Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

নির্দেশনায় এই গরমে ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরার অনুরোধ করা হয়েছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
নির্দেশনায় এই গরমে ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরার অনুরোধ করা হয়েছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

চলমান তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাধারণ মানুষের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দ্বিতীয় দফায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্টের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার এসব নির্দেশনা দিয়েছে।

বৈশাখের প্রচণ্ড এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, বিপর্যস্ত জনজীবন। গত চার দিনে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও মাদারীপুরে গরমে অসুস্থ হয়ে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশনায় তীব্র গরম থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। যারা কায়িক পরিশ্রম করেন তাদেরকে মাঝেমাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন।

নির্দেশনায় এই গরমে ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরার অনুরোধ করা হয়েছে। সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে।

গরমে যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে নির্দেশনায়।

ঢাকাসহ সারাদেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদপ্তর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, দেশের উপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠলে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

গুলিস্তানে হাঁটার সময় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু

মঙ্গলবার ঢাকার গুলিস্তানে হাঁটার সময় অসুস্থ হয়ে আলমগীর সিকদার নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা।

ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলমগীর সিকদার মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবশ্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মারসেলীনা সরকার জানিয়েছেন, আলমগীর সিকদারকে মৃত অবস্থায় পথচারীরা হাসপাতালে এনেছেন। তার মৃত্যু হিটস্ট্রোকে হয়েছে, নাকি অন্য কারণে- সেটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।

এর আগে গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা নার্সিং কলেজের কাছে রিকশা চালানোর সময় একজন অসুস্থ হয়ে মারা যান।

হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি যাদের বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, অত্যধিক তাপ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়োবৃদ্ধ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।

তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম এবং তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না। এজন্য শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, পরিবারের পূর্ণবয়স্ক সদস্য, শিশু, গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও অন্যদের মধ্যে যারা দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত তাদের অতিরিক্ত গরম লাগছে কিনা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি, মুখ শুকিয়ে যাওয়া বা মুখ আঠালো হওয়াসহ মাথাব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তিনি বলেন, এমন গরমে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগে আক্রান্তদের কী করতে হবে- সে বিষয়ে আগেভাগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “প্রচণ্ড গরমের সময় শিশুদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে নেবেন না। তীব্র গরমে কাজ করার সময় নিয়মিত বিরতি নিন। গর্ভবতী মা, শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।”

অধিদপ্তরের নির্দেশনায় আরও জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত তাপে পানি শূন্যতা, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো মৃদু স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, পেশী ও স্নায়ুর বৈকল্য, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অধিদপ্তর বলছে, অতিরিক্ত তাপের গুরুতর উপসর্গগুলোর জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে কনফিউশন বা বিভ্রান্তি, শরীর অসাড় হয়ে পড়া, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া এবং হৃদস্পন্দন, শ্বাসক্রিয়ার হার বেড়ে যাওয়া ও খিঁচুনি হওয়া।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত