ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টা পার হয় তবুও ফরচুন বরিশালের বিজয় উৎসব শেষ হয় না। শুক্রবারে মিরপুরের সবুজ গালিচায় বিপিএল ফাইনালে শেষ হওয়া মাত্র নামে বরিশাল সমর্থকদের ঢল। নিরাপত্তা বেষ্টনী, সাবধানতা, কারও মানা দেখার নেই। শিরোপা জেতার দিনে তামিম-মুশফিকদের গায়ে হাত দিয়ে ছবি তোলা যায়। তাদের গা ঘেঁষে কথা বলা যায়।
বিদেশি কাইল মায়ার্স-ডেভিড মিলাররাও অবাক হন এমন উৎসব দেখে। এতদিন টেলিভিশনের পর্দায় দেখা তাদের সঙ্গে জটলা ধরে কথা বলা, ছবি তোলা, আরও কত কি! শিরোপা উৎসব এভাবেই করতে হয় হয়তো। এদিন বরিশাল দলের জন্য সমর্থকদের দেয়া সব বিপত্তি তামিম-মুশফিকদের কাছে “ওকে ফাইন-ফাইন-ফাইন”।
ফাইনালে মিলার চার মারার পর বিজয় উৎসবের শুরু। বরিশাল দলের সবাই ড্রেসিংরুম ছেড়ে ছুটে আসেন ক্রিজে থাকা মিলার ও মাহমুদউল্লাহকে ধরতে। জড়িয়ে ধরে শুরু হয় নাচের উন্মাদনা। তখনই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট নিভিয়ে দিয়ে লেজার লাইট শো’য়ের ব্যবস্থা করে বিসিবি। অন্ধকারের সুযোগ পেয়ে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে থাকা সমর্থকরা নেমে যান মাঠে।
ততক্ষণে বরিশালের ড্রেসিংরুমের সামনে বিশাল জটলা। মুশফিককে শূন্যে ছুঁড়ে উৎসব চলছে। লাইট জ্বলে ওঠার পর দেখা যায় মাঠের অর্ধেক লোকে লোকারণ্য। তামিম-মুশফিকদের ঘিরে ততক্ষণে বিশাল জটলা তৈরি হয়েছে। সেই জটলা নিয়েই গ্যালারীতে থাকা সমর্থকদের অভিনন্দনের জবাব দিতে মাঠ প্রদক্ষিণ করে তামিমের বরিশাল দল।
- জেমস ফুলার অভিভূত। তার ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা, “এটা দারুণ অনুভূতি। এই দলের অংশ হতে পেরে সত্যি ভালো লাগছে। আমি সামনে আবারও খেলতে চাই।” কথা বলার সুযোগ পাননি মায়ার্স। শুধু বলছিলেন, “ফাইন-ফাইন-ফাইন”। মিরাজ-সাইফউদ্দিনদের টেলিভিশনের ক্যামেরার ভিড়ে দেখাই যাচ্ছিল না।
মাঠ প্রদক্ষিণ শেষে শুরু সমর্থকদের সেলফি তোলার আবদার। কে কাকে ধরে সেলফি তুলবেন সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত কয়েক’শ মানুষ। সেই ভিড় ঠেলে তামিম-মুশফিক কোনোক্রমে ড্রেসিংরুমে ঢুকে গেলেও মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ ও বিদেশি ক্রিকেটাররা যেতে পারেননি। একের পর ছবি তোলার আবদার মেটাতে হয়েছে তাদের।
এই ভিড়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। কিন্তু কথা বলার সময় কি আসলেই ছিল! ক্যারিয়ারে প্রথম এমন টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভুত জেমস ফুলার অভিভূত। তার ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা, “এটা দারুণ অনুভূতি। এই দলের অংশ হতে পেরে সত্যি ভালো লাগছে। আমি সামনে আবারও খেলতে চাই।” কথা বলার সুযোগ পাননি মায়ার্স। শুধু বলছিলেন, “ফাইন-ফাইন-ফাইন”। মিরাজ-সাইফউদ্দিনদের টেলিভিশনের ক্যামেরার ভিড়ে দেখাই যাচ্ছিল না।
এমন দিনে বিসিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়াটাই স্বাভাবিক। হাজার দুয়েক মানুষকে অল্প কিছু নিরাপত্তারক্ষীর পক্ষে সামলানো কঠিন। তাই ট্রফি যখন বরিশাল অধিনায়ক তামিমকে হাতবদল করা হলো তখন তাদের উৎসবে সাধারণ সমর্থকও মিলে গেলেন। মাহমুদউল্লাহকে চিৎকার দিয়ে বলতে হলো, “আপনারা সরে যান এটা শুধু ক্রিকেটারদের জায়গা।”
- মাহমুদউল্লাহকে চিৎকার দিয়ে বলতে হলো, “আপনারা সরে যান এটা শুধু ক্রিকেটারদের জায়গা।”
কিন্তু এত মানুষের ভিড় কি সামলানো যায়!
মাহমুদউল্লাহও পারেননি। অবশেষে সবাই মিলে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে। এরপর তামিম বের হয়ে আবার নিরাপত্তারক্ষীদের নিজে থেকে বললেন সমর্থকদের একটু দূরে সরাতে যেন তারা ট্রফি নিয়ে ফটোশ্যুট করতে পারেন। এবার সেই সুযোগ পাওয়া গেল এবং “শুধু” তামিমদের ট্রফি ফটোশ্যুট সম্ভবত হলো।
এত ভিড়, চিৎকার, মানুষের ধাক্কা….কিন্তু কিছুই এদিন তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে না। আজ যে মেজাজ খারাপ করার দিন নয়। শিরোপা জয়ের দিনে সব কিছু মেনে নিতে হয়। মায়ার্সের মতো বলতে হয় “ফাইন-ফাইন-ফাইন”।