Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার শিবচর স্টাইল

শিবচরের নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বি এম আতাউর রহমান আতাহার, চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান আয়শা সিদ্দিকা।
শিবচরের নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বি এম আতাউর রহমান আতাহার, চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান আয়শা সিদ্দিকা।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সব পদেই ছিলেন একাধিক প্রার্থী। তবে একে একে সব পদে একজন বাদে অন্যরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে সেখানে ভোটের প্রয়োজন আর পড়ল না।

এই উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা তিনজনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।

‘ডামি’ প্রার্থীদের এক যোগে মনোনয়ন প্রত্যাহারের এই ঘটনা শিবচরজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য এসেছে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদের ষষ্ঠ নির্বাচনে কয়েক ধাপে করছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে যে ১৪৮ উপজেলায় আগামী ৮ মে ভোট হবে, তার মধ্যে শিবচরও রয়েছে।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।

প্রথম ধাপের ১৪৮ উপজেলায় সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ইসির তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল করা ১৯৮ জন ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

এরমধ্যে শিবচরে তিন পদে সব ক’টিতেই একক প্রার্থী হওয়ায় মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাদের সবাইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এই উপজেলায় চেয়ারম্যান হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া। নারী ভাইস চেয়ারম্যান হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম নাসিরুল হকের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা। ভাইস চেয়ারম্যান হলেন কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বি এম আতাউর রহমান আতাহার। তিনি আগেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, তিন পদে তিনজন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় এই উপজেলায় আর নির্বাচন হচ্ছে না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা সবাই নির্বাচিত হলেন।

অথচ মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর তিন পদের সব ক’টিতেই দুজন করে প্রার্থী ছিলেন।  

চেয়ারম্যান পদে সেলিম মিয়ার ‘ডামি’ প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তার স্ত্রী বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার।

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আয়শা সিদ্দিকার ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তার মেয়ে শিফাতুন হক।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে আতাউর রহমানের ‘ডামি’ প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তার ব্যবসায়িক অংশীদার, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান।

এরা তিনজনই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

‘ডামি’ প্রার্থী কৌশল নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শিবচরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ওখানে বিরোধী দল নেই বললেই চলে। যারা আছে, তাদের মধ্যে নির্বাচন করার মতো কোনও ভালো প্রার্থী বা নেতাও নেই। যদি কোনও কারণে মূল প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে সমস্যা হয়, তাই ডামি প্রার্থী রাখা হয়েছিল।”

শিবচরের সংসদ সদস্য নূর-ই আলম চৌধুরী বর্তমানে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ। এখানে আওয়ামী লীগের সব সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়েই হয় বলে দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নেতা জানান।

শিবচরবাসীর এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ ঘটছে না দেখে হতাশা প্রকাশ করেন মাদারীপুরের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইব্রাহিম মিয়া।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের দেশে নির্বাচন একটি উৎসব। একাধিক প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট হলে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারেন।

“কিন্তু ডামি প্রার্থী রেখে বা সিন্ডিকেট করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়, যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।”

একই রকম মন্তব্য করেন মাদারীপুরের সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “নির্বাচন মানেই একাধিক প্রার্থীর অংশগ্রহণ। কিন্তু শিবচরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজের মেয়ে স্ত্রী ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের ডামি প্রার্থী করে প্রত্যাহার করায় তা প্রশ্নের উদ্রেক করে। এতে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।”

ইসির তথ্য অনুযায়ী, শিবচরের মতো বাগেরহাট সদর উপজেলায় তিন পদে তিনজন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় তিন পদে তিনজন, ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় তিন পদে তিনজন বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

এছাড়া গাইবান্ধার সাঘাটা, নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যন পদে ভোট প্রয়োজন হচ্ছে না। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায়ও চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী ছিল। তবে ভোট স্থগিত হওয়ায় তিনি এই দফায় নির্বাচিত হচ্ছেন না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত