Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

এস আলমে আগুনের তাপ খাতুনগঞ্জে

fire-s-alam-group-suger-factory-040324-02
Picture of আসিফ সিদ্দিকী

আসিফ সিদ্দিকী

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার গুদামে আগুন লেগেছে সোমবার বিকালে। এই কারখানার দিনে গড়ে আড়াই হাজার টন চিনি পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। ভয়াবহ আগুনের পর কারখানাটি বন্ধ আছে, বন্ধ চিনি সরবরাহও।

প্রায় দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের পর চিনি কারখানাটি চালুই হয়েছিল গত ১ মার্চ। আগুন লাগার আগে তিন দিনে বেশ কিছু চিনি পরিশোধন করে গুদামে রাখা হয়েছিল। পরিশোধিত সেই চিনি বাজারে পুরোপুরি সরবরাহ দেওয়ার আগেই লাগল আগুন।

এমন সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটল, যখন রোজার আগে বাজারে চিনির চাহিদা বাড়ার কথা। এই সময়ে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার চিনি আমদানির শুল্কও কমিয়েছিল।

বাংলাদেশে বছরে চিনির চাহিদা ২০ লাখ টনের মতো। তার মধ্যে এক লাখ টনের জোগান আসে দেশের উৎপাদন থেকে। চাহিদার বাকিটা আমদানি করেই মেটাতে হয়। বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধনের পর বাজারে ছাড়ে।

দেশে চিনি পরিশোধনে শীর্ষে আছে সিটি গ্রুপ। তাদের পরিশােধন সক্ষমতা দিনে গড়ে ৫ হাজার টন। এস আলম গ্রুপ এবং মেঘনা গ্রুপ যৌথভাবে আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তাদের প্রত্যেকের পরিশােধন সক্ষমতা দিনে আড়াই হাজার টন।

এস আলম গ্রুপের চিনির ক্রেতা মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলকেন্দ্রিক। তবে আগুন লাগার পর কারখানা চালু করতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে বলে ধারণা করছেন এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা।

দাম চড়ছে খাতুনগঞ্জে

আগুন লাগার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের সর্বৃবহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। এই বাজারটি থেকে এস আলমের চিনি পরিশোধন কারখানা মাত্র তিন কিলোমিটার দুরে।

কর্ণফুলী নদীর ওইপাড়ে আগুন লাগার পর থেকেই এপারের উৎসুক ব্যবসায়ীদের নজর ছিল কারখানার দিকে।

চিনির দাম বাড়ানোর সুযোগও কেউ কেউ খুঁজছিলেন, যা বোঝা যায় আগুনের সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়তে চিনির দাম কেজিতে এক টাকা বেড়ে গেলে। মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, চিনির কেজি দুই-তিন টাকা বেড়ে গেছে।

অথচ গত এক সপ্তাহ ধরেই চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে চিনির দাম কমছিল। এস আলম কারখানার আগুন বাজারে উত্তাপ ছড়াল।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চট্টগ্রামের বাজারে এস আলমের চিনিই বিক্রি বেশি হয়। ঢাকার চিনি কিনে গাড়ি ভাড়া দিয়ে আনতে খরচ বেশি হয় বলে আমরা কিনি না। কম-বেশি যা লাভ হয়, এস আলমই কিনি।

“গত একসপ্তাহ ধরেই চিনির বাজারে ক্রেতা ছিল কম। সোমবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার পর থেকেই কিছু আড়ত নিজেদের মতো করেই দাম বাড়িয়েছে।”

শুল্ক কমানোর পর থেকে পাইকারি বাজারে চিনির দাম কমছিল। দাম আরও কমতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছিল। ফলে পাইকারি বাজারে চিনির ক্রেতা ছিল কম।

জামাল বলেন, সোমবার সকালে এস আলমের চিনি মনপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ৪৯৩০ টাকায়; রাতে সেটি বিক্রি হয়েছিল ৪৯৯০ টাকায়।

মঙ্গলবার দুপুরে একই চিনি বিক্রি হয় ৫০৫০ টাকায়। অর্থাৎ সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার মনপ্রতি বেড়েছে ১২০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা।

বাজারে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও আবদুল মোনেম গ্রুপের চিনির দামও বেড়েছে মনপ্রতি ৩০ টাকা।

আড়তদাররা বলছেন, এস আলম গ্রুপের চিনি সরবরাহ শুরু হলে বাজার আগের দরে ফিরবে।

এজন্য এস আলম গ্রুপের গুদামে মজুদ থাকা পরিশোধিত ৫০ হাজার টন চিনি দ্রুতই বাজারে সরবরাহের দাবি তাদের।

বাজারে এখনই প্রভাব পড়ার ‘কারণ নেই’

আগুনের পর দাম বাড়লেও এখনই চিনির বাজারে প্রভাব পড়ার কারণ দেখছেন না এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আখতার হোসেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চিনির বাজারে এখনই উত্তাপ ছড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। আমাদের পরিশোধন কারখানায় কোনও ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি যা হয়েছে অপরিশোধিত চিনি রাখার একটি গুদামে এবং কনভেয়ার বেল্টে; যেই বেল্ট দিয়ে চিনি গুদাম থেকে নেওয়া হয় কারখানায়।”

রোজার আগেই পুনরায় উৎপাদনে যাওয়ার আশা দেখিয়ে আখতার বলেন, “আমরা গ্রুপ চেয়ারম্যান স্যারসহ সবাই সকালে কারখানা ভিজিট করেছি। কারখানা পুনরায় উৎপাদনে যেতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর উৎপাদনে গেলে সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

“আর আমাদের কাছে গুদামেই আছে অপরিশোধিত আড়াই লাখ টন চিনি। পাশাপাশি পাইপলাইনে বা আসার অপেক্ষায় আছে আরও ৬ লাখ ৪১ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি। ফলে বাজারে সরবরাহ সংকটের কোনও কারণ নেই।”

চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশােধন শেষে বাজারে সরবরাহ করার কাজটি করে নাবিল গ্রুপ। তাদের কাছ থেকেই অন্যরা কিনে নেয়। নাবিল গ্রুপের কাছ থেকে আবার চিনি কেনে বাজারে সরবরাহ দেয় চট্টগ্রামভিত্তিক মীর গ্রুপ।

জানতে চাইলে মীর গ্রুপের কর্ণধার আবদুস সালাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা এমন না যে কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ থাকবে। এটা সাময়িক সমস্যা।

“সেই সমস্যাকে পুঁজি করে বাজার অস্থিরতার সুযোগ নেই। আর বাজারে তো চিনি সরবরাহ আছে। নিশ্চয়ই রমজানের আগে এস আলম গ্রুপ বাজারে চিনি সরবরাহ করবে।”

এস আলম গ্রুপ দাবি করেছে, তাদের গুদামে ১ লাখ টন চিনি পুড়ে গেছে; যদিও পুড়ে যাওয়া সেই গুদামের ধারণ ক্ষমতাই ৬০ হাজার টন।

এরকম পাঁচটি গুদাম আছে পরিশোধন কারখানার পাশে। গুদাম থেকে কনভেয়ার বেল্টে অপরিশোধিত চিনি যায় কারখানায়। সেখানে পরিশোধন শেষে চিনি রাখা হয় পাশের আরেকটি গুদামে। সেই গুদাম থেকেই চিনি বাজারে সরবরাহ করা হয়। এখন সেই চিনি সরবরাহ বন্ধ আছে।

একটি কারখানা আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর সেই কারখানা পুনরায় সচল করতে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়।

এক সপ্তাহের মধ্যেই এতগুলো ধাপ সম্পন্ন করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে আখতার হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো যত দ্রুত ছাড়পত্র দেবে, তত দ্রুতই আমরা উৎপাদন শুরু করতে পারব।”

তবে খাতুনগঞ্জের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী সকাল সন্ধ্যাকে বলছেন, “যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিনি কেনা হয়েছে, তার মালিক তো এস আলম গ্রুপ। ইন্সুরেন্স কোম্পানির মালিকও তারা। ফলে সেই ছাড়পত্র পেতে খুব বেশি জটিলতা নেই। আর ইন্সুরেন্স কভারেজ পেলে দুর্ঘটনায় তাদের আর্থিক ক্ষতিও উসুল হয়ে যাবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত