Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

মেনোপজ উপসর্গে ভোগে পুরুষও

malemenopause-110424

হুট করে ওজন বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে? কিংবা গা জ্বালাপোড়া মানে হট ফ্লাশ হচ্ছে কি? যৌন সম্পর্কে আজকাল কি খানিক অনীহা লাগে?

নিজের মধ্যে এসব সমস্যা নিজেই খেয়াল করেছেন? আপনার সঙ্গী কি কখনও বলেছে আপনার মধ্যে এসব পরিবর্তনের কথা?

পুরুষের বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ তেমন গুরুতর বলে মনোযোগ পায় না।  এনডিটিভির এক প্রতিবেদন বলছে, এসব লক্ষণ জানান দেয় পুরুষের শরীরেও আসতে পারে মেনোপজ।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণু নিঃশেষ হতে হতে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি ঘটে নারীর। পুরুষের শরীরে এভাবে মেনোপজের আগমন না হলেও, টেস্টোস্টেরন হরমোনের কমে যাওয়া নারীর মতোই ভোগায় পুরুষকেও।  

পুরুষের মেনোপজ বোঝার জন্য ইংরেজিতে একে অ্যান্ড্রোপজ বা মেল মেনোপজও বলে।

বয়স বাড়ার প্রক্রিয়ায় পুরুষের পেশী শিথিল হতে থাকে, চুলে পাক ধরে। পরীক্ষায় দেখে গেছে এসময় শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা অনেকখানি কমে যায় তাদের।  

ভারতের নিউ দিল্লি এবং বৃন্দাবন শহরের মাদারস ল্যাপ আইভিএফ সেন্টারের  একজন  আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল ডিরেক্টর  ড. শোভা গুপ্তা।  

তিনি পুরুষের অ্যান্ড্রোপজ ব্যাখ্যা করে বলেন, ”এসব নিয়ে জানার ঘাটতি আছে কারণ তেমন কোনো গবেষণাই হয়নি। হরমোনের কমে যাওয়া নারীর শরীরে যতটা প্রকট সমস্যা ডেকে আনে, পুরুষের ততটা হয় না। গোনাডাল হরমোনের ঘাটতিতে পুরুষের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।“

“তবে কোনো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে অর্থ হলো নির্ঘাত কাজে চাপ রয়েছে, বিবাহিত জীবনে অশান্তি চলছে, জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম দশা চলছে; আর এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে হরমোনের ঘাটতিও।”  

অ্যান্ড্রোপজ কী?

বয়স বাড়তে থাকলে পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে বলে জানালেন ড. শোভা গুপ্তা।

“এছাড়া ডায়াবেটিসের কারণেও এই হরমোন তৈরি কমে যায়। যদি নিয়মিতভাবে এই হরমোনের মাত্রা কমে যেতে থাকে তবে তা বয়সের কারণে হচ্ছে বলেই ধরে নিতে হবে; একে লেট-অনসেট হাইপোগোনাডিজস বা এলওএইচ বলে।”

ক্লান্তি বোধ করা, যৌনাকাঙ্খা কমে যাওয়া এবং মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটার অর্থ এই হরমোনের ঘাটতি হচ্ছে।  এছাড়া অবসাদ ও বিরক্তি বেড়ে যেতে পারে। মাংসপেশীর ব্যথা ভোগাতে পারে। মাঝে মাঝে হাত ও পা শীতল হয়ে আসে। আবার শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে। কারও কারও বেলায় ওজন বেড়ে যায়, কারও কারও আবার ওজন কমে যেতে পারে।

পুরুষের জীবনে কেন অ্যান্ড্রোপজ আসে?

টেস্টোস্টেরন অনেক জরুরি হরমোন পুরুষের শরীরে। যৌন চাহিদা, পেশীর টান টান থাকা, বীর্য উৎপাদনের পেছনে কাজ করে এই হরমোন। হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রক্ত তৈরিতে দরকার হয় টেস্টোস্টেরন হরমোনের;  যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ও শুক্রাশয়ে  তৈরি হয়।   

বয়স বাড়ার কালে পুরুষ শুক্রাণু  এবং টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের সক্ষমতা হারাতে থাকে। পুরুষের শরীরের এই পরিবর্তনকেই অ্যান্ড্রোপজ বলে।  আর এই পরিবর্তন আসে পুরুষের ৪০ বছর বয়সেই। যদিও কারও কারও বেলায় অ্যান্ড্রোপজ আগেও ঘটতে পারে। ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত অ্যান্ড্রোপজের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

আইভিএফ বিশেষজ্ঞ শোভা গুপ্তা বলেন, “অ্যান্ড্রোপজ নিয়ে হালেই কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

“যদিও অনেক চিকিৎসক এবং মনোবিদ এখনও পুরুষের মেনোপজ ঘটে বলে মানতে চান না। কারণ সব পুরুষের জীবনে এভাবে মেনোপজ আসে না। আর যারা এসব উপসর্গে ভোগেন তারা আবার এসব প্রকাশ করতে চান না। এক্ষেত্রে নারী যেমন করে থাকে, পুরুষও তেমনই আচরণ করছে।”

অ্যান্ড্রোপজ পরীক্ষা ও চিকিৎসা

যদি উপসর্গ দেখা না দেয় তেমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা থেকে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দেখা যেতে পারে। যদি কম থাকে তাহলে হরমোন পরিস্থাপন থেরাপি বা এইচআরটি নিতে হবে। চিকিৎসক হয়তো জীবন যাপনেও রদবদলের পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন- শরীরচর্চা বাড়াতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে বেশি করে।  

জীবনে অ্যান্ড্রোপজ এসেছে এমন পুরুষদের জন্য চিকিৎসক শোভা গুপ্তা এক গুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন।  

১. পুষ্টিকর খাবার: প্রতিদিন ফল, সবজি, মাংস, মাছ এবং দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণে ভারসাম্য রাখতে হবে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রতিদিন শরীরচর্চার অভ্যাস, পেশী ও শরীরের নমনীয়তার প্রতি নজর দিতে হবে।  এর সঙ্গে নিয়ম করে প্রোস্টেট, টেস্টিকুলার, ক্যার্ডিওভাসকুলার ক্যান্সার এবং অন্যান্য  স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে।  

৩. হরমোন: ৪০ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে পুরুষের অনেক জরুরি হরমোন উৎপাদন কমে আসতে থাকে। বয়স যখন কড়া নাড়বে একটু একটু করে তখন অবশ্যই শরীরের হরমোনের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

৪. চাপ কমান: সঙ্গী, বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে নিজের কঠিন সময় নিয়ে কথা বলার চর্চা করতে হবে পুরুষকে। এতে করে মানসিক প্রশান্তি বাড়বে।

৫. অন্তরঙ্গতা: মেনোপজের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় পুরুষ উপলব্ধি করার সুযোগ পাবে সম্পর্কে যৌনতার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এতেও দুজনের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়; নির্ভরতা এবং বন্ধুত্ব বাড়ে। এসবের সঙ্গে অবশ্য ভালো ঘুমের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

পুরুষের ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে মেনোপজের সময় তার অভিজ্ঞতা কেমন দাঁড়াবে। নারীর মেনোপজ নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও অ্যান্ড্রোপজের আরও দিক নিয়ে জানার বাকি রয়েছে এখনও। তারপরই স্পষ্ট হবে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে এই সময় পুরুষের জীবনে কীভাবে স্বস্তি ধরে রাখা যায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত