হংকংয়ে সম্প্রতি প্রাণঘাতী বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক ব্যক্তি। শহরটির সেন্টার ফর হেলথ প্রোটেকশন (সিএইচপি) বিভাগ বলছে, এবারই প্রথম সেখানে অন্য কোনও প্রাণী থেকে মানবদেহে বি ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটল।
সিএইচপি শহরের বাসিন্দাদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে বন্য বানরকে স্পর্শ বা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এবিষয়ক নির্দেশিকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বানরকে খাওয়ালে অর্থদণ্ডের মতো বিধানও রাখা হয়েছে সেখানে।
হংকংয়ে বি ভাইরাস
গত ফেব্রুয়ারির শেষে ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হংকংয়ের কাম শান কান্ট্রি পার্কে বানরের হামলায় আহত হন। তবে ওই আঘাত কতটা গুরুতর ছিল তা জানা যায়নি। ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি।
গত ২১ মার্চ ইয়ান চাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে। শহরটির প্রশাসনের এক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি করার সময় ওই ব্যক্তির শরীরে সামান্য জ্বর ছিল।
গত বুধবার ও সিএইচপির ল্যাবে ওই ব্যক্তির মেরুদণ্ডের তরল নমুনার পরীক্ষায় বি ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তার অবস্থা বর্তমানে গুরুতর। তাকে হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হংকংয়ের কৃষি, মৎস্য এবং সংরক্ষণ বিভাগ বলছে, শহরটিতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ বন্য বানর রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ভিন্ন প্রজাতির ম্যাকাও বানর ও তাদের সংকরজাতভুক্ত। অন্য প্রাণী থেকে মানবদেহে রোগের সংক্রমণকে জুনোটিক স্পিলওভার বলা হয়। বি ভাইরাসের এই ঘটনাটি জুনোটিক স্পিলওভারের অন্যতম উদাহরণ।
বি ভাইরাস কী
বি ভাইরাস সিমিয়ি ভাইরাস নামেও পরিচিত। এতে আক্রান্ত হলে অন্য সাধারণ ফ্লুর মতো জ্বর, ক্লান্তি, পেশীতে ব্যথা ও মাথাব্যথা হয়। লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের এক মাসের মধ্যেই প্রকাশ পায়। তবে ব্যতিক্রম তিন থেকে সাতদিনের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও বমি হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ফোস্কাও দেখা দিতে পারে। ভাইরাস ক্রমশ মস্তিস্ক ও মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে। এটি পেশীর দুর্বলতা, মস্তিস্কের ক্ষতি ও মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
ভাইরাসটি পরীক্ষা করা যায় লালা অথবা ফোস্কা (যদি থাকে) থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বি ভাইরাস পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষার মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, বি ভাইরাস মানুষের জন্য মারাত্মক না হলেও শিম্পাঞ্জি ও ক্যাপুচিন বানরসহ অন্যদের জন্য প্রাণঘাতী। ১৯৩২ সালে ভাইরাসটি আবিষ্কারের পর এতে প্রায় ৫০ জন মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। আর এদের মধ্যে ২১ জনই মারা গেছেন।
অতীতের গবেষণা বলছে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে বি ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
কীভাবে ছড়ায়
সিডিসির মতে, মানুষের ক্ষেত্রে বি ভাইরাস ম্যাকাও বানর থেকে সংক্রমিত হয়। বানরগুলো এই ভাইরাসের বাহক হলেও সাধারণত তাদের মধ্যে এর কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। এদের লালা, প্রস্রাব ও মলে ভাইরাসটি থাকে। হংকংয়ে এ জাতের বানরের সংখ্যা অনেক।
ম্যাকাও বানর আচড়ালে বা কাটা-চুলকানোর ফলে ত্বকে ফাটল থাকলে বানরের টিস্যু বা তরল প্রবেশের মাধ্যমে মানুষ বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
শিম্পাঞ্জিসহ অন্য প্রাণীও বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং প্রায়ই এতে মারা যায়। তবে এখন পর্যন্ত এদের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি।
সিএইচপি বলছে, বানরের কামড় বা আচড়ে ক্ষত হলে সেই জায়গা দ্রুত ধুয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আর সিডিসি বলছে, ক্ষতস্থান পনেরো মিনিট ধরে সাবান, ক্ষারযুক্ত পদার্থ বা আয়োডিন দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে। এরপর ক্ষতটিকে আরও পনেরো থেকে বিশ মিনিট পানির ধারার নিচে ধরে রাখতে হবে। এরপরই যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
সংক্রমণ কী নিরাময়যোগ্য
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বি ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা বা আক্রান্তদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসা হিসেবে কাজে লাগে। তবে সবকিছু নির্ভর করে আক্রান্ত হওয়ার কত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হচ্ছে এর ওপর।
তথ্যসূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, আল জাজিরা