Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরার নেপথ্যে কারা

বরিশালের মেঘনা ও কালাবদর নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
বরিশালের মেঘনা ও কালাবদর নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

বরিশালের মেঘনা ও কালাবদর নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইলিশ মাছের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য অধিদপ্তর।

নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাসে জেলেরা যাতে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরতে না পারেন, এজন্য পরিচালনা করা হচ্ছে যৌথ অভিযান।

কিন্তু অভিযানের মধ্যেও অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা থেমে নেই। এই চিত্র মেঘনা থেকে কালাবদর নদীর সর্বত্র দেখা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমনকি সংসদ সদস্যরাও মেঘনা ও কালাবদর নদীতে অবৈধভাবে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত।

এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা না গেলেও মৎস্য অধিদপ্তর সম্প্রতি নয়জন ব্যবসায়ীর তালিকা প্রকাশ করেছে, যারা জেলেদের মাছ ধরতে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন।

এই তালিকায় কবির বাগ নামে ভাসানচর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যও আছেন। বাকিরা হলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী ঘরামী, মো. দেলোয়ার, আলমগীর হাওলাদার, আলাউদ্দিন ফরাজী, সিদ্দিক দেওয়ান, আজিজুল মাতবর, জামাল মাতবর ও বজলু বিশ্বাস।

তারা মেঘনার বাখরজা, ভাসানচর ও দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবৈধভাবে মাছ ধরায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।    

মেঘনায় অবৈধভাবে ইলিশ ধরায় জড়িত আছেন জনপ্রতিনিধিরাও। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধির ভূমিকা বিপরীত হওয়া মোটেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক না কেন, পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল জেলার মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, দেশের ছয় জেলায় ইলিশের অভয়াশ্রম রয়েছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ অভয়াশ্রম বরিশাল জেলার হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা, সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া নদী মিলে ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।

এছাড়া ভোলা জেলার ৯০ কিলোমিটার ও পটুয়াখালী জেলার ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের ব্যাপক আনাগোনা আছে।

এসব অঞ্চলে দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সুযোগ পেলেই জেলেরা জাল ফেলছেন। ধরছেন জাটকা।

বরিশালের নদীতে অবৈধ মাছ শিকারের নেপথ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে দায়ী করেছেন নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হুমায়ূন কবির।

তিনি বলেন, “মেঘনার হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। এখানকার সংসদ সদস্য পংকজ নাথের সঙ্গে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শাম্মি আহমেদের বিরোধ কারও অজানা নয়। মেঘনা ও কালাবদরে অবৈধ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হলে পংকজ নাথ ও শাম্মি আহমেদ তাদের অনুগত ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালান।”

জনপ্রতিনিধি বা ব্যবসায়ী ছাড়াও মেঘনার জেলেদের আর্থিক অবস্থাও নিষেধাজ্ঞার সময় দেদারছে মাছ ‍শিকারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।         

জেলেরা কেন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে জাল ফেলছেন এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত বলেন, “পেটের তাগিদে তারা অবৈধ জেনেও এ কাজ করছেন। অধিকাংশ জেলেই নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকেন। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন জনাকয়েক মাছ ব্যবসায়ী। এর ফলে ইলিশের মৌসুম এলেও মাছের দেখা মেলে না।”

অপর্যাপ্ত রসদের মধ্যে চলছে যৌথ অভিযান। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

আশার কথা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে অপর্যাপ্ততা সত্ত্বেও অভিযান সফল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

গত বছরের চেয়ে এবার মৎস্য বিভাগ, প্রশাসন, নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের যৌথ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৯০টি অভিযান পরিচালনা করে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১৯২ জনকে দণ্ডিত করা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পাই জাল, মশারি ও বেহেন্দি জালও জব্দ করা হয়েছে।

নৌপুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ৪৬০ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে। এসময় ২২৬ মামলায় ১ হাজার ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত