“সন্দেহটা তো আমরা আগেই করেছিলাম, কিন্তু তার মূল্য দিতে হলো অনেক বেশি,” বলছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেন্থেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিসিয়ানসের (বিএসএ-সিসিপিপি) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কাওছার সরদার।
তার এই সন্দেহ ছিল হ্যালোথেন নিয়ে, যা যে কোনও অস্ত্রোপচারের জন্য অবেদনবিদরা রোগীর ওপর ব্যবহার করে আসছিলেন।
এই হ্যালোথেন নিয়ে সন্দেহ কেন হয়েছিল, তা বলেন সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক।
“বোতলগুলো দেখেই সন্দেহ হয়। নড়বড়ে ছিপি, বোতলে ছিপি বসানোর ধরন-বোতলের গায়ে লেখার ধরন, সব মিলিয়েই সন্দেহটা হয়।”
এই হ্যালোথেন উৎপাদন বাংলাদেশে যারা করত, সেই এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিল এক বছর আগে। তারপরও তা হাসপাতালগুলোতে ব্যবহারের জন্য পাওয়া যাচ্ছিল।
সন্দেহ ছাপিয়ে এখন জানাই গেল, এই ওষুধ নকল হচ্ছিল এবং তা চলেও যাচ্ছিল হাসপাতালগুলোতে। তাতে মৃত্যু ঘটেছে। নকল ওষুধ তৈরির একটি চক্রকে গ্রেপ্তারও করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর গত ২৭ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়, অবেদন করার ক্ষেত্রে হ্যালোথেনের বিকল্প ব্যবহার করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনস্ট্রেশন (এফডিএ) ১৯৫৩ সালেই হ্যালোথেনের ক্ষতিকর শারীরিক ও পরিবেশগত প্রভাবের কারণে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করেছিল। গত শতকের ৯০ এর দশকের দিকে বাজারে আসে আইসোফ্লুরেন ও সেভোফ্লুরেন নামের দুটি ওষুধ। বিভিন্ন দেশে সেগুলো চললেও বাংলাদেশে হ্যালোথেনই ব্যবহার হচ্ছিল।
কেন? সেই প্রশ্নে ডা. দেবব্রত বণিক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ওষুধটা তো এতদিন ‘ব্যানড’ ছিল না। চিকিৎসকরাও ব্যবহারে অভ্যস্থ ছিলেন, সেই কারণে ব্যবহার হয়েছে।
তবে গত বছর দেশের একমাত্র হ্যালোথেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কাঁচামালের অভাবের কারণ দেখিয়ে। তারপরও ওষুধটি যে নকল হয়ে পৌঁছে যাচ্ছিল হাসপাতালে, তা এখন জানার পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
যেসব মৃত্যু রেখে গেছে প্রশ্ন
দেশে প্রতিদিন যেখানে অন্তত ১৩ হাজারের মতো অস্ত্রোপচার হয়, সেখানে এই সময়ে কতটি মৃত্যু ভেজাল হ্যালোথেনের কারণে হয়েছে, তার কোনও পরিসংখ্যান নেই।
তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের সন্দেহ, এগুলোর জন্য ভেজাল চেতনানাশক কারণ হতে পারে।
গত ৩১ মার্চ ঢাকার লালমাটিয়ার ইস্টার্ন কেয়ার হাসপাতালে মারা যান মোহাম্মদ শামীম। তাকে চেতনানাশক ওষুধ দেওয়ার পরপরই তার অবস্থার অবনতি হয়েছিল। গত ১৮ মার্চে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের বেসরকারি হাসপাতাল আলোক হেলথকেয়ারে পাইলস অপারেশনের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পরপরই খিঁচুনি এবং বমি শুরু হয়ে হোসনে আরা নামে এক নারীর। ঢাকার আলোক হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়।
তার পরদিন কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের জন্য ১২ বছরের তাসফিয়া জামানকে চেতনানাশক দেওয়ার পর তার জ্ঞান আর ফেরেনি।
অ্যানেস্থেসিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা আলোচিত হয় তার আগে গত জানুয়ারিতে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুতে।
সবশেষে গত মাসে বিএসএমএমইউতে তিনটি প্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে ভেজাল চেতনানাশক ব্যবহারের বিষয়টি শনাক্ত হয়। গত কয়েক মাসে এই শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছিল।
এরপরই অবেদন করার ক্ষেত্রে ভেজাল হ্যালোথেনের ব্যবহারের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ভেজাল ওষুধের কারণে হোক, চিকিৎসকের গাফিলতিতে হোক, যে কোনও মৃত্যুর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় স্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ -ই- মাহবুব।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চিকিৎসা ব্যবস্থার সূর্য অস্তগামী অবস্থায় রয়েছে। আর তার মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। নকল ওষুধ, অস্ত্রোপচারের আগে-পরে যেসব সাবধানতা নেওয়া দরকার, সেগুলো না নেওয়ার কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে।
“কেউ তো দেখার নেই, জবাব দেওয়ার নেই, মানুষের মৃত্যুও কাউকে ভাবায় না, এটাই দুঃখ দেয় এ বয়সে এসে।”
দেরিতে পদক্ষেপ, কাজ বাকি এখনও
২০২৩ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট দেশে হ্যালোথেনের অপর্যাপ্ততার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল সোসাইটির পক্ষ থেকে।
বিএসএ-সিসিপিপির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কাওছার সরদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা অনেক আগেই সংকটের কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু অধিদপ্তর পদক্ষেপ নিতে কিছুটা দেরি করেছে, যার কারণে অনেকগুলো ঘটনা ঘটল, ডিজাস্টার হয়েছে অনেক কিছুতেই, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছিলাম, কিন্তু সেটা হয়নি।”
সোসাইটির পক্ষ থেকে অবেদন করার ক্ষেত্রে আইসোফ্লুরেন এবং সেভোফ্লুরেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভ্যাপোরাইজার ব্যবহারের সুপারিশ করেছিলেন বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধের মান নিশ্চিতে নির্দেশনা দেয় গত ২৭ মার্চ। তাতে বলা হয়, অ্যানেস্থেসিয়াতে হ্যালোথেন ব্যবহার ও এর বিকল্প নির্ধারণ করতে হবে। সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে ইনহেলেশনাল অ্যানেস্থেটিক হিসেবে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন অথবা সেভোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে।
সেই সঙ্গে দেশের সব হাসপাতালে বিদ্যমান হ্যালোথেন ভেপোরাইজার পরিবর্তন করে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন এবং ভেপোরাইজার স্থাপনে খরচের পরিমাণ জানাতেও বলা হয়েছে।
ভেপোরোইজার একটি বিশেষ যন্ত্র, যার মাধ্যমে রোগীর শরীরে চেতনানাশক দেওয়া হয়।অধ্যাপক কাওছার সরদার বলেন, “আমাদের সোসাইটির সঙ্গে পরামর্শ করে স্বাস্থ্য বিভাগ এসব নির্দেশনা দিয়েছে। আরেকটু আগে যদি হতো, তাহলে আরেকটু ভালো হতো। এরপরও বেটার লেট দেন নেভার।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো ভেজাল হ্যালোথেন ব্যবহার করছে। কারা কারা করছে, সেই নজরদারি কঠিন হবে।
বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, “হাসপাতালগুলোতে যে হ্যালোথেনের মজুত আছে, কালোবাজারির জন্য সেগুলোর একটি বোতল থেকে ভেজাল মিশিয়ে দু-তিনটি বোতল করা হচ্ছে। যেহেতু বাজারে চাহিদা আছে; দেড় হাজার টাকার হ্যালোথেন পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
“এতদিন বুঝলেও আমাদের হাতে কোনও প্রমাণ ছিল না যে হ্যালোথেনে ভেজাল হয়েছে। কিন্তু এখন প্রমাণিত। তাই এটি বন্ধ করে দিতে হবে। যদি কোনোটা ভালোও থাকে, তবুও বন্ধ করতে হবে, ব্যবহার করা যাবে না। কোনও রোগীকেই আমরা আনসেফ রাখতে পারি না।”
অধ্যাাপক কাওছার সরদার বলেন, কেবল নির্দেশনাতেই আটকে থাকলে হবে না। এখানে কঠোর নজরদারি দরকার হবে। কাজ বাকি রয়েছে অনেক।
“সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন এবং সেভোফ্লুরেন ভেপোরাইজার মেশিন বদলাতে হবে। অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে নজরদারিতে রাখতে হবে, তাদের বাধ্য করতে হবে। নয়ত উপায় থাকবে না আমাদের।”
ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কি এত সহজ কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “চেষ্টা করতে হবে, আর সেখানে সবাইকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নয়ত সফলতা আসবে কী করে?”
দেরিতে হলেও পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নকল হ্যালোথেন বাজারে যেন আর না থাকে, অন্য কোনওভাবে দেশে যেন না আসতে পারে, সেজন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পক্ষ থেকে।
“আর দেশের হাসপাতালগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হ্যালোথেন ব্যবহার না করার জন্য। আর এজন্য প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দিয়েছি হাসপাতালগুলোতে নজরদারি আরও বাড়াতে।”
প্রতি লাখে একজন অবেদনবিদ
দেশে প্রতিদিন সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজারের মতো অস্ত্রোপচার হয় বলে জরিপটি বেশ আগের। চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু সে অনুপাতে অবেদনবিদ খুবই নগণ্য।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত নন এমন কোনও অবেদনবিদ বা অ্যানেস্থেসিওলজিস্টকে দিয়ে এখন থেকে আর অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত কাজ করানো যাবে না বলে নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিসিয়ানস (বিএসএ-সিসিপিপি) এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন প্রায় আড়াই হাজারের মতো অবেদনবিদ রয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি লাখ মানুষের জন্য বর্তমানে রয়েছেন একজন, যেখানে হওয়া উচিৎ পাঁচজন।
সংখ্যাটা এত কম কেন- প্রশ্নে সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক কাওছার সরদার বলেন, “আমাদের সংকটটা অনেক বেশি। জুনিয়ররা এখানে আসতেই চায় না, তারা এই বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী নয়। যার ফলে দিনকে দিন ক্রাইসিসটা আরও বেশি হচ্ছে।”
কেন আসতে চাইছে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বেসরকারি হাসাপাতালগুলোতে অবেদনবিদদের সম্মান নেই, রেমুনারেশন নেই। অথচ উন্নত বিশ্বে জেনারেল সার্জনের চাইতেও অবেদনবিদের সম্মান এবং সম্মানী বেশি, আমাদের দেশে ঠিক এটা উল্টো। যেখানে সম্মান এবং সম্মানী নাই, কেন শিক্ষার্থীরা আসবে এখানে?”
ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পরে কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। এর প্রধান কারণ অবেদনবিদের অভাব।
উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এক সময় অস্ত্রোপচার করার ব্যবস্থাই ছিল না সেখানে। ২০২২ সালে ওষুধ, যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার, গাইনোলোজিস্টের ব্যবস্থা করা হলেও অস্ত্রোপচার আটকে থাকে অবেদনবিদের জন্য।
“সবকিছু থাকলেও অস্ত্রোপচার বন্ধই রইল। এরপর একজন অবেদনবিদ এলেন। ২০২৩ সালে ফের দুজনকেই বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর মার্চ থেকে আবার অস্ত্রোপচার বন্ধ। এরপর একজনকে এখানে দেওয়া হয়। তাকে আবার মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্তি দিয়েছে। অনেক দেনদরবার করে, মন্ত্রণালয়ে বহুত চিঠি চালাচালি করে আমি তাকে এখানে নিয়ে আসি, সপ্তাহের একদিন তিনি এই উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে তাকে দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা. সাবরিনা মাসুক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অপারেশনের আগে সার্জন কে জানতে চায়, কিন্তু তাকে অজ্ঞান করবে কে, এ নিয়ে কেউ জানতেই না। অথচ সবচেয়ে টাফ কাজটা আমরা করি, তাকে অজ্ঞান করিয়ে জ্ঞান ফেরানোর দায়িত্বটা আমাদের।
“মাঝে মাঝে মনে হয়, এ বিভাগে এসে ভুল করেছি, প্রচণ্ড আক্ষেপ কাজ করে। আর এর ফলাফল প্রতি পদে পদে পাই।”
ডা. কাওছার সরদার বলেন, “অ্যানেস্থেসিয়ার আরেক সহ বিষয় পেইন ম্যানেজমেন্ট। এই বিষয়টাও উন্নত করা দরকার, নয়ত কিন্তু ভবিষ্যতে বর্তমানের চাইতেও সংকট তৈরি হবে।”
অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনও। তিনি বলেন, “গাইনোকোলজিতে এত পরিমাণ মানুষ, তাদের প্রমোশন দেওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু বেসিক সাবজেক্টে আমাদের লোক নেই। এভাবে চলতে থাকলে হবে না। যে বিষয়গুলোতে আমাদের সংকট হয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।”
‘দেশ নকল হ্যালোথেনমুক্ত’
বাজারে নকল হ্যালোথেন রয়েছে বলে চিকিৎসকরা আমঙ্কা করলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলছেন ভিন্ন কথা।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশজুড়ে ভীষণভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কর্মীরা; তাদেরকে কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও সেগুলো ( নকল হ্যালোথেন) খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
তাহলে দেশ নকল হ্যালোথেন মুক্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু পাওয়া যায়নি, তাই মুক্ত বলতে পারি। সাধারণত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যেসব ওষুধের দোকান থাকে, সেখানেই এগুলো বিক্রি হতো। আমরা এসব জায়গায় কঠিন অভিযান চালিয়েছি; পাইনি।
“আমরা রেড দিয়েছি, দেখেছি, খুঁজেছি, চিন্তার কিছু নেই।”
হ্যালোথেনের পরিবর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে আইসোফ্লুরেন এবং সেভোফ্লুরেন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে, সেই ওষুধ কতটা রয়েছে জানতে চাইলে মো. সালাউদ্দিন বলেন, “আইসোফ্লুরেন ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস দেশেই তৈরি করছে। যেহেতু লোকালি তৈরি হচ্ছে, তাই প্রাপ্তিতে কোনও সংকট নেই। যতই চাহিদা থাকুক তারা দিতে পারবে।”
সেভোফ্লুরেনও একই প্রতিষ্ঠান আমদানি করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটারও সমস্যা নেই, ঘাটতি নেই। প্রাপ্তিতে কোনও সংকট নেই।
“আশা করছি আমাদের এ নিয়ে কোনও ধরনের চিন্তা করতে হবে না।”