Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

ভারতে ভোট ৭ দফায়, শুরু ১৯ এপ্রিল

ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এপি।
ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এপি।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের লোকসভার অষ্টাদশ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে ১ জুন পর্যন্ত ৪৪ দিনের মধ্যে ৭ দফায় (৭ দিন) এই ভোটগ্রহণ হবে। ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ১৬ জুন।

শনিবার (১৬ মার্চ) নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাজীব কুমার এই সময়সূচি ঘোষণা করেন। এদিন থেকে শুরু হওয়া এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলবে ৮২ দিন ধরে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাজীব কুমার জানান, আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ১০২টি আসনে ভোট হবে। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি আসনে, তৃতীয় দফায় ৭ মে ৯৪টি আসনে, চতুর্থ দফায় ১৩ মে ৯৬টি আসনে, পঞ্চম দফায় ২০ মে ৪৯টি আসনে, ষষ্ঠ দফায় ২৬ মে ৫৭টি আসনে ও সপ্তম দফায় ১ জুন ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে।

এরপর দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সব ভোট একদিনেই গণনা করা হবে ৪ জুন।

একই সময়ে দেশটি চারটি রাজ্যেও বিধানসভা নির্বাচন হবে। অরুণাচল, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও সিকিমে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। প্রদেশগুলোর বিধানসভার মেয়াদও শেষ হবে জুনে, তাই একই সঙ্গে তাদের নির্বাচনেরও আয়োজন করা হয়েছে। সব নির্বাচনের ফলাফলই ৪ জুন ঘোষণা করা হবে। ছয় সপ্তাহের ভোটের সময় সারা দেশে ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন বিজেপিই জিতবে। তাহলে টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিরল রেকর্ড গড়বেন নরেন্দ্র মোদী। এর আগে শুধু একজন টানা তিনবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি হলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের একজন জওহরলাল নেহরু।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু প্রায় ১৬ বছর ৯ মাস একটানা দেশটি শাসন করেছিলেন। আর তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী শাসন করেছিলেন ১৫ বছর ১১ মাস।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মোদীর নেতৃত্বে ভারত ২১ শতকের একটি অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউসে পরিণত হতে চলেছে। দেশটির অর্থনীতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জনতুষ্টিবাদী এই নেতা এমনভাবে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার করায়ত্ত করেছেন, যা ১৯৭০ এর দশকে ইন্দিরা গান্ধীর লৌহশাসন ছাড়া আর কখনও দেখা যায়নি। দেশটির সংখ্যালঘুরা বিজেপির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী নীতির অধীনে নির্যাতিত বোধ করে এবং ভিন্নমতও স্তব্ধ।”

মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, যেটি ভারতের স্বাধীনতার ৭৭ বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে দেশটি শাসন করেছে। গত বছর কংগ্রেস আরও কয়েকটি বিজেপি বিরোধী দল নিয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়া (INDIA) নামে একটি বহুদলীয় জোট গঠন করেছে। গত দশকে ভারতে বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদের ব্যাপক উত্থান উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরোনো গণতান্ত্রিক দল কংগ্রেসকে তার জাতীয় তাৎপর্য পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ঠেলে দিয়েছে। সেই সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দলটি বারবার জোট গড়ে নির্বাচনে লড়ছে।

কিন্তু প্রায় দুই ডজন দলের এই জোটে ইতোমধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি তারা এখনও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারেনি। দৃশ্যত মোদীর তারকা ইমেজ ও আবেদনের সঙ্গে লড়ার মতো লোক খুঁজে পাচ্ছে না তারা।

বিপরীতে মোদী নিজেকে এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যেন যিনি দেশটিকে একটি আধুনিক বৈশ্বিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন।

গত বছরের আগস্টে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়ে ইতিহাস গড়েছে। তার কয়েক সপ্তাহ পরে দেশটি সূর্য নিয়ে গবেষণার জন্যও তার প্রথম মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বমঞ্চেও তার নেতৃত্ব প্রসারিত করার সুযোগ পায়।

সিএনএন বলছে, এবছরের জানুয়ারিতে অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে মোদী তার নির্বাচনী প্রচারের অনানুষ্ঠানিক সূচনা করেন। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে দেশটির অযোধ্যা শহরে হিন্দুদের দেবতা রামের কথিত জন্মভূমিতে, যেখানে আগে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের একটি ঐতিহাসিক মসজিদ ছিল। ১৬ শতকে মুঘল সম্রাট বাবুরের আমলে নির্মিত মসজিদটির নাম ছিল বাবরি মসজিদ।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্লেষকরা বলছেন এই মন্দির নির্মাণের মধ্য দিয়ে মোদী ভারতকে তার প্রতিষ্ঠাকালীন ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ থেকে পুরোপুরি বিচ্যুত করেছেন। তৃতীয় মেয়াদেও জয়লাভ করার জন্য মোদী রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখার মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতিকে উপেক্ষা করছেন। তবে দেশটির জনসংখ্যার বিশাল অংশই মোদীর এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট। তার সমর্থকরা দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বিশ্বাসের প্রতি তার এমন নিবেদিতপ্রাণ ভক্তিই দেখতে চান।

২০১৯ সালে মোদীর বিজেপি লোকসভায় ৩০৩টি আসন জিতেছিল, যা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের চেয়েও অনেক বেশি। ১৯৮০ সালে গঠিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি সেবারই প্রথম এত বেশি আসনে জয় পায়। এর মধ্য দিয়ে দেশের সবচেয়ে পুরোনো গণতান্ত্রিক দল কংগ্রেসকে একটি অপমানজনক ধাক্কা দেয় বিজেপি। গত নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ৫২টি আসন পেয়েছিল। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স পেয়েছিল মোট ৯১টি আসন।

টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবারের নির্বাচনে তার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য ৩৭০টি আসন আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) জন্য ৪০০-র বেশি আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।

এর জন্য নরেন্দ্র মোদী গত কয়েকমাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই সারাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন, ঘোষণা দিচ্ছেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন এবং সরকারি-বেসরকারি সভায় ভাষণ দিচ্ছেন।

ভারতে এর আগে কোনও দল প্রথম ৩৭০ আসন অতিক্রম করেছিল ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর কংগ্রেস পার্টি ৪১৪টি আসন জিতেছিল।

গত বছর ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকেও পেছনে ফেলেছে। দেশটির জনসংখ্যা এখন ১৪০ কোটি। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতের কর্মজীবী জনসংখ্যা এখন ৯০ কোটিরও বেশি। ভারত সরকারের হিসাব মতে, আগামী দশকে এই সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের নির্বাচন : এক নজরে

আসন: লোকসভার মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। এরমধ্যে ৫৪৩টি আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। দুটি আসনে প্রেসিডেন্টের মনোনয়নের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভোটার সংখ্যা: মোট নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮৮ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি ৮২ লাখ প্রথমবার ভোটার হয়েছেন। আর ১৯ কোটি ৪৭ লাখ ভোটারের বয়স ২০-২৯ বছর। ১২টি রাজ্যে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। ভোটারের সংখ্যার হিসাবে ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচন মানবেতিহাসের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক নির্বাচন হতে চলেছে। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ মহাদেশ ও রাশিয়ার মিলিত জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ২০১৯ সালের চেয়ে দেশটিতে ভোটার বেড়েছে ৬ শতাংশ।

ভোটকেন্দ্র : মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার। নিরাপত্তাকর্মীসহ ১ কোটি ৫০ লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তা রয়েছে। এ ছাড়া ৫৫ লাখ ইভিএম ও ৪ লাখ গাড়ি ব্যবহৃত হবে।

দল: ভারতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ২৬৬০টি।

ভোটের হার: ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৯১ কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৬১ কোটি ২০ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তার মানে গত নির্বাচনে ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৭.৪০ শতাংশ ভোট পড়ে। নারীদের অংশগ্রহণও ২০১৯ সালে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ছিল- ৬৭.১৮ শতাংশ।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত