Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

বায়ার্নের রাজত্ব কেড়ে লেভারকুসেনের রূপকথা

প্রথমবার বুন্দেসলিগা জিতে লেভারকুসেনের কোচ জাবির সঙ্গে খেলোয়াড়দের উল্লাস।  ছবি : এক্স
প্রথমবার বুন্দেসলিগা জিতে লেভারকুসেনের কোচ জাবির সঙ্গে খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি : এক্স
Picture of ক্রীড়া ডেস্ক

ক্রীড়া ডেস্ক

বুন্দেসলিগা আর বায়ার্ন মিউনিখ-নাম দুটো একে অপরের পরিপূরক হয়ে পড়েছিল। সেই ২০১৩ থেকে টানা ১১ বছর জার্মান এই লিগের মুকুট তাদেরন। অবশেষে যুগাবসান। বায়ার্নের রাজত্ব কেড়ে রূপকথা গড়ল বায়ার লেভারকুসেন। আজ (রবিবার) ওয়ের্ডার ব্রেমনকে ৫-০ গোলে হারিয়ে জিতল নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বুন্দেসলিগা।

হ্যাটট্রিক করেছেন ফ্লোরিয়ান ভার্টজের। একটি করে গোল ভিক্তর বোনিফেস, গ্রানিত জাকার। এই জয়ে ২৯ ম্যাচে লেভারকুসেনের পয়েন্ট ৭৯। দুইয়ে থাকা বায়ার্নের ৬৩। ১৬ পয়েন্টের এই ব্যবধান বাকি ৫ ম্যাচে আর পেছনে ফেলা সম্ভব নয়।

ম্যাচ শুরুর আগেই আগাম উৎসবের মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিল লেভারকুসেন সমর্থকরা। স্টেডিয়ামে আসার পথে টিম বাস ঘিরে ছিল হাজারো ভক্তের ভিড়। সেই ভিড়ের জন্য এগুতেই পারছিল না লেভারকুসেনের টিম বাস! আর ম্যাচ শেষে তো মাঠে তৈরি হল উৎসবমুখর আবহ।

ম্যাচ আর শেষ হল কোথায়? ৮৩ মিনিটে  ফ্লোরিয়ান ভার্টজ দলের হয়ে চতুর্থ গোলের পর মাঠে নেমে পড়েছিলেন দর্শকরা। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ম্যাচ। ৮৯তম মিনিটে সেই ভার্টজ নিজের হ্যাটট্রিক আর দলের পঞ্চম গোল করার পরপরই মাঠে নেমে পড়েন সবাই! কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি।

দর্শকের ভালোবাসায় আটকা পড়েন হ্যাটট্রিকম্যান ভার্টজ। তাকে আলিঙ্গনে, চুমুতে অভিনন্দন জানান তারা। বিজয়োৎসবের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে এসেছিলেন সমর্থকরা। পতাকা, ব্যানার, স্কার্ভ-এর সঙ্গে ছিল বুন্দেসলিগা ট্রফির রেপ্লিকা। এর মাঝে কোনও দর্শক কাটছিলেন গোল পোস্টের জাল। তো কেউ, প্রথম শিরোপার আনন্দে ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি।

এর আগে স্টেডিয়ামে আসার পথের নামটা করা হয় কোচ জাবি আলোনসোর নামে। তার জাদু ছোঁয়াতেই যে রেলিগেশনের লাল অঞ্চল থেকে বিজয় কেতন ওড়াল ধুঁকতে থাকা এই দল।

যেভাবে ‘নেভারকুসেন’ থেকে বদলে যাওয়া

জাবি ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর যখন লেভারকুসেনের দায়িত্ব নেন তখন ক্লাবটি বুন্দেসলিগার পয়েন্ট টেবিলের ১৭ নম্বরে। প্রথম ৮ ম্যাচে পেয়েছিল কেবল ৫ পয়েন্ট। জাবির জাদু ছোঁয়ায় সেবার ৬ নম্বরে থেকে লিগ শেষ করে তারা।

এবার তো শুরু থেকেই দাপট ধরে রেখে একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়ে গেছে লেভারকুসেন। সেই ধারাটা ধরে রেখেই নিজেদের ইতিহাসে জিতল প্রথম বুন্দেসলিগা। ২৯ ম্যাচে তাদের জয় ২৫ আর ড্র ৪টি। গোল করেছে ৭৪টি, হজম করেছে কেবল ১৯টি।

১২০ বছরের ক্লাব ইতিহাসে এটিই শীর্ষ লিগে লেভারকুসেনের প্রথম শিরোপা। এর আগে তারা রানার্সআপ হয়েছে পাঁচবার। এজন্যই বিদ্রুপকারীরা ‘নেভারকুসেন’ বলে খোঁচা দিত তাদের। সেই তারা এতদিন পর মেটাল অতৃপ্তিটা।

অপরাজিত ৪৩ ম্যাচ

বুন্দেসলিগায় ২৯ ম্যাচই অপরাজিত লেভারকুসেন, যা জার্মান এই লিগে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ না হারার রেকর্ড। সবমিলিয়ে তারা এই মৌসুমে অপরাজিত ৪৩ ম্যাচ। ২০১১-১২ মৌসুমে জুভেন্টাসও হারেনি টানা ৪৩ ম্যাচ। তবে ইউরোপিয়ান লিগে ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত টানা ৬২ ম্যাচ না হারার রেকর্ড সেল্টিকের।

ট্যাকটিক্স

জাবির ট্যাকটিক্স হচ্ছে গতিময় ফুটবল। পছন্দ করেন বলের দখল রেখে খেলতে আর দ্রুত বিপক্ষের ফাইনাল থার্ডে পৌঁছতে। এজন্য দলকে খেলাচ্ছেন ৩-৪-২-১ ছকে। তিনজন সেন্টার ব্যাকের সঙ্গে উইং ব্যাক আর মিডফিল্ডারদের নিয়ে ফরোয়ার্ডে তিনজন।

ট্রান্সফার

নতুন মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখ শক্তি বাড়িয়েছে হ্যারি কেইনকে কিনে। সেখানে গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪ গোল করা মুসা দিয়াবিকে ৪৩ মিলিয়ন পাউন্ডে লেভারকুসেন বিক্রি করে অ্যাস্টন ভিলার কাছে।

এই টাকাটা খুব হিসেব করে দলবদলের বাজারে খরচ করে লেভারকুসেন। ২১.৪ মিলিয়ন পাউন্ডে তারা আর্সেনাল থেকে কিনে গ্রানিত জাকাকে। সুইজারল্যান্ডের এই মিডফিল্ডার এখন লেভারকুসেনে পরিচিত ‘কিং ’ নামে।

জার্মান উইঙ্গার জোনাস হফমানকে তারা কিনেছে কেবল ৮.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। ফ্রিতে বেনফিকা থেকে এনেছে লেফট উইং ব্যাক অ্যালেক্স গ্রিমালদো। গত ইউরোপা লিগে ইউনিয়ন এসজির হয়ে সর্বোচ্চ ৬ গোল করা নাইজেরিয়ার ভিক্তর বোনিফেসকে কিনেছে ১৭.২ মিলিয়ন পাউন্ডে।

২০ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ফ্লোরিয়ান ভার্টজ, ২০২০ ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতা পিটার শিকের সঙ্গে নাইজেরিয়ার ভিক্তর বোনিফেস, গ্রানিত জাকা, সেন্টার বেক জোনাথন তাহরা মিলে দুর্দান্ত এক দল হয়ে দাঁড়িয়েছে লেভারকুসেন।

নাইজেরিয়ার দুই ভিক্তর

গত মৌসুমে ভিক্তর ওসিমেনের কাঁধে চেপে ১৯৯০ সালের পর প্রথমবার সিরি ‘এ’ জিতেছিল নাপোলি। ৩২ ম্যাচে তিনি করেছিলেন ২৬ গোল। এবার লেভারকুসেনের ত্রাতা নাইজেরিয়ার আরেক ভিক্তর।  তিনি ভিক্তর বোনিফেস। এই মৌসুমে বুন্দেসলিগার ১৮ ম্যাচে  ১১ গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ৮টি। দুই নাইজেরিয়ান টানা দুই বছর নায়ক ইউরোপের মর্যাদার দুই লিগের।

এছাড়া এবার অ্যালেক্স গ্রিমালদো ২৯ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল ১২ অ্যাসিস্ট। ফ্লোরিয়ান ভার্টজ ২৯ ম্যাচে গোল ১১ অ্যাসিস্ট ১০টি। জেরেমি ফ্রিম্পং ২৭ ম্যাচে করেছেন ৮ গোল ৭ অ্যাসিস্ট। তাদের ঝলকেই বাজিমাত করল লেভারকুসেন। ১১ বছর পর বায়ার্নের মুকুট কেড়ে গড়ল রূপকথা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত