Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে ডান আর যুক্তরাজ্যে বাম দিয়ে গাড়ি চলে কেন

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৭৬টি দেশে এখনও রাস্তার বাম পাশ দিয়েই গাড়ি চলে। ছবি: রিডার্স ডাইজেস্ট।
যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৭৬টি দেশে এখনও রাস্তার বাম পাশ দিয়েই গাড়ি চলে। ছবি: রিডার্স ডাইজেস্ট।

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ দেশে বর্তমানে রাস্তার বাম পাশ দিয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকি ৭০ শতাংশ দেশে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে গাড়ি চলে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ যে দেশগুলো একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, সেগুলোর বেশিরভাগেও রাস্তার বাম পাশ দিয়েই গাড়ি চলে। তবে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশসহ আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশেই রাস্তার ডান পাশ দিয়ে গাড়ি চলে।

কিন্তু কেন একেক দেশে রাস্তার একেক দিক দিয়ে গাড়ি চালানোর নিয়ম? কীভাবে বিশ্বের দেশগুলোতে এই ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম চালু হলো?

ইউরোপের দেশগুলোতে রাস্তার ডান দিয়ে গাড়ি চালানোর নিয়ম তৈরির কৃতিত্ব ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্টের। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এই কৃতিত্ব ফোর্ড গাড়ির নির্মাতা হেনরি ফোর্ডকে দেওয়া হলেও তা ভুল। কারণ ফোর্ড গাড়ি বাজারে আসার এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠারও অনেক আগে থেকেই দেশটিতে রাস্তার ডান দিক দিয়ে গাড়ি চালানোর রীতি প্রচলিত।

১৮ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার কনেস্টোগাতে এক ধরনের মালবাহী ওয়াগন চলত। সেই কনেস্টোগা ওয়াগনই মূলত দেশটিতে রাস্তার ডান দিক দিয়ে গাড়ি চলাচলের নিয়মের মূল হোতা। সেই ওয়াগনের সর্বাধুনিক উত্তরসূরী টেসলার সাইবার ট্রাক।

কনেস্টোগার ওয়াগন ট্রেন

লম্বা খিলানে কাপড়ের ছাদযুক্ত এই বড় ওয়াগনগুলো আমেরিকায় ইউরোপীয়দের পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। কনেস্টোগা ওয়াগনের মাধ্যমেই ইউরোপীয়রা তাদের মালামাল পূর্ব থেকে পশ্চিম সীমান্তে নিয়ে যেতেন। ১৭শ’ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিম পেনসিলভানিয়াই ছিল দূরবর্তী পশ্চিম সীমান্ত।

স্থানীয় ছুতোর ও কামাররাই এই কনেস্টোগা ওয়াগন বানাতেন। বাড়িঘরের মালামালসহ ফিলাডেলফিয়ার বাজারে স্থানীয় আমেরিকানদের কাছ থেকে কেনা জিনিসপত্র, কৃষি দ্রব্য ও বিভিন্ন পণ্য বহন করার কাজে ব্যবহৃত হত এই ওয়াগন। ফিলাডেলফিয়া সেই সময়ে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম শহর ছিল।

৫-৭টি ঘোড়া এই ওয়াগন টেনে নিয়ে যেত। কিন্তু চালকের বসার জন্য নির্দিষ্ট কোনও আসন থাকত না। যার ফলে একজন ডানহাতি চালক সবার বামে যে ঘোড়া থাকত তার ওপর বা গাড়ির বাম পাশে লাগানো কাঠের ওপর বসতেন। এরপর চালক ডান হাতে একটা চাবুক নিয়ে একসঙ্গে সবগুলো ঘোড়াকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।

কিন্তু যখন আরও সক্রিয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হত, তখন চালক ঘোড়ার পাশাপাশি রাস্তার মাঝ বরাবর পায়ে হাঁটতেন, লিভার ও লাগাম টানতেন।

কনেস্টোগা এরিয়া হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির সভাপতি জন স্টেহম্যান সিএনএনকে বলেন, “চালক ঘোড়াগুলোকে মুখে আওয়াজ করে আদেশও দিতেন। ঘোড়ার মুখে লাগানো চামড়ার লাগামেও দু-একবার ঝাঁকা দিতেন।” জন স্টেহম্যানের পরিবার ১৭৪৩ সাল থেকে ওই এলাকায় জমি চাষ করে আসছে।

ধরুন, আপনি দীর্ঘ ধুলো-বালিময় পথ দিয়ে এমন একটি ঘোড়ায় টানা নীল-রঙা ওয়াগন নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ মানুষের মতো আপনিও ডানহাতি। আর ঠিক সেই কারণেই কনেস্টোগা ওয়াগনগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল বাম দিকে, ওয়াগন চালকের ডান হাতের কাছে। এর মানে চালক রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটতেন আর ওয়াগনটি রাস্তার ডানদিকে থাকত।

১৯ শতকের একটি আসল কনেস্টোগা ওয়াগন। ছবি: সিএনএন।

ওই সময়ে ল্যাঙ্কাস্টার কাউন্টি, পেনসিলভানিয়া ও ফিলাডেলফিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যানবাহন চলাচল অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে সেখানেই আমেরিকার প্রথম প্রধান মহাসড়ক তৈরি হয়। ফিলাডেলফিয়া ও ল্যাঙ্কাস্টার টার্নপাইক রোড ১৭৯৫ সালে খুলে দেওয়া হয়েছিল। এম. জে. লে-র বই ওয়েজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-এ বলা হয়েছে, এই মহাসড়কের সনদে লিখিত নিয়মগুলোর মধ্যে একটি ছিলো- সমস্ত যানবাহনকে রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলতে হবে— ঠিক যেভাবে কনেস্টোগা ওয়াগনগুলো চলত।

১৮০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাজ্য হিসেবে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ রাজ্যের সব রাস্তা ও মহাসড়কে ডানদিক দিয়ে গাড়ি চলাচলের নিয়ম বেঁধে দেয়। এর আগে ১৭৯২ সালে পেনসিলভানিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে এই নিয়ম জারি করা হয়েছিল। এরপর এই নিয়ম কানাডাসহ আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।

তবে অনেকে এর কৃতিত্ব হেনরি ফোর্ডকে দিতে চান। কারণ ১৯০৮ সালে ফোর্ড মোটর কোম্পানি তাদের মডেল টি নামের যে গাড়িটি বাজারে ছাড়ে এর স্টিয়ারিং হুইলটি বাম দিকে ছিল। তবে বাস্তবতা হলো ফোর্ড আসলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী চালকের আসন বাম দিকেই রেখেছে। যে নিয়ম অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল।

অবশ্য ফোর্ড তার এই মডেল দিয়ে বাম দিকে স্টিয়ারিং হুইল বসানোর নিয়ম পাকাপোক্ত করেন। কারণ ডান পাশ দিয়ে চালালে চালকের আসনটি বাম পাশেই থাকতে হবে। আর নয়তো দুর্ঘটনা ঘটবে বেশি। আর বাম দিক দিয়ে চললে চালকের আসনটি ডানদিকেই থাকতে হবে। তাহলেই চালক ঠিকঠাক মতো রাস্তাটি দেখতে পাবেন এবং অপরদিক থেকে গাড়ি আসলে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবেন।

কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো- ব্রিটেন ছাড়া ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই আমেরিকানদের মতো রাস্তার ডানদিক দিয়ে গাড়ি চালায়।

ফোর্ডের মডেল টি গাড়ি।

ইউরোপজুড়ে নেপোলিয়নের আইন

নিজেদের মহাদেশেও ব্রিটিশরা কেন বেখাপ্পা? এর দায় বা কৃতিত্ব মূলত ফরাসিদের। ফরাসি বিপ্লবের সময়কার ম্যাক্সিমিলিয়েন রবেসপিয়েরের সরকার নির্দেশ দিয়েছিল সমাজের সব শ্রেণির মানুষকেই রাস্তার ডানদিক দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে।

ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে নিয়ম ছিল, রাস্তার বাম দিকটি মালামাল বহনকারী গাড়ি ও যারা ঘোড়ায় চলাফেরা করেন তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তার মানে, ধনিক শ্রেণীর লোকদের জন্য রাস্তার বাম পাশটি বরাদ্দ ছিল। সাধারণ পথচারী বা দরিদ্র লোকদের রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য করা হত। কিন্তু ফারসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই শ্রেণি বৈষম্য উৎখাত করা হয়। এরপর থেকে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সব মানুষকে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলাচল করতেই বাধ্য করা হয়। শ্রেণিবৈষম্য দূর করার পাশাপাশি রাস্তার একপাশ দিয়ে চলাচল সড়কে নিরাপত্তার জন্যও ভালো, এতে দুর্ঘটনাও কম হয়।

উচ্চ শ্রেণিগুলো তা সহজেই মেনে নিয়েছিল। কারণ সেই দিনগুলোতে আভিজাত্য দেখানো কেবল পশ্চাৎপদতাই না বরং বিপজ্জনকও ছিল। বিপ্লবীরা অভিজাতদের ধরে ধরে নিয়ে গিলোটিনে গলা কেটে হত্যা করত।

নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পুরো ইউরোপজুড়ে ফরাসিদের এই নীতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। ১৮১২ সালে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্যের একটি মানচিত্র দেখলে এর কিছু প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।

সেসময় ইউরোপে এমন কোনও জাতি ছিল না যারা নেপোলিয়নের প্রজা বা মিত্র না। তবে একমাত্র সুইডেন ব্যতিক্রম ছিল। সুইডেনে রাস্তার বাম দিক দিয়েই গাড়ি চলত। তবে আশ্চর্যজনকভাবে ১৯৬৭ সালের একদিন হঠাৎ করেই সুইডেনেও সব গাড়ি রাস্তার ডানদিকে দিয়ে চলতে শুরু করে।

বিশ শতকে জার্মানিও তাদের দখল করা দেশগুলোতে ডান দিক দিয়ে চলাচলের নিয়ম ছড়িয়ে দেয়। অবশ্য রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো নিজেরাই স্বেচ্ছায় এই নিয়ম গ্রহণ করে।

১৯৬৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সুইডেনের স্টকহোমের একটি রাস্তা। সেদিন থেকেই দেশটির সব গাড়ি বাম থেকে ডান দিক দিয়ে চলা শুরু করে।

যুক্তরাজ্য কেন বাম দিকেই থাকল

ব্রিটেন ফরাসিদের নীতি গ্রহণ করেনি, কারণ তারা কখনও ফরাসিদের অধীনস্ত হয়নি। এছাড়া এর পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেশটিতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের আধ্যিক্য থাকার কথাও বলা হয়। আর তা ছাড়া ব্রিটেনে বড় আকারের ওয়াগন কম ছিল। ছোট গাড়ি ও স্বতন্ত্র ঘোড়সওয়ার বেশি ছিল।

ঘোড়ার পিঠে চড়ে চলাচলের সময় আরোহীরা শুভেচ্ছা জানাতে এবং প্রয়োজনের সময়ে তলোয়ার বা বন্দুক চালিয়ে লড়াইয়ের জন্য তাদের ডান হাতটি ব্যবহার করতেন। এজন্য ডান হাতটি সামনের দিক থেকে আগত যানবাহনের দিকে রাখতে আর রাস্তার বাম দিকেই থাকতে পছন্দ করতেন ব্রিটিশরা।

শত বছরের পুরোনো বামদিক দিয়ে চলাচলের নিয়মটাকেই ১৭৫৬ সালে লণ্ডনে সড়কে চলাচলের রীতিতে পরিণত করে ব্রিটেন। ১৭৭৩ সালের সাধারণ হাইওয়ে আইনে এই রীতিকে আরও উৎসাহিত করা হয়। আর ১৮৩৫ সালে একে পুরোপুরি আইনে পরিণত করা হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা দেশগুলোতেও এই রীতির প্রচলন করা হয়। তবে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির পর অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ডানদিক দিয়ে চলাচলের রীতি চালু করা হয়।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের আর মাত্র তিনটি দেশে রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলাচলের রীতি রয়েছে- আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র, মাল্টা ও সাইপ্রাসে। তিনটি দেশই ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ দেশ।

অবশ্য, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশসহ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও জাপানের মতো এশিয়া মহাদেশের কিছু দেশে এখনও রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলাচলের রীতি চালু রয়েছে।

জাপান কখনোই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল না, তবুও দেশটিতে রাস্তার বাম দিক দিয়েই যানবাহন চলাচল করে। এর কারণ ব্রিটিশরাই দেশটিতে প্রথম রেললাইন স্থাপন করে দেয়। ১৮৭২ সালে জাপানে প্রথম রেললাইন চালু করা হয়। তাদের এই রেলসড়ক তৈরিতে ইংল্যান্ড প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। যার ফলে প্রচুর রেললাইন ও রেলওয়ে যানবাহন যেমন ট্রেন, ট্রামও আনা হয় ব্রিটেন থেকে।

যুক্তরাজ্যে যেহেতু রাস্তার বামদিক দিয়েই যানবাহন চলাচলের রীতি প্রচলিত ছিল, সেহেতু এসব ট্রেন, ট্রাম জাপানেও বাম দিক দিয়েই চলাচল শুরু করে। ১৯২৪ সালে জাপান রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলাচলের আইনও করে।

১৮৭২ সালের একদিন লন্ডন ব্রিজে।

অবশ্য প্রাচীন কাল থেকেই জাপানে রাস্তার বামদিক দিয়ে চলাচল করাই রীতি ছিল। দেশটির সামুরাই যোদ্ধারা তাদের তলোয়ার বাম দিকেই রাখতেন। যাতে লড়াই করার সময় তারা সহজেই ডান হাত দিয়ে তা খুলে ফেলতে পারেন। এ ছাড়া দুজন সামুরাই পথ অতিক্রম করার সময় রাস্তার ডান দিক দিয়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে চললে তাদের পরস্পরের তরবারির মধ্যেও ঘর্ষণের ঝুঁকি থাকত। তারবারির এই ঘর্ষণ আক্রমণ বা উস্কানি হিসাবে দেখা হত। তাই তারা অহেতুক সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য রাস্তার বামদিক দিয়েই চলাচল করতেন।

বাম দিয়ে চলার রীতিই সবচেয়ে প্রাচীন

প্রাচীনকালে বিশ্বের প্রায় সবখানেই রাস্তার বামদিক দিয়ে চলাচল করার নিয়মই চালু ছিল। যুক্তরাষ্ট্রেই প্রথম ডানদিক দিয়ে চলার নিয়ম চালু হয়। রাস্তার বামদিক দিয়ে চলাচললের নিয়মের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে প্রাচীন রোমান সম্রাজ্যের অধীনে থাকা অঞ্চলে। রোমান আমলে পুরো ইউরোপজুড়েই রাস্তাঘাট ছিল এবং মালামাল ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করত। তাই নিরাপত্তার জন্য তারা কিছু নীতিমালা তৈরি করে।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, রোমানরা রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলাচল করত। তবে তারা ঠিক কী কারণে রাস্তার বাম দিকটাই বেছে নিয়েছিলেন তার কোনও লিখিত বিবরণ নেই। তবে ধারণা করা হয়, ডান হাতে তরবারি নিয়ে লড়াই করা বা সামনের দিক থেকে আসা কাউকে অভিবাদন জানানোর জন্য ডান হাতকে কাজে লাগানোর সুবিধার্থেই তারা বামদিক দিয়ে চলাচল করত। এই বামদিক দিয়ে চলার নিয়ম তাদের সাম্রাজ্যের সব জায়গায় মধ্যযুগ পর্যন্ত চালু ছিল।

প্রাচীনকালে বিশ্বের সব জায়গাতেই রাস্তার বাম পাশ দিয়েই চলাচলের রীতি ছিল। বেশিরভাগ মানুষই যেহেতু ডানহাতি তাই ঘোড়ায় চড়ে চলাচলের সময় ডান হাতটি প্রয়োজনে তলোয়ার ধরার জন্য বা অন্য পথচারীদের সঙ্গে হাত মেলাতে মুক্ত রাখতে হত। যেজন্য রাস্তার বাম পাশ দিয়েই চলাচল সুবিধাজনক ছিল। এ ছাড়া রাস্তার বাম পাশ থেকে ঘোড়ায় বা গাড়িতে চড়া নিরাপদও ছিল।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৬৩টি দেশ ও অঞ্চলে রাস্তার ডান দিকে দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। আর মাত্র ৭৬টি দেশে এখনও রাস্তার বাম দিক দিয়েই যানবাহন চলাচলের রীতি রয়ে গেছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, রিডার্স ডাইজেস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা, স্ট্যাটিস্টা ডটকম

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত