Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

কলাম

সবচেয়ে কম মজুরির ফাঁদে আটক শ্রমিকদের কথা

নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩২ শতাংশ নারী। স্বল্প মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানি নারী শ্রমিকদের জন্য নতুন ধরনের সংকট তৈরি করছে। আলোকচিত্র: হারুন-অর-রশীদ।

আজ থেকে ১৩৮ বছর আগে ৮ ঘণ্টা কাজ, বিনোদন ও বিশ্রামের দাবি নিয়ে শিকাগোর হে মার্কেটে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয়েছিল তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। আন্দোলন ও জীবনদানের মধ্য দিয়ে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল যে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত নয় কর্মদিবস হবে ৮ ঘণ্টা। কিন্তু যে দাবি উঠেছিল ১৮৮৬ সালের আগে সে দাবিতে আজও আন্দোলন করতে হচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে।

১৮৮৬ সালের পর পৃথিবীর ইতিহাস পাল্টেছে, পাল্টে গেছে রাষ্ট্রের সীমানা, বিশ্ব রক্তাক্ত হয়েছে দুটো বিশ্বযুদ্ধে, ‘আইএলও’ গড়ে উঠেছে ১৯১৯ সালে এবং স্বীকৃতি দিয়েছে ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের, ১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় স্বীকৃতি আছে কিন্তু তারপরও বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিকদের লড়তে হচ্ছে ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবিতেই শুধু নয়, এই দাবির যে মূল প্রাণ সেই ন্যায্য মজুরির দাবিতে।  

মানুষের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সবই সৃষ্টি হয় মানুষের শ্রমে। প্রকৃতিতে যা যেভাবে আছে সব কিছু সেভাবেই মানুষ ব্যবহার করে না। তাকে ব্যবহার উপযোগী করে নিতে হয়। ব্যবহার উপযোগী করে নেওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক এবং মেধাগত শ্রম ব্যবহার করেই মানুষের সভ্যতা এগিয়েছে। সাধারণভাবে তাই বলা যায় প্রকৃতির সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষমতা যে সমাজ যত অর্জন করেছে সে সমাজ তত উন্নত, সে সমাজে মানুষের জীবন তত সহজ এবং স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠে। কিন্তু এখানেই একটা বৈপরীত্য কাজ করছে। যারা জীবিকার প্রয়োজনে নিজেদের শ্রমশক্তি ব্যবহার করে তাদেরকে বলা হয় শ্রমিক। এইসব শ্রমিক, যাদের শ্রমে জীবনযাত্রা সহজ হয়ে উঠে তাদের জীবন যাপন কিন্তু ততটা সহজ হয় না।

শ্রমিকের মজুরি এত কম দেওয়া হয় যে আট ঘণ্টা তো বটেই ওভারটাইম না করলে তাদের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন। ১৩৮ বছর আগে শ্রমিকরা দাবি করেছিল আট ঘণ্টা কর্ম দিবসের। অথচ এখন শ্রমিকরাই ওভার টাইম করতে চায়। এর কারণ নিহিত আছে স্বল্প মজুরির ফাঁদে। মজুরি কম বলে অতিরিক্ত খাটতে হয়, অতিরিক্ত পরিশ্রম করে বলে সে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পায় না আর দক্ষতা কম বলে তার মজুরি কম। এ এক দুষ্ট চক্রে আটকা পড়েছে শ্রমিক।

যেমন কৃষকের শ্রমের ফলে খাদ্য পাওয়া সহজ কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের দুর্দশা কাটে না। পোশাক শ্রমিকের কারণে পোশাক পাওয়া সহজ, পরিবহন শ্রমিকের কারণে যাতায়াত করা সহজ, নির্মাণ শ্রমিকের কারণে বসবাস করা সহজ, প্রকাশনা খাতের শ্রমিকদের কারণে জ্ঞান বিজ্ঞানের তথ্য পাওয়া সহজ। এমনি নানা ক্ষেত্রে শ্রমিকের শ্রম সমাজের সকল মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও উন্নত করলেও ন্যায্য মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা থাকছে অবহেলিত, তাদের জীবন উন্নতির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত।

স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রচন্ড তাপে রি-রোলিং মিলে কর্মরত শ্রমিকরা। আলোকচিত্র: হারুন-অর-রশীদ।

পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক শ্রমশক্তির বিনিময়ে পায় মজুরি। মজুরি দিয়েই সে তার জীবনের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে। সে যেসব পণ্য ব্যবহার করে তাও আবার অন্য শ্রমিকের শ্রমের ফলেই সৃষ্ট। ফলে বিনিময় প্রথায় শ্রমিক যেমন উৎপাদক তেমনি শ্রমিক আবার ভোক্তাও। শ্রমশক্তি বিক্রি করে শ্রমিক যেমন মজুরি পায় তেমনি তার শ্রমশক্তি কিনে মালিক পায় মুনাফা। ফলে মজুরি ও মুনাফার দ্বন্দ্ব চলছেই। বেশি সময় কাজ, উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার, আধুনিক ব্যবস্থাপনা যেমন উৎপাদন বাড়ায় তেমনি বাড়ায় মালিকের মুনাফা। সে কারণে সামন্ত সমাজে একজন রাজা বাদশা যে পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিলেন পুঁজিবাদে একজন মালিক তার চেয়ে বহুগুণ সম্পদের অধিকারী। এই সম্পদের বৈষম্য যে বেদনা ও বিক্ষোভের জন্ম দেয় সেখান থেকেই শ্রমিক আন্দোলনের শুরু। মুষ্টিমেয় মালিকের বিরুদ্ধে অসংখ্য শ্রমিকের এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত, অসংগঠিত এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বারবার। শ্রমিক আন্দোলনকে সংগঠিত এবং লক্ষ্যাভিমুখী করার জন্যই ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠে।

তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা। আলোকচিত্র: হারুন-অর-রশীদ।

কিন্তু বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়নের বর্তমান ভূমিকা দেখে এই প্রশ্ন জেগে উঠা স্বাভাবিক যে, ট্রেড ইউনিয়ন কি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে? স্বাধীনতার আগে শ্রমিক আন্দোলন এবং দাবি আদায়ের ইতিহাস দেখলে দেখা যায় তখন শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের নেতারা। মওলানা ভাসানীসহ অনেক নেতা সরাসরি শ্রমিক বিক্ষোভ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটানা ৬৬ দিন ধর্মঘট করে পাটকল শ্রমিকদের দাবি আদায় করেছেন, ঘেরাও আন্দোলন করে প্রফেট অফ ভায়লেন্স আখ্যা পেয়েছেন কিন্তু দালালীর দুর্নাম গায়ে লাগতে দেন নাই। শ্রমিকের মজুরি ও মর্যাদার লড়াই সংগঠিত করেছেন কিন্তু নিজেদের সম্পদ ও সুবিধা বৃদ্ধির কাজ করেন নাই।

এই শ্রমিক আন্দোলন যে শোষণ বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি করেছিল তার ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধে শ্রমিকের বিপুল অংশ গ্রহণ ঘটেছিল। স্বাধীনতার আগে শ্রমিকদের দাবি উচ্চকিত হয়েছিল—‘‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না’’-এর মতো শোষণ বিরোধী স্লোগানে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ স্বাধীনতার যে ইস্তেহার পাঠ করা হয় সেখানে শ্রমিকরাজ, কৃষকরাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর যত সময় গড়িয়েছে ততই শ্রমিকদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।

বাংলাদেশ এক অর্থে শ্রমিকের দেশ। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি আর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ৩৬ লাখ। নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩২ শতাংশ নারী। স্বল্প মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানি নারী শ্রমিকদের জন্য নতুন ধরনের সংকট তৈরি করছে।

আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অনেক বেশি উৎপাদন করা যায় যার ফলে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কমানো সম্ভব। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। শ্রমিকের মজুরি এত কম দেওয়া হয় যে আট ঘণ্টা তো বটেই ওভারটাইম না করলে তাদের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন। ১৩৮ বছর আগে শ্রমিকরা দাবি করেছিল আট ঘণ্টা কর্ম দিবসের। অথচ এখন শ্রমিকরাই ওভার টাইম করতে চায়। এর কারণ নিহিত আছে স্বল্প মজুরির ফাঁদে। মজুরি কম বলে অতিরিক্ত খাটতে হয়, অতিরিক্ত পরিশ্রম করে বলে সে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পায় না আর দক্ষতা কম বলে তার মজুরি কম। এ এক দুষ্ট চক্রে আটকা পড়েছে শ্রমিক।  

ব্রিটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত শ্রম আইন, পাকিস্তান শাসনামলে প্রবর্তিত আইন ও অধ্যাদেশ সত্ত্বেও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনা এত কঠিন ছিল না যতটা বর্তমানে হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক নেতাদের ক্ষমতাসীনদের অনুগ্রহ পাওয়ার প্রতি মোহ এবং ক্ষমতাসীনদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া। শ্রম আইনে বিশেষ খাতকে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে বিরত রাখা এবং দেশের বিশেষ অঞ্চল যেমন ইপিজেড, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে শ্রম আইনের আওতা বহির্ভূত রাখার কারণে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে উঠছে না বটে, কিন্তু শ্রমিক বিক্ষোভ ও অসন্তোষের ঘটনা ঘটছে। 

দেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারাই আসীন হচ্ছে তারাই যেমন ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে তাদের অনুগত করে রাখছেন তেমনি শ্রমিক রাজনীতি হারাচ্ছে তার মর্যাদা। স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শুধু পুঁজিপতি শ্রেণি ক্ষমতায় এসে শোষণকে নিরাপদ রাখতে শ্রমিক আন্দোলনকে ক্ষমতাহীন করে রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। শ্রমিক নেতাদের কেউ কেউ মন্ত্রী হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন কিন্তু স্বার্থ রক্ষা করেছেন মালিকদের। এ ঘটনা স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে এবং সামরিক বেসামরিক সকল সরকার এই পথে হেঁটেছে।

পুঁজিবাদ শক্তিশালী হওয়ার ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিস্তার ঘটেছে দ্রুতগতিতে। দেশের ৮৮ শতাংশ শ্রমিক কাজ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই, মজুরিও কম। ফলে সব আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের গড় মজুরি শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয় বরং আফ্রিকাসহ পুরো পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। অথচ আমাদের দেশে ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। শ্রমিকের নিম্ন মজুরি মালিকদের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার সুযোগ তৈরি করেছে, যার ফলে শুধু ধনবৈষম্য ও আয়বৈষম্যই তৈরি হয়নি বিপুল অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে।

বাংলাদেশ এক অর্থে শ্রমিকের দেশ। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি আর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ৩৬ লাখ। নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩২ শতাংশ নারী। স্বল্প মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানি নারী শ্রমিকদের জন্য নতুন ধরনের সংকট তৈরি করছে।

পুঁজিবাদ শক্তিশালী হওয়ার ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিস্তার ঘটেছে দ্রুতগতিতে। দেশের ৮৮ শতাংশ শ্রমিক কাজ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই, মজুরিও কম। ফলে সব আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের গড় মজুরি শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয় বরং আফ্রিকাসহ পুরো পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। অথচ আমাদের দেশে ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। শ্রমিকের নিম্ন মজুরি মালিকদের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার সুযোগ তৈরি করেছে, যার ফলে শুধু ধনবৈষম্য ও আয়বৈষম্যই তৈরি হয়নি বিপুল অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে।

শ্রমিকের জীবন যাপনের প্রয়োজন মেটানোর চাইতেও কম মজুরি এবং অনিয়ন্ত্রিত মুনাফা তৈরি করেছে বৈষম্য ও শোষণের এক অন্যায্য সমাজ। ফলে এটা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট যে যত মাথাপিছু আয় আর জিডিপি যতই বাড়ুক না কেন, এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি শ্রমজীবীদের দারিদ্র্য দূর করতে পারছে না। উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও মজুরি না বাড়ার অর্থ বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলা। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে এবং অপরাপর জীবনযাপন খরচ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে গড় মূল্যস্ফীতি হিসেব করলে দেখা যায় পাঁচ বছরে শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ। কিন্তু এই শ্রম শোষণ ও বৈষম্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও দুর্বল শ্রমিক আন্দোলনের কারণে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। মাঝে মাঝে মজুরির দাবিতে শ্রম অসন্তোষ হলেও কার্যকর শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে না। এর অন্যতম প্রধান কারণ শ্রমিক আন্দোলনে সমাজ পরিবর্তনের ধারার দুর্বলতা এবং মালিকদের দেওয়া সুবিধার হাতছানিতে প্রলুব্ধ হওয়া।

অন্যদিকে নতুন ধরনের শ্রম খাত গড়ে উঠছে এবং শিল্প খাতের তুলনায় বাণিজ্যিক সেবা খাত অনেক বড় হয়ে উঠছে। ফলে পুরনো ধারার ট্রেড ইউনিয়ন এর সাথে তাল মিলাতে পারছে না। প্লাটফর্ম ইকনমি, গিগ ইকনমি, আউট সোর্সিং এর ফলে স্থায়ী শ্রমিক বলতে কিছু থাকছে না। চুক্তি ভিত্তিক কাজ, পিস রেটে কাজ এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঘণ্টা ভিত্তিক কাজের কারণে থাকছে ৮ ঘণ্টা কাজের নিশ্চয়তা। ফলে শ্রমিকের কাজের চাপ বাড়ছে কিন্তু সে পড়ছে উপায়হীন হয়ে। 

বাচ্চাকে পাশে রেখে ইট ভাঙার কাজ করছে এক নারী শ্রমিক। আলোকচিত্র: হারুন-অর-রশীদ।

ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে আইনের বাঁধা এবং শ্রমিকদের জীবিকার অনিশ্চয়তার সাথে বেকারত্ব ও কাজের সন্ধানে দেশত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধিও শ্রমিক আন্দোলনকে কঠিন করে তুলেছে। সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুপস্থিতির কারণে। 

কিন্তু বঞ্চনা বিচ্ছিন্নতাই তো শেষ কথা নয়, অধিকারের জন্যে শ্রমিক পথে নামবেই এবং সেখান থেকেই গড়ে উঠবে নতুন ধারার ট্রেড ইউনিয়ন। এক্ষেত্রে শুধু কর্মঘণ্টা নয়, ন্যায্য মজুরির আন্দোলন শক্তিশালী করতে হলে শ্রমিককে বুঝতে হবে কতখানি শ্রম দিয়ে বিনিময়ে সে কত পায়? মজুরি মালিকের কোনও দয়া নয় এটা শ্রমিকের অর্জন বরং মজুরি কম দিলেই মালিকের মুনাফার জন্ম হয়। শ্রমিককে বুঝতে হবে তার শ্রমে কতটুকু মূল্য সংযোজিত হয়, উদ্বৃত্ত মূল্য কার ঘরে জমা হয়, রাষ্ট্র এবং মালিকের সম্পর্ক কি ? মালিক অদৃশ্য মনে হলেও মালিকানা ব্যবস্থার জালে সে কিভাবে আটকে আছে। ফলে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস, ন্যায্য মজুরি আর ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মাধ্যমে শোষণমুক্তির পথে হাঁটতে হবে। আর এক্ষেত্রে মে দিবসের চেতনা তার পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে।

লেখক: সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাসদ।
ইমেইল: rratan.spb@gmail.com

রাজেকুজ্জামান রতন। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার।
ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত