Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

চিনি ছাড়া নিজেকে চিনে নিন

cutdownsugar-080423

ঈদ, পূজা, বিয়ে, জন্মদিন, পরীক্ষায় পাশ, নতুন চাকরি অথবা পদোন্নতি মানেই মিষ্টিমুখ করা সামাজিক ঐতিহ্য। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কোমল পানীয় খাবেন, তাও তো মিষ্টি!

এসব মিষ্টি মানে চিনি। সাদা ঝকঝকে রঙের চিনির ইংরেজি হোয়াইট সুগার; যার রূপক নাম হয় এক সময় সাদাবিষ।

চিনি ছাড়া শরীর কতটা বিষমুক্ত তা নিয়ে একদল গবেষক কাজ করেছেন। ৪০ জন শিশু ১০ দিন চিনি ছাড়া কাটিয়ে দেওয়ার পর কী ঘটল তাদের শরীরে?   

ট্যুরো ইউনোভার্সিটির কলেজ অব অস্টেওপ্যাথিক মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক গ্রেস ম্যারি জোনসের বরাতে এ নিয়ে জানাচ্ছে এনডিটিভির প্রতিবেদন।

চিনি কি আমরা চিনি?

চিনির দিন মনে হয় ফুরাতে চলেছে। হালের গবেষণা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে শরীরে বাসা বাঁধা অসুখের পেছনে চিনির ষড়যন্ত্র। হৃদরোগ, স্থূলতা, টাইপ টু ডায়বেটিস, দাঁত ক্ষয় থেকে ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হয়ে ওঠে চিনি।

শরীরে ফ্রুক্টোজের জোগান হলে কীভাবে অসুখের জন্ম হয় সেই প্রক্রিয়া জানতে এক দশক ধরে বিভিন্ন গবেষণা চলেছে।

এরমধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলের অনেক দেশ চিনি সেবন কমানোর বৈশ্বিক ডাকে সাড়া দিয়েছে। স্থূলতা, ডায়াবেটিক এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ কমাতে ২০১৮ সালে সাউথ আফ্রিকা চিনি জাতীয় কোমল পানীয়তে কর আরোপ করে।   

আমাদের জীবন যাপনে মিষ্টি জাতীয় খাবার খুব স্বাভাবিক ভাবেই যোগ হয়ে যায়; আর উৎসবের দিন হলে তো কথাই নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যের শত্রু চিনিকে একবার চিনতে পারলে স্বাস্থ্যকেই সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।

ফল, সবজি, গাছ, স্তন্যপ্রায়ী প্রাণির দুধে প্রাকৃতিক ভাবেই চিনি থাকে। এসব প্রাকৃতিক উৎস থেকে চিনি সংগ্রহ করে পরে প্রক্রিয়াজাত খাবারে যোগ করা যায়।  

খাবার চিনি বা সুক্রোজে মিষ্টি স্বাদ আনে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ উপাদান দুটি। সুক্রোজ হলো ডাইস্যাকারাইড বা দ্বিআণবিক শর্করা। একে ইংরেজিতে ডাবল সুগারও বলে। ১:১ অনুপাতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের রাসায়নিক বন্ধনে চিনির অণু গঠন হয়। অসংখ্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে সুক্রোজ দেওয়া হয়।  

উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজ থাকা ভুট্টার সিরাপও দেওয়া হয়; যা মনোস্যাকারাইড গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের মিশ্রণ। এতে ৪৫ শতাংশ গ্লুকোজ এবং ৫৫ শতাংশ ফ্রুক্টোজ থাকে।

ফল ও সবজির তুলনায় প্রক্রিয়াজাত খাবারে অত্যন্ত ঘন ভাবে সুক্রোজ ও উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজ থাকা ভুট্টার সিরাপ মেশানো হয়।   

খাবার ও পানীয়তে বাড়তি চিনি যোগ করা হয়। এছাড়া খাবারে রঙ ও নকশা করতে কিংবা খাবার সংরক্ষণ ও গাঁজনেও এই চিনি করা যোগ করা হয়।  

প্রতিদিনের খাবার থেকেও প্রাকৃতিক চিনি পাই আমরা। ল্যাকটোজ হলে দুগ্ধজাতীয় চিনি। এই দ্বিআণবিক শর্করায় ১:১ অনুপাতে থাকে গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ। স্তন্যপায়ীদের দুধে প্রাকৃতিক ভাবে এই চিনি থাকে যা তাদের সন্তানদের মাতৃদুগ্ধ পানের সময় পুষ্টির জোগান দেয়। চিজ এবং আইসক্রিমেও এই চিনি পাওয়া যায়।

মৌমাছির চাক ভেঙ্গে যে মধু হয় তাতে থাকে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের মতো মনোস্যাকারাইড। আরও থাকে সামান্য মল্টোজ, সুক্রোজ এবং অন্যান্য কার্বোহাইড্রেডস। নাশতায় খাওয়া সিরিয়াল ও রুটিতে মল্টোজ থাকে; যা দুটি গ্লুকোজ অণু দিয়ে গঠন হওয়া ডিস্যাকারাইড।  

গাছ, মৌমাছি ও স্তন্যপায়ীদের চাহিদা অনুসারে প্রাকৃতিক চিনি তৈরি হয়।

মানুষের শরীরে কোষের জ্বালানি হলো গ্লুকোজ; বিশেষ করে মস্তিষ্কের কোষের বেলায়। এ কারণেই আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা দিনরাত ভারসাম্যে রাখতে হয়।

শরীরে ফ্রুক্টোজের জোগান হলে তা ভেঙ্গে গ্লুকোজ হতে পারে; যা শরীরের কাজে লাগে। আবার ওই ফ্রুক্টোজ থেকে চর্বি অর্থ্যাৎ ট্রাইগ্লিসারিডও তৈরি হয়। যদি ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি হয় খাবারে, তাহলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারিড বেড়ে যায়। যকৃতে চর্বি, রক্তে শর্করা, বিএমআই বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে শরীরে।

এসব কারণে শরীরে বিপাকচক্রেও ছন্দপতন ঘটে। দেখা দেয় টাইপ টু ডায়বেটিস এবং ফ্যাটি লিভার রোগ।

গ্লুকোজ ও ফ্রক্টোজকে ভাঙতে শরীরের ভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে অতিরিক্ত চিনি শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে ওঠে। আর তাই খাবারে চিনির পরিমাণ নিয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে।

চিনি ছাড়া শরীর কেমন থাকে?

গবেষকদের নির্দেশনা অনুসারে আট থেকে ১৮ বছর বয়সী ৪০ জন শিশু ১০ চিনি ও ফ্রুক্টোজ না খেয়ে ছিল। তারা রুটি, হটডগ এবং স্ন্যাকস খেয়েছিল। তারপর পরীক্ষায় দেখা গেল নতুন করে চর্বি তৈরি হওয়া কমে গেছে। খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও কমেছে। রক্তচাপ, যকৃৎ ও অন্যান্য অঙ্গে চর্বি জমার পরিমাণও কমতির দিকে। যকৃতে এএসটি এনজাইমের পরিমাণ কমেছে। বডি মাস ইনডেক্স কমেছে।  ইনসুলিন প্রতিরোধিতা কমেছে এবং শরীর রক্তপ্রবাহ থেকে আরও সহজে গ্লুকোজ আলাদা করতে পারছে।  

গবেষণায় অংশ নেওয়া সবাই জানিয়েছিল, তারা আগের চেয়ে ভালো বোধ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, পূর্ণ বয়স্ক এবং শিশুদের অবশ্যই চিনি সেবন কমিয়ে প্রতিদিন ৫৮ গ্রাম বা ১৪ চা চামচে আনতে হবে। চিনি সেবনের এই পরিমাণ প্রতিদিনের জন্য অথবা দিনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্যালরির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

৩০০ মিলিলিটার বোতল কোকাকোলা অথবা ২৪০ মিলিলিটার আখের রসে ৩০ গ্রাম চিনি থাকে। কেনিয়ায় গম দিয়ে তৈরি স্ন্যাকস তেলে ভাজা এক টুকরো মানডাজিতে চার গ্রাম চিনি থাকে; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়ার দিনের চিনির পরিমাণের ৬ শতাংশ।   

কী করে চিনি খাওয়া কমাবেন?

স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে প্রতিদিন যা যা খাওয়া হয় সেসবে কড়া নজর দিতে হবে। কখন কখন খাওয়া হচ্ছে সেই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ।

তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাসের জন্য নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ে দেওয়া যায়। অন্যদিকে যেসব খাবারে বাড়তি চিনি যোগ করা হয় সেসব নিয়ে সজাগ হতে হবে।

এবার নিজেই নিজের কাছে ওয়াদা করুন – খাবারে তাজা আস্ত ফল ও সবজির পরিমাণ বাড়াবেন অথবা প্রতিদিনের খাবারে চিনির পরিমাণ কমাবেন।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত