Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

যুগ যুগান্তের হাওয়াই মিঠাই

Candy floss
Picture of সৈয়দ ফরহাদ

সৈয়দ ফরহাদ

ভারতের দুই রাজ্য তামিলনাড়ু এবং পন্ডিচেরিতে সম্প্রতি হাওয়াই মিঠাই বা কটন ক্যান্ডি নিষিদ্ধ হলো। এসব অঞ্চলে হাওয়াই মিঠাই বর্ণিল ও রঙিন করে তুলতে যে রং ব্যবহার করা হয় তা মূলত কাপড় রঙ করতে ব্যবহার করা হয়। ভারত সরকার বলছে, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে হাওয়াই মিঠাইয়ের রঙে  রাসায়নিক দ্রব্য ‘রোডামাইন বি’ থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। 

রঙিন হাওয়াই মিঠাই নিয়ে এটাই প্রথম অভিযোগ নয়। এর আগেও এ ধরনের বিতর্ক দেশে হয়েছে। আর হাওয়াই মিঠাই তৈরির যেটি মূল উপাদান চিনি- সেটি উৎপাদনের ইতিহাস রীতিমত কলঙ্কময়।  

হাওয়াই মিঠাইয়ের উৎপত্তি

আধুনিক কালের হাওয়াই মিঠাইয়ের উৎপত্তি ২০ শতকের শুরুর দিকে- এমন দাবি করেন অনেকে। তবে বহু প্রাচীনকাল থেকেই যে এই বাহারি খাবারটির অস্তিত্ব ছিল এমন প্রমাণ মিলেছে ইতিহাসে।  

দেশের আনাচে -কানাচে ফেরি করে বিক্রি করা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চিনির তৈরি মিষ্টি খাবার একসময় ছিল ‘বিলাসবহুল’। কেননা সমাজের উঁচু তলার লোকেরাই কেবল তাদের নানা আয়োজনে চিনির তৈরি খাবার পরিবেশন করতে পারতো। অথচ জনপ্রিয় চিনিজাত খাবারগুলো, যাদেরকে হাওয়াই মিঠাইয়ের পূর্বসুরীও বলা যায়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিল বহু বিখ্যাত মানুষকে।

কথিত আছে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দাঁতের বারোটা বেজে যাওয়ার জন্য এই হাওয়াই মিঠাই দায়ী। হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে তার সব দাঁত সম্পূর্ণ কালো হয়ে যায়। অবস্থা এতোই খারাপ ছিল যে ডাক্তার তার সব দাঁত ফেলে দেওয়ার পরামর্শ পর্যন্ত দিয়েছিলেন।

হাওয়াই মিঠাইয়ের জনপ্রিয়তার ইতিহাসের পেছনে লুকিয়ে আছে আরেক ইতিহাস। বহু অভিজাতের দাঁতের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া এই মিষ্টি খাবারের প্রচলন করা হয়েছিল চিনি বাণিজ্যের প্রসারের প্রয়োজনে। এমনই মত ইতিহাসবিদদের।

গত শতাব্দিতে বিশ্বব্যাপী ‘কটন ক্যান্ডি’ নামে পরিচিত পাওয়া এই খাবার বহু আগে থেকেই নানা নামে চালু ছিল দুনিয়ার নানা জায়গায়। আর বর্তমান নামগুলো তো আমাদের জানাই- ফেইরি ফ্লস, ক্যান্ডি ফ্লস, স্পুন সুগার ইত্যাদি।

হাওয়াই মিঠাইয়ের পূর্বসুরীরা

এখন আমরা যে রূপে হাওয়াই মিঠাইকে দেখি তার প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু ১৯০৪ সালে। যদিও ১৮৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক উইলিয়ম মরিসন ও জন সি. ওয়ারটন হাওয়াই মিঠাই তৈরির প্রথম যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তবে ১৯০৪ সালে মরিসন এবং ওয়ারটন সেন্ট লুইসের বিশ্ব মেলায় সে মেশিন নিয়ে হাজির হলে হাওয়াই মিঠাইয়ের বর্তমান চেহারাটি বৈশ্বিক রূপ পায়।

হাওয়াই মিঠাইয়ের পূর্বসুরীরাও তার মতোই দুনিয়াজোড়া খ্যাতিই অর্জন করেছিল।

ড্রাগনস বিয়ার্ড ক্যান্ডি

ড্রাগনস বিয়ার্ড ক্যান্ডির উৎপত্তি চীনা হান রাজবংশের আমলে। এই ক্যান্ডির নামকরণের পেছনে আছে খুবই মজার একটি ঘটনা। একবার চাইনিজ এক সম্রাট রাজ ভোজের পর ডেজার্ট হিসেবে এ খাবারটি খান। তখন তার মুখে এই ক্যান্ডি এমনভাবে লেগে যায় যে মনে হচ্ছিল যেন ড্রাগনের গোঁফ।

কালের বিবর্তনে নানা সংস্করণ পেরিয়ে এই খাবারে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। 

ড্রাগনস ক্যান্ডির বিশেষত্ব হল এর তন্তুগুলো সিল্কের সুতোর মতো। তৈরি করা হয় চিনাবাদাম, তিল এবং নারকেলের মিশেলে। ড্রাগনস বিয়ার্ড ক্যান্ডি কোরিয়ায় অবশ্য ‘কোরিয়ান কোর্ট’ নামে পরিচিত। 

ড্রাগনস বিয়ার্ড ক্যান্ডি

থাই ‘রোটি সাই মাই 

সপ্তম শতাব্দীতে, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনের ভাড়াটে সৈন্যরা থাইল্যান্ডে গিয়ে আবিষ্কার করে অন্যরকম এক খাবার। সাই-মাই নামের এই খাবার তাদের হাত ধরে ছড়িয়ে যায় এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশে। তবে ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি এবং চেহারায়। 

খাবার হিসেবে ‘রোটি সাই মাই’ আর হাওয়াই মিঠাইয়ের সাদৃশ্য প্রচুর। ফলে ঐতিহ্যগতভাবে একে আধুনিক হাওয়াই মিঠাইয়ের আত্মীয় বলাই যায়।

কিংবদন্তী আছে যে থাইল্যান্ডের প্রাচীন রাজধানী আয়ুত্থিয়াতে ‘রোটি সাই মাই’ এর উৎপত্তি।  যার নামকরণে আছে মুসলিম প্রভাব। ধারণা করা হয়. এই খাবারে ‘রোটি’ শব্দটি এসেছে ইসলামি ঐতিহ্য থেকে। আবার মুসলিম বিক্রেতারাই প্রথম এটি থাইল্যান্ডের রাস্তায় বিক্রি করা শুরু করে।  

রোটি সাই মাই 

সময়ের সাথে সাথে, এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সকল শ্রেণির মানুষের কাছে প্রিয় ‘স্ট্রিট ফুড’ এ পরিণত হয়। 

‘রোটি সাই মাই’ প্রস্তুত করতে দরকার হয় ময়দা, চিনি, পানি এবং তেল। পানডান পাতা যোগে এই খাবার পায় সবুজ রঙ। স্বাদে যুক্ত হয় খানিক নারকেল ও ভ্যানিলার মতো ফ্লেভার।     

সোন পাপড়ি

আধুনিক হাওয়াই মিঠাইয়ের পূর্বসূরির দাবি ভারতীয় উপমহাদেশ করতেই পারে। এর টেক্সচারও যে অনেকটা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতই‘সোন পাপড়ি’, যাকে আমরা বলি সোন পাপড়ি বলে যে ডেজার্ট আইটেমটি আমরা প্রায়ই খেয়ে থাকি তার উৎপত্তিস্থল ভারত। ইতিহাস ঘেঁটে অনেক বিশেষজ্ঞ এমনটাই বলছেন। 

১৬ শতকের মুঘল সাহিত্যের নিদর্শন ‘আইন-ই-আকবরি’ তে ‘সোন পাপড়ি’র উল্লেখ পাওয়া যায়।

এটি মূলত ঘি, ময়দা, চিনি, এলাচ, এবং বাদাম দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক জায়গাতেই উৎসবের মিষ্টান্ন হিসেবে পরিবেশন করা হয় ‘সোন পাপড়ি’ বা শন পাপড়ি। 

ইরানিয়ান পশমক

কটন ক্যান্ডির আরেকটি প্রাচীন পূর্বসূরীর উৎপত্তি ইরানে। নাম হলো পশমক। যার অর্থ হলো উল। 

মেঘের মতো দেখতে এই ‘ক্যান্ডি’ বা মিষ্টান্নের উৎপত্তি ইরানের প্রাচীন শহর ইয়াজদ থেকে। প্রাচীনকালে ইয়াজদ শহরটির সাথে চীন ও ভারতের বাণিজ্য ছিল। সিল্ক রুট দিয়ে এই দুটি দেশ থেকে চিনি আমদানি করা হতো ইয়াযদে। আর সে চিনি ব্যবহৃত হতো পশমক প্রস্তুতে।  

পশমকের প্রধান উপাদান হল ঘি, চিনি, এবং ময়দা। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হওয়ার পর পাতলা সুতোয় টানা হয়।

পশমক বিভিন্ন স্বাদে পাওয়া যায়, যেমন পেস্তা, কাঠবাদাম, এবং গোলাপ। এটি বিভিন্ন রঙেও তৈরি করা যেতে পারে।

পশমক

তুরস্কের ক্যান্ডি ফ্লস: পিশমানিয়ে

পিশমিনিয়ের উৎপত্তি পনের শতকের তুরস্কে। ধারণা করা হয়, এই ক্যান্ডির অনুপ্রেরণা ইরানের পশমক।  পিশমানিয়ে নামে পরিচিত এই তুর্কি মিষ্টিকে স্ট্রিং হালভা, স্ট্রেচড হালভা এবং ফ্লস হালভাও বলা হয়।  

ধারণা করা হয়, ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ-পূর্বের কোকায়েলি অঞ্চলে এই খাবারের প্রচলন শুরু হয়। 

তাহিনী, তিলের পেস্ট এর মিশ্রণে এই ক্যান্ডি প্রস্তুত করা হয়। পিশমানিয়ের নামের উৎপত্তি নিয়ে নানারকম মতামত আছে। ফুড হগ ব্লগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পিশমানিয়ে এসেছে ‘পাশম’ শব্দ থেকে। আরেকটি মত হল নামটি কপটিক শব্দ ‘পিস’ থেকে এসেছে। 

তবে, পিশমানিয়ে নামের উৎপত্তি নিয়ে প্রচলিত আছে একটি জনপ্রিয় গল্প। 

তুরষ্কের এক খাবার বিক্রেতা একবার এক নারীর প্রেমে পড়েন। ও নারীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য  তিনি তৈরি করেন এক মিষ্টান্ন।  যার নাম তিনি দেন ‘শিশমানিয়ে’।  তুর্কি ভাষায় যার মানে দাঁড়ায় ‘ওগো মোর মোটা মহিলা’।

১৫ শতকে তুরস্কে পিশমানিয়ে বসনিয়ায় গিয়ে নাম নিল ‘সেতেনিয়া’। বসনিয়ান ঐতিহ্যের প্রতীক ক্যান্ডি গোত্রের এই মিষ্টান্নটি ময়দা ভেজে তাতে চিনি, লেবু যোগ করে প্রস্তুত করা হয়। যা এটিকে দেয় অনন্য এক স্বাদ। কখনও কখনও, বাদাম, তিল, এবং গোলাপ জলের মতো অন্যান্য উপাদান যোগ করেও প্রস্তুত হয় ‘সেতেনিয়ে’।

পিশমানিয়ে
স্পান চিনি এবং রেনেসাঁ

হাওয়াই মিঠাইয়ের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে ইউরোপীয় রেনেসাঁ। এই ইতিহাস জানতে ফিরে যেতে হয় ১৫ শতকের ভেনিসে। 

সে সময়, মিহি সুতোর মতো ‘স্পান’ চিনি ছিল ভেনিসীয় রিপাবলিকের এক নতুন আবিষ্কার। এই স্বাধীন রাষ্ট্রটি ইউরোপীয় চিনি বাণিজ্যের উপর একচেটিয়া রাজ করেছে দীর্ঘদিন। আজকের সাইপ্রাস সে সময় ছিল ভেনিসের অধীন। আর তুরস্কের মূল ভুখণ্ডের কাছাকাছি ছিল ভেনিস অধিকৃত এই অঞ্চলটি। সেখানকার জলবায়ু আখ চাষের জন্য ছিল খুবই উপযোগী।

ইতালির রন্ধন ইতিহাসবিদদের দাবি স্পান চিনি রান্নার ধারণা তারা পেয়েছেন সাইপ্রাস থেকে। যাতে মিশে আছে তুরস্কের ঐতিহ্য।  

ভেনিসের শেফদের হাত ঘুরে এই রন্ধন প্রণালী পৌঁছে যায় ইতালীর শেফদের কাছে। ইতালির শেফরা এই সাদামাটা স্পান চিনিতে দিতে থাকেন নানা নতুনত্ব। 

ইউরোপীয় রেনেসাঁর আমলেই এই স্পান চিনি প্রস্তুতের কৌশল ছড়িয়ে যেতে থাকে সারা বিশ্বে। অনেক ঐতিহাসিকদের মত, এটিই ক্যান্ডি ফ্লস বা কটন ক্যান্ডির আদি পিতা।

রেনেসাঁ থেকে বিশ্বায়ন

ক্রুসেডের সময় থেকেই চিনি ইউরোপীয়দের নজরে ছিল। শুরুতে এটি ছিল একটি বিশেষ পণ্য। যা মূলত ওষুধ এবং মাঝে মাঝে মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু রেনেসাঁর সময়ে চিনি ব্যবহৃত হতে থাকে শিল্পকর্মে। ফলে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য উপযুক্ত জমি ও শ্রমিক খুঁজে বের করার অভিযানও বাড়তে থাকে। 

ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক ট্রায়াঙ্গাল ট্রেড রুটের বিকাশের পেছনে প্রাথমিক প্রেরণা ছিল চিনি। ১৬ শতকে বিকশিত হয় এই রুট। ব্যাপক সহিংসতা আর রক্তারক্তির মধ্য দিয়ে ইউরোপের শাসক শ্রেণি আফ্রিকা, আমেরিকার এবং ইউরোপের মধ্যে এই নৌ রুট প্রতিষ্ঠা করে। আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের আটক করে দাস হিসেবে নিয়ে যাওয়া হতো আমেরিকায়। সেখানে আদিবাসীদের জায়গা জমি থেকে উচ্ছেদ করে এবং তাদের হত্যা করে দখল করা হতো বিস্তীর্ণ জমি। সে জমিতে করা হতো আখ চাষ। আখ থেকে উৎপাদিত চিনি আবার যেতো ইউরোপে। 

দ্রুত চিনি একটি আন্তর্জাতিক অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়। ১৮ শতকের মধ্যে চিনি ইউরোপীয় অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ দখল করে নেয়।

উপনিবেশের গ্লানি

হাওয়াই মিঠাই তৈরির যন্ত্র আবিষ্কারক উইলিয়াম মরিসন ছিলেন দন্ত চিকিৎসক। আর তার সহযোগী জন সি. ওয়ার্টন মিষ্টি ব্যবসায়ী। এই যন্ত্রে কয়েক মিনিটের মধ্যেই চিনির স্ফটিক রূপান্তরিত হতো মিষ্টি ক্যান্ডিতে।

১৯০৪ সালে সেন্ট লুইস ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে মরিস এবং ওয়ার্টন মেশিনে তৈরি ‘ফেইরি ফ্লস’ (হাওয়াই মিঠাই) বিক্রি করে ৬৮ হাজার ডলারের ক্যান্ডি বিক্রি করেছিলেন। যা আজকের ২৫ লাখ ডলারের সমতুল্য। ওই বিশ্ব মেলাটি আয়োজন করা হয়েছিল- যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফ্রান্সের লুইজিয়ানা (বর্তমান লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য) বিক্রির ১০০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে। মূলত এক উপনিবেশবাদীর কাছ থেকে অন্য উপনিবেশবাদীর কাছে বিক্রি হন লুইজিয়ানার নেটিভরা। যার উদযাপন আবার করা হয় ঔপনিবেশিকদের চিনির ক্ষুধা মিটিয়ে। যে ক্ষুধা মেটাতে একসময় গড়িয়েছে নেটিভদের রক্ত। 

১৯০৪ সালের বিশ্ব মেলা
হাওয়াই মিঠাইয়ের দেশি যন্ত্র

বিভিন্ন যন্ত্র রয়েছে এই হাওয়াই মিঠাই তৈরির জন্য। ধোলাইখাল থেকে বানানো এইসব মেশিনে আড়াই কেজি চিনি ব্যবহার করে দিনে ৪০০/৫০০টি হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে ফেলা সম্ভব।

প্রথমে রঙ মিশ্রিত চিনি মেশিনে দেওয়া হয়। ঐ চিনি আগুনের তাপে গলে গেলে সাথে সাথেই মেশিন চরকার মত ঘুরিয়ে চিনিকে জালে রূপান্তরিত করে। পরে কাঠি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বানিয়ে ফেলা হয় হাওয়াই মিঠাই। তারপর পলিথিন দিয়ে আটকে রাখা হয় হাওয়াই মিঠাই। সাধারণত এই হাওয়াই মিঠাইয়ের স্থায়িত্ব নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে। গ্রীষ্মকালে ২ ঘণ্টা আর শীতকালে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা এর স্থায়িত্ব থাকে। প্রতিটি হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয় সাইজ অনুযায়ী ১০ টাকা এবং ২০ টাকায়।

হাওয়াই মিঠাইয়ের যন্ত্রের দামও বেশি নয়। ম্যানুয়াল যন্ত্রের দাম গুণগত মান অনুযায়ী দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর ইদানিং বিদ্যুতে চলা অটোমেটেড যন্ত্র বাজারে এসেছে, যার দাম পড়ে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও হাওয়াই মিঠাই

ভারতের মতোই অধিকাংশ বাংলাদেশের হাওয়াই মিঠাই প্রস্তুতকারক চিনির সাথে বিভিন্ন কাপড়ের রঙ ব্যবহার করে প্রস্তুত করে হাওয়াই মিঠাই। এক কেজি চিনিতে তারা মেশায় ৩/৪ গ্রাম কাপড়ের রঙ।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের রোডের বেশ কিছু দোকান থেকে এ রঙ ক্রয় করে থাকেন কেউ কেউ। সেই কথা স্বীকারও করলেন মো. আরমান শাহ নামের একজন হাওয়াই মিঠাই উৎপাদক ও বিক্রেতা। দিনাজপুরের এই হাওয়াই মিঠাই উৎপাদক ও বিক্রেতা একযুগেরও বেশি সময় এ পেশায় আছেন। বিক্রি করেন মহাখালী এলাকায়।

তিনি জানান, ফেরি করে যে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন তাতে লাভের পরিমাণ কম থাকে এবং পরিশ্রম বেশি হয়। কেননা ক্রেতাকে খুঁজে বের করতে হয়। এক্ষেত্রে ১২০০-১৪০০ টাকার বিক্রিতে লাভ থাকে ৫০০-৬০০ টাকা।

মো. তারেক শাহিন বলেন, চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের লাভ হয় দ্বিগুণ। আর পরিশ্রম একেবারেই হয়না। সাধারণত শীত ও বসন্তকালে বিভিন্ন মেলা,ওরশ, বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠান হয়। তাই এটিই হাওয়াই মিঠাই বিক্রির মওসুম। 

আরমান শাহকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চুক্তি করে দেন পল্লী বাংলা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের স্বত্তাধিকারী মো. তারেক শাহিন। তিনি জানান, বছরে ৩০-৪০টি অনুষ্ঠানে হাওয়াই মিঠাই সরবরাহের চাহিদা থাকে। অনুষ্ঠানে তাৎক্ষণিকভাবে এটি বানানো হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাস চাহিদা খুব বেশি থাকে।   

বাংলাদেশে সুনামের সাথে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে যাচ্ছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কিডস ক্যাপিটাল। তাদের প্রস্তুতকৃত হাওয়াই মিঠাই বাজারজাত করা হচ্ছে কালার ক্লাউডস নামে। 

কালার ক্লাউডসের বিজনেস কনসালটেন্ট জাহিদুর রহমান খান সকাল সন্ধ্যাকে তাদের তৈরি হাওয়াই মিঠাই স্বাস্থ্যসম্মত দাবি করে বলেন, “বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা স্বাস্থ্যসম্মত হাওয়াই মিঠাই বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে থাকে। আমাদের হাওয়াই মিঠাইয়ে যে চিনি আমরা ব্যবহার করি তাতে ক্ষতিকর গ্লুটেন থাকে না। তাছাড়া আমরা ফুড গ্রেডেড কালার ব্যবহার করি। যার মাত্র ২৫ গ্রামের দাম ১৬০ টাকা।”

তিনি বলেন, “অনেক বিক্রেতাই আছে যারা কাপড়ের রঙ ব্যবহার করেন। অস্বাস্থ্যকর উপাদানে তৈরি সেইসব হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার পরে জ্বিহবা গোলাপি বা হাওয়াই মিঠাইয়ের রং ধারণ করে। স্বাস্থ্যকর হাওয়াই মিঠাইয়ে এ সমস্যা নেই। আবার আমাদের তৈরি হাওয়াই মিঠাইয়ের স্থায়িত্বও বেশি, ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত