Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

হিটস্ট্রোক বৃদ্ধির শঙ্কা, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি কেমন

তীব্র গরমে গাছের ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। তাকে সঙ্গ দিচ্ছে একটি কুকুরও। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
তীব্র গরমে গাছের ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। তাকে সঙ্গ দিচ্ছে একটি কুকুরও। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

পূর্ণ শক্তিতে তাপ ছড়াতে থাকা বৈশাখী সূর্যের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে জারি করা হয়েছে তিনদিনের হিট অ্যালার্ট। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। গত দুদিনে চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও মাদারীপুরে গরমে অসুস্থ হয়ে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিন যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে তাপপ্রবাহকে আবহাওয়াবিদরা মৃদু থেকে অতি তীব্র অবস্থা ভেদে যে চারটি ভাগে ভাগ করেন, তার প্রতিটিই এখন বিরাজ করছে দেশের বেশিরভাগ এলাকায়। এছাড়া শিগগিরই এই গরম কাটবে না বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস। বলা হচ্ছে, আগামী কয়েকদিন দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই পরিক্রমায় বাড়ছে নানা ধরনের রোগ-বালাই। বিশেষ করে তীব্র গরমে বড় সংকট সৃষ্টি করে হিটস্ট্রোক।

চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, এ বছর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। তাই হাসপাতালগুলোকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

কখন বুঝবেন হিটস্ট্রোক হচ্ছে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. খায়রুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগের অবস্থাকে বলা হয় হিট এক্সরসন।

তিনি বলেন, “এসময় শরীর দুর্বল হয়ে যায়, হাত পা অবশ হয়ে যায়। শরীর কনফিউশন স্টেইজে চলে যায় অর্থাৎ চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় লিভার-কিডনি বিকল হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বললেন, ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মানুষ কিছু সময় থাকলেই শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেবে। এ সময় সে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ সময় শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়, শরীর থেকে লবণপানি বের হয়ে যায়। তখনই মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, খিচুঁনি শুরু হয়। সঠিক চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুও হতে পারে।”

হিটস্ট্রোকের প্রতিকার

এ সমস্যা থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব বাইরে বের না হওয়ার কথা বললেন ডা. মো. খায়রুল ইসলাম। আর বাইরে যদি যেতেই হয়, সেক্ষেত্রে তার পরামর্শ– সঙ্গে ছাতা রাখতে হবে, পানি পান করতে হবে বারবার।

এই চিকিৎসক বলেন, “যদি কেউ বুঝতে পারে যে তার শরীর হিট এক্সরসন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পানি পান করতে হবে, শরীরে পানি ঢালতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় যেকোনোভাবেই হোক না কেন, শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোকের রোগী বাড়তে পারে– তা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়ার দিকেও তাদের নজর রয়েছে।

ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বললেন, হিটস্ট্রোক নির্ভর করে বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার উপর। যেহেতু এখন সেটা সহনীয় মাত্রায় নেই, তাই যতটা সম্ভব রোদে না যেতে অনুরোধ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকের রোগী বাড়তে পারে তা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এখন এ সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। যেখানে চিকিৎসা পরিকল্পনা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে রবিবার থেকে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

‘জনস্বাস্থ্যের জরুরি সমস্যা’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আইইডিসিআরের বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন দেশের এই সময়ে হিটস্ট্রোককে ‘জনস্বাস্থ্যের জরুরি সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

কেন জরুরি সমস্যা বলছেন তা জানতে চাইলে এই মহামারি বিশেষজ্ঞ বলেন, “যখন যেটাই স্বাভাবিকতা অতিক্রম করবে, সেটাই স্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা। এটি ঠেকাতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা যেন দ্রুত হয়, সে অনুরোধ রইল আমার।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরামর্শ

তীব্র গরমে বয়স্ক ও শিশুদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

শনিবার দুপুরে সাভারের সিআরপি নার্সিং কলেজের ভবন উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সেগুলো সব জায়গায় দেওয়া হবে। যারা বয়স্ক ও শিশু তারা যেন প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাইরে বের না হয়। আর বাকি যে নির্দেশনাগুলো সেগুলো আজকেই চলে যাবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত