Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

মালদ্বীপে চীনঘেঁষা দলের জয় কী বার্তা দিচ্ছে ভারতকে

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু।

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে দেশটির চীনঘেঁষা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। বিশাল এই বিজয় মুইজ্জুকে আরও বেশি চীনমুখী করে তুলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট পিপলস মজলিসের ৯৩টি আসনের মধ্যে ৯০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পিএনসি জয় পেয়েছে ৬৬টি আসনে। দলটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়েছে, যা এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।

এই নির্বাচন নিয়ে ভারতের এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ফলাফল প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে তার চীনমুখী নীতিগুলোকে এগিয়ে নিতে সক্ষম করে তুলবে। ভারতবিরোধী মুইজ্জুর এই বিশাল বিজয় নয়াদিল্লির জন্যও বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

এই ফলাফল কেন গুরুত্বপুর্ণ

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট দেশটির প্রেসিডেন্টের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ এবং তার সিদ্ধান্তগুলো আটকে দিতে পারে। এই নির্বাচনের আগে পিএনসি একটি জোটের অংশ ছিল, যারা পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু ছিল। বিদায়ী পার্লামেন্টে পিএনসি ও এর মিত্রদের মাত্র আটটি আসন ছিল।

ফলে গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও মুইজ্জুর পক্ষে তার চীনমুখী নীতিগুলো পাশ করানো কঠিন হচ্ছিল। পার্লামেন্ট নির্বাচনে এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের ফলে তার পথে আর কোনও বাধা রইল না।

এর আগে মজলিসে মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) আধিপত্য ছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ভারতঘেঁষা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ। মজলিসে দলটির ৪১ জন সদস্য ছিল। কিন্তু দলটি এবার ৮৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছে মাত্র ১২টিতে।

বিদায়ী পার্লামেন্টে দলটির সদস্যরা মুইজ্জুর অনেক পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন এবং প্রকাশ্যেই তার ভারত-বিরোধী অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেন। কিন্ত এখন তারা মুইজ্জুর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না।

মুইজ্জুর একজন জ্যেষ্ঠ সহযোগী বার্তা সংস্থা এএফপিকে এর আগে বলেছিলেন, “তিনি (মুইজ্জু) ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং তিনি এটি নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু পার্লামেন্ট সহযোগিতা করছে না।”

পার্লামেন্ট নির্বাচনের এই ফলাফল সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।

চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে মুইজ্জুর পরিকল্পনার জন্য এই নির্বাচনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুইজ্জু চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে একের পর এক বড় ধরনের অবকাঠামোগত চুক্তি করেছেন। দলের এই বিজয় চীনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পথের সব বাধা দূর করবে।

বেইজিংয়ের প্রতি মালের ঝোঁক

গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মুইজ্জু চীনের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে একের পর এক নজিরবিহীন উদ্যোগ নেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি অতীতের নিয়ম ভেঙে ভারতের আগে চীন সফরে যান এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ফিরে আসার পর তিনি ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, “আমরা ছোট হতে পারি, কিন্তু এটি তাদের আমাদের ধমক দেওয়ার লাইসেন্স দেয় না।”

মুখে কোনও দেশের নাম না নিলেও তিনি ভারতকে উদ্দেশ করেই যে একথা বলেন, তা অনেকটাই স্পষ্ট।

এছাড়া মুইজ্জু ভারতীয় সেনাদেরও দেশে ফিরে যেতে বলেন। মালদ্বীপে প্রায় ৮০ জন ভারতীয় সেনা রয়েছে, যারা দেশটির বিমান বাহিনীর সঙ্গে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এবছর মার্চের শুরুতে চীনের সঙ্গে মালদ্বীপের শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিও করে মুইজ্জু। ওই চুক্তিতে চীন দেশটিকে বিনামূল্যে সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের সঙ্গে মালদ্বীপের এমন চুক্তি এটিই প্রথম।

তবে গত মাসে মুইজ্জুকে ভারতের প্রতিও নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তিনি মালেকে দেওয়া ভারতের আর্থিক সহায়তার কথা স্বীকার করে বলেন, “ভারত মালদ্বীপের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেই থাকবে।”

গত বছরের শেষের দিকে ভারতের কাছে মালদ্বীপের ঋণ ছিল প্রায় ৪০০.৯ মিলিয়ন ডলার।

ভারত এখন পর্যন্ত সংযত পন্থা অবলম্বন করেছে এবং মালদ্বীপের সঙ্গে উত্তেজনা খুব বেশি বাড়ায়নি।

মুইজ্জুর নির্বাচনের পর নয়াদিল্লি-মালে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, প্রতিবেশীদের একে অন্যকে প্রয়োজন হবেই।

ভূ-কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে বিশ্বমঞ্চে মালদ্বীপের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও বিশাল। কারণ ভারত মহাসাগরের ওই পথ দিয়েই পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে জাহাজ চলাচল করে।

ফলে ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে নজর রাখতে মালদ্বীপকে প্রয়োজন দিল্লির। একই কারণে চীনও দেশটিতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় রয়েছে। তাই মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত