Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

প্রয়োজন ২ হাজার কোটি, আছে ১৪০০ কোটি টাকা

সংসদ
জাতীয় সংসদ ভবন

অবসরের পর প্রাপ্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের। দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এর বাইরে নন। প্রায়ই দেখা যায়, অবসর সুবিধা পেতে অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে, এমন খবরও প্রকাশ হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য বছরে গড়ে প্রয়োজন দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা।  কিন্তু এ খাতে পাওয়া যায় ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিবছরই ঘাটতি থাকে ৫৬৪ কোটি টাকা।

বৈঠকে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার অনিষ্পন্ন আবেদন নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পেতে বছরে গড়ে ১৬ হাজার ৮০০ আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পত্তির জন্য বছরে প্রয়োজন ৭২০ কোটি টাকা। এমপিও থেকে ৪ শতাংশ হারে আয় থেকে বছরে ৫৭৬ কোটি টাকা ও ব্যাংক সুদ থেকে বছরে ২৪ কোটিসহ বছরে আয় হয় ৬০০ কোটি টাকা।

এরপরও শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা দিতে বছরে ঘাটতি থাকে ১২০ কোটি।

এছাড়া অবসর সুবিধা বোর্ডের ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

এ খাতে বছরে প্রায় ১০ হাজার ৮০০টি আবেদন পড়ে। এগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন এক হাজার ৩২০ কোটি টাকা। শিক্ষকদের এমপিও থেকে বছরে আয় হয় ৮৪০ কোটি ও ব্যাংক এফডিআর থেকে আয় হয় ৩৬ কোটি টাকা। বছরে ঘাটতি থাকে ৪৪৪ কোটি টাকা।

বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের মত শিক্ষকদেরও বার্ষিক বেতন প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে এ দুটি খাতে ঘাটতি আরও বাড়ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের অনিষ্পন্ন ৬১ হাজারের বেশি আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সংসদীয় কমিটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এসব অনিষ্পন্ন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার আবেদন সময়মতো নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা সচিব সোলায়মান খান নিজেই প্রসঙ্গটি তোলেন।

সচিব বলেন, বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা খাতে বছরে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তার আবেদন নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে অর্থাভাবে প্রায় ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রয়োজন। কল্যাণ ট্রাস্টে অনিষ্পন্ন ২৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ২ হাজার কোটি ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলেও তিনি কমিটিতে জানান। পরে তিনি এ বিষয়ে কমিটির সহায়তা কামনা করেন।

কমিটির সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বলেন, “চাকরি শেষে যে অবসর সুবিধা পাওয়ার কথা সেটাও যথাসময়ে না পাওয়ায় তারা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হন। এমন কী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় অবসর সুবিধা ভোগ না করেই অনেকে মৃত্যুবরণ করেন।”

এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বাহাউদ্দিন নাছিম দেশে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেন। তিনি ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়েও কথা বলেন।

কমিটির সদস্য আহমদ হোসেনও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা দ্রুত নিরসনের প্রস্তাব করেন।

পরে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের অনিষ্পষ্ট আবেদন দ্রুত নিষ্পন্ন করার সুপারিশ করা হয় বৈঠক থেকে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজারের বেশি মামলা

বর্তমানে দেশে ২৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (এমপিওভুক্ত) রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলেন, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, দলাদলি, জমিজমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে বেশিরভাগ মামলা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজারের বেশি মামলা চলমান। যে কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।”

বুধবারের বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে অনিষ্পন্ন আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য ও সৃষ্ট পদ খালি রয়েছে তা দ্রুত পূরণ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার, মো. মোতাহার হোসেন, মো. আবদুল মজিদ, আহমদ হোসেন, মো. বিপ্লব হাসান এবং মো. আজিজুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত