Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

গুদামের কাজ যাচ্ছে রোবটদের দখলে

ওকাডো রোবট। ছবি: বিবিসি।
ওকাডো রোবট। ছবি: বিবিসি।

অনলাইনে কোনও পণ্যের অর্ডার দেওয়ার পরে কী ঘটবে, তা নিয়ে আপনি হয়ত খুব একটা ভাবেন না। কিন্তু আপনার ওই অর্ডারের পর সফটওয়্যার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট, ভ্যান ও মানবকর্মীদের একটি জটিল কর্মপ্রক্রিয়া শুরু হয়।

লুটনের ঠিক বাইরে ওকাডোর একটি গুদামে আমি এমন একটি জটিল কর্মপ্রক্রিয়ার মাঝখানে আছি।

আমি যতদূর দেখতে পাচ্ছি, শত শত রোবট একটি গ্রিডের চারপাশে ঘুরছে, অনলাইনে আসা অর্ডারের পণ্যগুলো আনছে। রোবটগুলো কাজ করছে খুব দ্রুত গতিতে এবং নির্ভুলভাবে।

অনলাইন শপিংয়ের প্রথম দিনগুলোতে আপনার অর্ডারের পর মানবকর্মীরাই আপনার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি সংগ্রহ করার জন্য গুদাম বা দোকানে ছুটে বেড়াত।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ওকাডো গ্রুপ পণ্য সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য রোবট ব্যবহার করছে।

ওকাডোই এই ধরনের অটোমেশন করা একমাত্র ফার্ম নয়। যুক্তরাজ্যের আসদা স্টোরস লিমিটেডও তার গুদামগুলোতে সুইস অটোমেশন ফার্ম সুইসলগ ও সুইডেনের অটোস্টোর থেকে আনা একটি সিস্টেম ব্যবহার করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট সিম্বোটিক নামক একটি আমেরিকান কোম্পানির রোবোটিক্স ব্যবহার করে তার সাপ্লাই চেইনের কিছু অংশ অটোমেশন করেছে।

ওকাডো তার অটোমেশন প্রক্রিয়াকে এক উচ্চতর স্তরে নিয়ে গেছে। গ্রিডের চারপাশে যে রোবটগুলো ছুটে বেড়ায়, রোবটিক হাতে আইটেমগুলো বয়ে নিয়ে আসে।

চালের ব্যাগ, চায়ের বাক্স, ক্রাম্পেটের প্যাকেট সবই হাতের মুঠোয় একটি সাকশন কাপ ব্যবহার করে তুলে নেয়।

দেখে হয়ত এটাকে একটি সহজ কাজ মনে হতে পারে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট পণ্য চিনতে, সফলভাবে ধরতে এবং বহন করে নিয়ে আসার জন্য একটি রোবটকে প্রশিক্ষণ দেওয়া আশ্চর্যজনকভাবে কঠিন।

ওকাডোর রোবটগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রায় ১০০ জন প্রকৌশলী কয়েক বছর ধরে কাজ করেছে।

ওকাডো টেকনোলজির প্রধান নির্বাহী জেমস ম্যাথিউস ব্যাখ্যা করে বলেন, রোবটে লাগানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) তার ক্যামেরা থেকে আসা তথ্য ব্যাখ্যা করতে হয়। যেমন, বস্তুটি কী? সেই বস্তুর প্রান্তগুলো কোথায়? কীভাবে তা বুঝবে?

এছাড়া কীভাবে হাত নাড়াতে হয়, এআই-কে তাও বুঝতে হবে। যেমন, কীভাবে একটি বস্তুকে তুলতে হবে? টানাহেঁচড়া না করে সুন্দরভাবে তুলে নিয়ে যেতে হবে? কীভাবে ব্যাগে রাখতে হবে?

লুটন গুদামে ৪৪টি রোবট রয়েছে, যা এই মুহূর্তে সেখানকার ১৫ শতাংশ পণ্য নাড়াচাড়া করে। যার পরিমাণ সপ্তাহে প্রায় ৪ লাখ। বাকিগুলো মানবকর্মীরা নাড়াচাড়া করেন।

যেসব পণ্য এখনও রোবট দিয়ে নাড়াচাড়া করা সম্ভব নয়, সেগুলো দেখেন মানবকর্মীরা। যেমন মদের বোতল, যা ভারী এবং যার পৃষ্ঠ আঁকা-বাঁকা। রোবটদের পক্ষে এগুলো কীভাবে ধরতে হবে, তা বোঝা কঠিন।

তবে সিস্টেমটি আরও উন্নত করা হচ্ছে। সংস্থাটি রোবটগুলোর জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক সংযুক্তি তৈরি করছে, যা তাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য নাড়াচাড়া করতে সক্ষম করবে।

ম্যাথিউস বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে সাবধানে কাজ করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে উন্নত করছি।”

ওকাডোর প্রত্যাশা, দুই বা তিন বছরের মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য রোবট দিয়ে নাড়াচাড়া করানো সম্ভব হবে।

এর মানে তাদের মানবকর্মীর সংখ্যা আরও কমে যাবে। কিন্তু লুটন গুদামে এখনও ১৪০০ জন কর্মী রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও তাদের অনেককে প্রয়োজন হবে।

ম্যাথিউস বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের অনেক কম মানবকর্মী লাগবে। তবে এমন নয় যে, আমাদের আর কোনও কর্মীই লাগবে না। সেখানে পৌঁছাতে এখনও অনেক পথ বাকি।”

যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ওকাডো তার অটোমেশন প্রযুক্তি মুদি খাতের বাইরের কোম্পানিগুলোর কাছেও বিক্রি করার কথা ভাবছে। গত বছরের শেষের দিকে এটি কানাডার একটি বড় ফার্মাসিউটিক্যালস ডিস্ট্রিবিউটর ম্যাককেসনের সঙ্গে একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।

ম্যাথিউস বলেন, “এমন কোনও শিল্প নাই যাদের গুদামের ভেতরে দক্ষতার সঙ্গে পণ্য নাড়াচাড়া করার প্রয়োজন হয় না। এই প্রয়োজন সীমাহীন।”

তাহলে গুদামগুলোর অটোমেশনের শেষ কোথায়? আমরা কি মানবমুক্ত গুদামের দিকে যাচ্ছি, যা দিনে ২৪ ঘণ্টাই সচল থাকবে?

আইনি সংস্থা টেলর ওয়েসিং এর বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটে বিশেষজ্ঞ সারাহ বোল্টন বলেন, সেটা এত দ্রুত সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, “অটোমেশন প্রায় অসম্ভব রকমভাবে ব্যয়বহুল। একটি গুদাম সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় করার জন্য কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়।

“সুতরাং শুধু বড় বড় কোম্পানিগুলোর গুদামগুলোরই সম্পূর্ণ অটোমেশন সম্ভব, যাদের এই বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করে পোষাবে, ছোট গুদামগুলোর এত বিশাল অর্থ ব্যয় করে অটোমেশন করা আর্থিকভাবে কার্যকর হবে না।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অটোমেশনের জন্য আধুনিক ভবনও প্রয়োজন। যার মেঝেগুলো ভারী ওজন সহ্য করতে পারবে। সাপোর্ট কলাম ছাড়া বড় খোলা জায়গা লাগবে, যাতে রোবটগুলোর সংঘর্ষ কম হয়। নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সংযোগও অত্যাবশ্যক।

মিসেস বোল্টন বলেন, “অটোমেশনের জন্য নতুন নির্মিত ভবন লাগবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে নতুন নির্মিত গুদামের সংখ্যা অনেক কম।”

অটোস্টোর সেই চ্যালেঞ্জের কয়েকটি মোকাবেলা করছে। এটির পিও নামে একটি কোম্পানি রয়েছে, যা ছোট ব্যবসার জন্য অটোমেশন তৈরি করছে।

অটোস্টোর ছোট গুদামগুলোতে বড় ফার্মগুলোর মতোই অনেকটা একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যাইহোক, পিওর সিস্টেমের অগ্রিম খরচ কম। সফটওয়্যারটি সহজ এবং শপিফাইয়ের মতো সাধারণ ই-কমার্স সিস্টেমের সঙ্গে সহজেই একীভূত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

অটোস্টোরের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার কার্লোস ফার্নান্দেজ বলেছেন, “এটি একটি সম্পূর্ণ অফার, যেখানে অগ্রিম খরচ অনেক কমে গেছে। তাই কোম্পানিগুলো অটোমেশন ও এর সুবিধাগুলো সাশ্রয়ী খরচেই পাবে।”

বর্তমানে ১০ জন ক্লায়েন্ট পিওর অটোমেশন সিস্টেম চালাচ্ছেন এবং আরও পাঁচজন গ্রাহক সাইন আপ করেছেন। ফার্নান্দেজ এতে বিশাল বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখেন।

ফার্নান্দেজ বলেন, “সামনের বছরগুলোতে প্রযুক্তিকে আরও সহজ এবং আরও সাশ্রয়ী করার একটি যাত্রা শুরু হতে চলেছে। জটিল অটোমেশন প্রকল্পগুলো চালানোর জন্য আপনাকে বড় কর্পোরেশন হতে হবে না এবং আপনাকে বড় পরিমাণ পুঁজিও বিনিয়োগ করতে হবে না। ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর সুবিধা পাওয়া শুরু করবে।”

লেখক: বেন মরিসন, বিবিসির ব্যবসায় প্রযুক্তি সম্পাদক

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত