Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

কেন এখনও ‘স্পাইস গার্লস’ খবরের শিরোনাম

স্পাইস গার্লস এর সদস্যরা। ছবি- এক্স
স্পাইস গার্লস এর সদস্যরা। ছবি- এক্স

জনপ্রিয় পপ ব্যান্ড ‘স্পাইস গার্লস’ এর পাঁচ সদস্যকে আবারও দেখা গেল এক মঞ্চে। তবে এবার কোনও কনসার্টে নয়।

মেলানি ব্রাউন, এমা বান্টন, গেরি হর্নার এবং মেলানি চিশল্ম, ব্যান্ডের আরেক সদস্য ভিক্টোরিয়া বেকহামের ৫০ তম জন্মদিন উদযাপন করতে গত ২০ এপ্রিল একত্রিত হয়েছিলেন লন্ডনে। যারা মঞ্চে পশ, স্ক্যারি, বেইবি, জিঞ্জার এবং স্পোর্টি স্পাইস নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। বহুদিন পর নব্বই দশকের সঙ্গীত জগতের এ পাঁচ তারকার মিলন স্বভাবতই বিনোদন জগতের জন্য বেশ বড় খবর ছিল।

তাদের জন্মদিন উদযাপন দেখে মনে হচ্ছিল- যেন ঠিক ১৯৯৭ এর কোনও কনসার্টে তারা ফিরে গিয়েছেন।

মেফেয়ারে অসওয়াল্ডের প্রাইভেট মেম্বার ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই জন্মদিনের পার্টিতে বসেছিল তারার মেলা। পার্টিতে দেখা যায় টম ক্রুজ, সালমা হায়েক, রোজি হান্টিংটন-হোয়াইটলি এবং গর্ডন রামসে-এর মতো সেলিব্রিটিদের।

‘স্পাইস গার্লস’ সদস্যরা নেচে গেয়ে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার বেকহাম এর পত্নী ভিক্টোরিয়া বেকহামের জন্মদিন উদযাপন করেন। মাইক্রোফোন ছাড়াই নিজেদের গানে তারা ঠোঁট মেলান। সবাই মিলে নাচেন সেই ৯০ এর মঞ্চ কাঁপানো দিনগুলোর মতোই।

এর আগে ‘স্পাইস গার্লস’ সদস্যদের একসঙ্গে পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। সে বছর তারা আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে কনসার্ট করেছিলেন। যদিও সেবার ভিক্টোরিয়া বেকহাম অংশ নিতে পারেননি।

২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের সমাপনীতে পারফর্ম করে এই গ্রুপটি। সেবার প্রত্যেক সদস্যকেই মঞ্চে গান গাইতে দেখা যায়।

যেভাবে গড়ে উঠেছিল স্পাইস গার্লস

নব্বই দশকের জনপ্রিয় পপ ব্যান্ড ‘স্পাইস গার্লস’ এর গড়ে ওঠার গল্পটা অবশ্য একটু অন্য রকম।

১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিনোদন প্রতিষ্ঠান হার্ট ম্যানেজমেন্ট নারী শিল্পীর খোঁজে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের লক্ষ্য ছিল মেয়েদের একটি পপ ব্যান্ড গড়ে তোলা। বিজ্ঞাপন দেখে অডিশন দেয় অনেকেই। আর অডিশন থেকে বাছাইকৃত মেয়েদের নিয়েই গড়ে তোলা হয় ‘স্পাইস গার্লস’।

আর এই মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি গোটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফেলে হার্ট ম্যানেজমেন্ট। এরপর দিন-রাত চলে অক্লান্ত পরিশ্রম। মেয়েরা নিজেরাই লিখতে থাকে গান। পাশাপাশি চলতে থাকে সুর দেওয়া আর নাচের রিহার্সেল। তাদের গড়ে তোলার অংশ হিসেবে চলতে থাকে ডামি পারফর্ম্যান্স। তাতে দর্শক হিসেবে অংশ নিত মিউজিক ইন্ডস্ট্রির বাছাইকৃত লোকজন।

এভাবেই গড়ে ওঠে কিংবদন্তী ব্যান্ড ‘স্পাইস গার্ল’। যাদের নাম মনে এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্ল্যাটফর্ম বুট, সপ্রতিভ পারফরম্যান্স আর আপবিট মিউজিক। গোটা ৯০ দশক সারাবিশ্বের পপ সঙ্গীতপ্রেমীরা যেন ‘স্পাইস গার্ল’ জ্বরে ভুগছিল।

কিন্তু কেন এতো জনপ্রিয় ছিল স্পাইস গার্লস?

‘নারী শক্তি’র উদযাপন

স্পাইস গার্লস সারা বিশ্বে রাজত্ব করে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল- এই চারবছর। এরপরেও, আরও বছর পাঁচেক সঙ্গীত জগতে তাদের আধিপত্য ছিল। ১৯৯৬ সালে তাদের প্রথম প্রকাশিত অ্যালবাম ‘স্পাইস’ সারাবিশ্বে ২৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। ‘নারী স্বাধীনতা’ এবং ‘নারী শক্তি’র পশ্চিম সমর্থিত ধারণাগুলো তাদের গানের মধ্য দিয়ে প্রচারিত হতে থাকে। যার কেন্দ্রে ছিল যৌনাবেদন। ফলে বিশ্বব্যাপী উঠতি কিশোরী এবং তরুণীরা তাদের গানে প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়।  

গান, শুধুই গান নয়

শুধুই কি গান দিয়ে এমন আকাশ্চুম্বী জনপ্রিয়তা? একেবারেই না। ‘স্পাইস গার্লস’ ব্যান্ডের প্রতিটি সদস্যের ছিল উল্লেখযোগ্য এবং চোখে পড়ার মতো ব্যক্তিত্ব। আর তাদের স্টাইল?

সে সময়ের সেরা মডেলরাও তাদের স্টাইলের কাছে ছিল কুপোকাত।   

এজেন্সি পরিচালিত পপ ব্যান্ডগুলোর মধ্যে ‘স্পাইস গার্লস’ লিরিকের কারণে ছিল অনন্য। যে গানটি দিয়ে তাদের উত্থান (ওয়ানাবি) সেই গানটির দিকেই একটু তাকানো যাক-

“ইফ ইউ ওয়ানা বি মাই লাভার
 ইউ হ্যাভ গট টু গিভ
 টেকিং ইট টু ইজি, বাট দ্যাটস দ্য ওয়ে ইট ইজ…”

অথবা
“ইয়ো, আই উইল টেল ইয়্যু হোয়াট আই ওয়ান্ট
হোয়াট আই রিয়েলি রিয়েলি ওয়ান্ট
সো টেল মি হোয়াট ইয়্যু ওয়ান্ট
হোয়াট ইয়্যু রিয়েলি রিয়েলি ওয়ান্ট…”

গানে নারীদের এমন সোজা সরল চাওয়া পাওয়ার কথা সে সময়ের প্রেক্ষাপটেও বিরলই বলা যায়। যা কিনা সারা বিশ্বের তরুণ- তরুণিদের আকৃষ্ট করে। আর কথাগুলো যেন খুবই অকৃত্রিম। ফলে ‘ওয়ানাবি’ গানটি পপ গানে নারীর চিরাচরিত ইমেজকেও সে সময় ভেঙ্গে দিয়েছিল।  

বয়ে চলা উত্তরাধিকার
‘স্পাইস গার্লস’ না থেকেও যেন আছেন। বর্তমান সময়ের নারী পপ শিল্পীদের গানগুলো একটু মন দিয়ে শুনলেই টের পাওয়া যাবে না থেকেও থাকা যায় কতটা! কেবল সুর দিয়েই যে তারা প্রভাবিত করেছেন এমন নয়, ফ্যাশনেও আছে তাদের যথেষ্ট প্রভাব। এ সময়ের বেশ কিছু শিল্পীর কস্টিউম এর দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়।

আজকের কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির মেয়েদের পপ গ্রুপগুলোর কথা তো বাদ, টেইলর সুইফট থেকে লেডি গাগা হয়ে দুয়া লিপা পর্যন্ত পাওয়া যায় তাদেরই ছাপ। এমন প্রভাব বিস্তারকারী পপ ব্যান্ড জনপ্রিয় তো হবেই!   

যে বিচ্ছেদে হয় ইতিহাস

হার্ট ম্যানেজমেন্টের উদ্যোগে ‘স্পাইস গার্লস’ এর যাত্রা শুরু হলেও সে যাত্রা বেশিদিন টেকেনি। ১৯৯৫ সালেই এই এজেন্সির সাথে সকল সম্পর্ক চুকে দিয়ে স্বাধীন পপ ব্যান্ড হিসেবে কাজ শুরু করে তারা। হার্ট ম্যানেজমেন্টের রয়ে সয়ে চলা নীতিতে আস্থা রাখতে পারছিল না ব্যান্ডের সদস্যরা। ততোদিনে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির নানা অলিগলিও চেনা হয়ে গেছে তাদের। তাই এজেন্সির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে একলা চলো মন্ত্রে বেরিয়ে পড়ে মেয়েরা।

তার ঠিক পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে তাদের ডেব্যু অ্যালবাম ‘স্পাইস’ গড়ে ইতিহাস।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত