Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪
লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ

ভারতে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভাগ্য পরীক্ষার ভোট চলছে

ভারতে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ১৩ রাজ্যের ৮৮টি আসনে ভোট গ্রহণ চলছে।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ১৩ রাজ্যের ৮৮টি আসনে ভোট গ্রহণ চলছে।

ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ১৮তম নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

আজ ১৩টি রাজ্য- ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মোট ৮৮টি আসনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে।

দ্বিতীয় দফার ভোটকে বলা হচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভাগ্য পরীক্ষার ভোট। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ অ্যানি রাজা, শশী থারুর, নবনীত রানা, ওম বিড়লা, হেমা মালিনী, অরুণ গোভিল ও প্রহ্লাদ যোশীর মতো বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রবীণ ও ওজনদার প্রার্থীরা আজ নির্বাচনী লড়াইয়ের মাঠে রয়েছেন।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধী দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের ওয়ানাড থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

গতবার এই আসনে ৪ লাখের বেশি ভোটে জয়ী হন রাহুল। এবার তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে ইন্ডিয়া জোটের শরিক সিপিআই। বিজেপিও জোরদার লড়াইয়ে নেমেছে। রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে কে সুরেন্দ্রনকে। ফলে ওয়ানাডে এবার ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে।

কেরালায় মোট ২০টি আসনে ভোট হচ্ছে। সেখানে প্রধানত বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই হবে। বিজেপি এবার সেখানে তৃতীয় শক্তি হিসেবে মাথাচাড়া দিয়েছে। তবে এর আগের কোনও নির্বাচনে বিজেপি কেরালায় একটিও আসন পায়নি।

কেরালায় কংগ্রেস ও বামপন্থীরা পরস্পরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সর্বভারতীয় স্তরে তারা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের শরিক ও বিজেপিবিরোধী। ফলে কেরালায় যেই জিতুক, তা ইন্ডিয়া জোটের পাল্লাই ভারী করবে।

কেরালার পাশের রাজ্য কর্ণাটকের ২৮টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে আজ ভোট গ্রহণ হচ্ছে। গত নির্বাচনে বিজেপি কর্ণাটকে ২৫টি আসনে জিতেছিল। তবে গত বছর প্রাদেশিক নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস সেখানে সরকার গঠন করে। কর্ণাটকে বিজেপির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় মোদীর দল লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে ঠেকাতে রাজ্যটির তৃতীয় শক্তি জেডিএসের সঙ্গে জোট বেধেছে।

রাজস্থানের ২৫ আসনের মধ্যে ১২ আসনে প্রথম দফায় ভোট গ্রহণ হয়েছে। বাকি ১৩ আসনে আজ ভোট হচ্ছে। এ রাজ্যেও গতবার বিজেপি সবকটি আসনে জিতেছিল।

এ ছাড়া মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের ৮টি করে আসনে, মধ্যপ্রদেশের ৭টি আসনে, বিহার ও আসামের ৫টি করে আসনে, ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের ৩টি করে আসনে এবং মণিপুর, ত্রিপুরা ও জম্মু-কাশ্মীরের ১টি করে আসনেও আজ ভোট হচ্ছে।

বিজেপির তারকা প্রার্থী বলিউডের সাবেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী হেমা মালিনী লড়ছেন উত্তর ভারতের মথুরা আসনে। এই আসনেরই সংসদ সদস্য তিনি।

হেমা মালিনী, রাহুল গান্ধী ও শশী থারুর

ভারতের মুসলমানদের নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একের পর এক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের মাঝেই দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে।

গত ২১ এপ্রিল মোদী বিজেপির প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ক্ষমতায় ফিরলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘যাদের বেশি সন্তান রয়েছে’ তাদের মধ্যে দেশের সম্পদ বণ্টন করে দেবে।

মোদী বলেন, “তারা (কংগ্রেস) যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা বলেছিল সম্পদের উপর মুসলমানদের অধিকার আগে। তারা আপনাদের সমস্ত ধন-সম্পদ একত্র করে তাদের মধ্যে বণ্টন করবে, যাদের বেশি সন্তান আছে। তারা অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে আপনাদের সম্পদ বিতরণ করবে।”

এরপর জনতার উদ্দেশে মোদী আরও বলেন, “আপনার কষ্টার্জিত অর্থ কি অনুপ্রবেশকারীদের দেওয়া উচিৎ?”

এরপর ২৩ এপ্রিল রাজস্থান রাজ্যে আরেকটি নির্বাচনী সমাবেশে মোদী আবারও বলেন, কংগ্রেস হিন্দুদের সম্পত্তি হস্তগত করে তাদের পছন্দের মানুষদের মধ্যে বিতরণ করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে।

মোদী আরও বলেন, কংগ্রেস শিক্ষা, চাকরি, সরকারি প্রকল্প থেকে অনগ্রসর শ্রেণি, তফসিলি জাতিগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত কোটাও কেড়ে নেবে। সেসব কোটা দেওয়া হবে মুসলমানদের। এর মধ্য দিয়ে মোদী পিছিয়ে পড়া নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও দলিতদেরও বিজেপির পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন।

বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রথম দফায় আশানুরূপ ভোট না পড়ায় মোদী হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক আবেগ উসকে দিয়ে ভোটে টানার চেষ্টা করছেন। প্রথম দফায় হিন্দুদের তুলনায় মুসলিম ভোটারদের উপস্থিতি ও ভোটদানের হার বেশি ছিল বলে জানা গেছে। হিন্দু ভোটারদের মাঝে এবার মোদী জোয়ার ওঠেনি।

মোদী এবার বিজেপির জন্য ৩৭০ আসন আর এনডিএ জোটের জন্য ৪০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন। এর আগে ভারতের ইতিহাসে আর একবারই কোনও দল বা জোট এতো বেশি আসন পেয়েছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর কংগ্রেস ৪১৪টি আসন জিতেছিল। গত নির্বাচনে বিজেপি জয় পেয়েছিল ৩০২ আসনে, যা দলটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ১০২টি আসনে ভোট হয়। প্রথম দফায় মোট প্রায় ৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা আগের নির্বাচনের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। কোনও কোনও রাজ্যে ৮ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে।

আগামী ১ জুন পর্যন্ত ৪৪ দিনে ৭ দফায় চলবে এই ভোটগ্রহণ। লোকসভার মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। এরমধ্যে ৫৪৩টি আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। দুটি আসনে প্রেসিডেন্টের মনোনয়নের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়।

তৃতীয় দফায় ৭ মে ৯৪টি আসনে, চতুর্থ দফায় ১৩ মে ৯৬টি আসনে, পঞ্চম দফায় ২০ মে ৪৯টি আসনে, ষষ্ঠ দফায় ২৬ মে ৫৭টি আসনে ও সপ্তম দফায় ১ জুন ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এরপর দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সব ভোট আগামী ৪ জুন একদিনেই গণনা করা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত