেই ইউরোপীয় কাউন্সিলের সামনে বিষয়টি উত্থাপন করবে বলে জানিয়েছে।

শুক্রবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে দেখা করার পর আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, “আজ সন্ধ্যায় আমি বলতে চাই, আমাদের মূল্যায়ন হলো, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে এবং আমরা তা করতে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই।”

সানচেজ বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘকাল ধরে তাদের নিজস্ব দেশের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব চেয়েছে। তারা এমন একটি দেশ চায় যা আয়ারল্যান্ড ও স্পেনের মতো পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে নিজের স্থান করে নিতে পারবে।”

সানচেজ আরও বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক দেশগুলো উপযুক্ত পরিস্থিতিতে তাদের ঘোষণা দেবে এবং তারা নতুন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার ব্যাপারেও সমর্থন করবে।

শুক্রবার সানচেজের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস স্টোর বলেন, “নরওয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত আছে। তবে আমরা এর জন্য নিশ্চিত কোনও সময়সূচি নির্ধারণ করিনি।”

সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। গত নভেম্বরে নরওয়ের সংসদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাবও পাস করা হয়।

নরওয়ে ১৯৯০-র দশকের শুরুতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি আলোচনারও আয়োজন করেছিল, যার ফলে অসলো চুক্তির সই হয়েছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে স্পেন ও আয়ারল্যান্ড গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সবচেয়ে বড় সমালোচক হয়ে উঠেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার শাসকদল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে এই যুদ্ধ শুরু হয়। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, লাইভ মিন্ট

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত