Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

সাক্ষাৎকার

কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের চেয়েও ভালো করছে

কায়সার হামিদ

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) হিসাবে ২ যুগ পূর্ণ করছে বাংলাদেশ ফ্যাইন্যান্স লিমিটেড। খাতভিত্তিক লিজ অর্থায়নের পাশাপাশি সম্প্রতি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, গ্রাহকবান্ধব সেবা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসএমই, কৃষি ও পরিবহনের মতো আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড এবং গৃহঋণ নিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। শেষ চার বছর অত্যন্ত দক্ষ হাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনবিএফআই খাতে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহাম্মদ কায়সার হামিদ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সকাল সন্ধ্যার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শেখ শাফায়াত হোসেন

কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের চেয়েও ভালো করছে

কায়সার হামিদ

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) হিসাবে ২ যুগ পূর্ণ করছে বাংলাদেশ ফ্যাইন্যান্স লিমিটেড। খাতভিত্তিক লিজ অর্থায়নের পাশাপাশি সম্প্রতি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, গ্রাহকবান্ধব সেবা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসএমই, কৃষি ও পরিবহনের মতো আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড এবং গৃহঋণ নিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। শেষ চার বছর অত্যন্ত দক্ষ হাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনবিএফআই খাতে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহাম্মদ কায়সার হামিদ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সকাল সন্ধ্যার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শেখ শাফায়াত হোসেন

সকাল সন্ধ্যা: বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশে সুদের হার বেড়ে সঞ্চয়পত্রকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে অনেকেই আমানত রাখতে উৎসাহ পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সরবরাহ আগের থেকে বাড়ছে। এক্ষেত্রে আর কী ধরনের প্রভাব আর্থিক খাতে পড়তে পারে?

কায়সার হামিদ: গত বছরের জুলাইয়ে সুদের হার বাজারভিত্তিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ‘স্মার্ট রেট করিডোর’ চালু করে, তার ফলেই ব্যাংকের আমানতের সুদ বেড়ে সঞ্চয়পত্রকে ছাড়িয়ে গেছে। এর দুই ধরনের প্রভাব রয়েছে। এক, মানুষ আবার সঞ্চয়মুখী হবে। ব্যাংকে যখন সুদের হার কম ছিল, তখন মানুষ হাতে টাকা রেখে দিত। ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ তখন দেড় লাখ কোটি টাকা থেকে বেড়ে আড়াই লাখ কোটি টাকা হয়। এখন আমানতের সুদ হার ভালো হওয়ায় সেই টাকাগুলো আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। 

দ্বিতীয় যে প্রভাব পড়তে পারে তা হলো, তহবিল ব্যয় বাড়ায় ঋণদান কর্মসূচি ব্যাহত হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতির সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আমানতের সুদ বৃদ্ধি ও ঋণের দুষ্প্রাপ্যতা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এই পরিস্থিতিতে সব খাতে না হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ঋণ বাড়ানোর বিষয়ে মনযোগী বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। কারণ এসএমই খাতে ঋণ অপ্রতুল। এখানে আরও বিনিয়োগ দরকার এবং এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের টেকসই অর্থায়নের লক্ষ্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সকাল সন্ধ্যা: বাংলাদেশ ফাইন্যান্স কি তাহলে এসএমই ফোকাসড? এই প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ বা অর্থায়ন পণ্যগুলো কী ধরনের? আপনি বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ছোট ঋণ বিতরণ ভালো। এ ধরনের ঋণ কম খেলাপি হয়। এটা কতটা সঠিক?

কায়সার হামিদ: দেশের ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে এসএমই খাতে ঋণ রয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকা। এই ঋণগুলোর মধ্যে যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টিকেট সাইজ ছোট, তাদের ঋণ আদায়ও বেশ ভালো, একই সঙ্গে খেলাপি ঋণও কম। 

এসএমই খাতের ওপর বৈশ্বিক ইস্যুগুলোর প্রভাব কম পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা এধরনের ঘটনা রপ্তানি খাতে যে ধরনের প্রভাব রাখে, এসএমই খাতে সেই প্রভাবটা অনেক কম। কারণ তারা স্থানীয় বাজারকেন্দ্রিক, রপ্তানি হয় সীমিত পরিসরে। তবে এসএমই ঋণের তদারকি করতে হয় বেশি। এ ধরনের ‘সুপারভাইজ লোন’ এর বিজনেস মডেল ঠিক থাকলে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ঋণ বাড়ানো সম্ভব। এ ধরনের ঋণের আদায়ের হার শতভাগ। 

গত ৪ বছর আগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের মোট ঋণের ৬৫ শতাংশ ছিল করপোরেট লেন্ডিং। ৩৫ শতাংশ ছিল এসএমই এবং রিটেইল, যার মধ্যে আবার ১৯ শতাংশ ছিল এসএমই ঋণ। বর্তমানে এসএমই ও রিটেইল ঋণ ৫০-৫২ শতাংশে পৌঁছে গেছে। যার মধ্যে এসএমই ঋণের হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। আগামী ৫ বছরে এই হার ৪৫ শতাংশে উন্নীত করারও লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের। 

এই চার বছরে আমরা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি, যার খেলাপির হার শূন্য। স্বল্প মেয়াদি এই ঋণগুলো অনেক গ্রাহক দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বারও গ্রহণ করেছে। 

সকাল সন্ধ্যা: আগামী ১০ মে, ২০২৪ তারিখে ২৫ বছরে পা দেবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো কী?

কায়সার হামিদ: দীর্ঘ এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থায়ন সুবিধা দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। গত ৪-৫ বছর ধরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ ৩-৪টির মধ্যেই থাকছে। এটা একটি ধারাবাহিক সাফল্য আমি বলব। 

এছাড়া গ্রাহকের সংখ্যা অনেকগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৫-২০ হাজার। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের। এই প্রতিষ্ঠান দু’টিও নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভালো করছে। 

দেশে একাধিক ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা প্রতিবছর রেটিং করিয়ে থাকি। আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও একাধিক সংস্থার কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। এছাড়া প্রথমবারের মতো আমরা একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের রেটিং করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এটাই হবে বাংলাদেশের প্রথম কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক রেটিংপ্রাপ্তি।

তবে সামগ্রিকভাবে আমরা গ্রাহকদের যে ধরনের মানসম্পন্ন সেবা দিয়েছি, তাতে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আস্থা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন রেটিংয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। এর থেকে বড় পুরস্কার আর কিছুই হতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে একটি রেটিং প্রকাশ করে, সেখানে গত বছর ৭টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টেকসই ব্যাংকিং হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ওই তালিকায় রয়েছে। এই রেটিং যে মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, সেখানে ব্যাংকের মৌলিক ভিত্তির উন্নয়ন ও টেকসই অর্থায়নে নজর দেওয়ার বিষয়টিকে মূল্যায়ন করা হয়। তাতে দেখা যায়, যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন বজায় রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি ভালো করছে।

সকাল সন্ধ্যা: দেশে অনেক ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়ায় মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর থেকে বোঝা যায় ভালো করতে না পারলে ব্যাংকের অস্তিত্ব থাকে না। আবার সুশাসন থাকলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ভালো করতে পারে। আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

কায়সার হামিদ: একথা ঠিক যে অনেকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ব্যাংকের থেকেও ভালো করছে। তবে এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার যে, ব্যাংক হলেই বড় প্রতিষ্ঠান বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলেই তারা ছোট বা দুর্বল, বিষয়টি এমন নয়। একটি প্রতিষ্ঠান যেসব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, সেগুলো কিছু সূচক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। সেই সূচকের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিষ্ঠান কতটা শক্তিশালী, তা বোঝা যায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে একটি রেটিং প্রকাশ করে, সেখানে গত বছর ৭টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টেকসই ব্যাংকিং হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ওই তালিকায় রয়েছে। এই রেটিং যে মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, সেখানে ব্যাংকের মৌলিক ভিত্তির উন্নয়ন ও টেকসই অর্থায়নে নজর দেওয়ার বিষয়টিকে মূল্যায়ন করা হয়। তাতে দেখা যায়, যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন বজায় রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি ভালো করছে।

বর্তমানে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে এবং তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যতটা সচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা দেখা যাচ্ছে, তাতে ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক ব্যাংকের থেকেও ভালো বলা যায়।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স গত ৪-৫ বছর ধরে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা করছে। আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সব ধরনের পরিপালনীয় কাজগুলো করছে বিধায় আইসিএবি, আইসিএসবি এবং সাফা অ্যাওয়ার্ডে শীর্ষ অবস্থান অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। 

তাছাড়া স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এখন সময় এসেছে কিছু দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার। এটা যদি সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে করা যায়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সবল ব্যাংকগুলোর জন্যও কিছু প্রণোদনা থাকতে হবে। কারণ তারা দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নিচ্ছে। এ কাজের জন্য প্রণোদনা থাকলে সবল ব্যাংকগুলো উৎসাহিত হবে।  

সকাল সন্ধ্যা: এবার আপনার ব্যাংকিং পেশার অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাইব। দীর্ঘদিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী? নেতৃত্বের দিক দিয়ে কি কোনও পার্থক্য আছে? 

আমি অনেক বড় ব্যাংকে কাজ করেছি, যাদের কয়েকশ’র বেশি শাখা আছে, কর্মী ১২-১৩ হাজার। আবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে মাত্র ৭টি শাখা, ২০০-২৫০ কর্মী নিয়ে কাজ করছি। আমার কাছে মনে হয়, এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজের যে ভিন্নতা এবং সেই কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া, কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখাই নেতৃত্বের প্রধান গুণাবলী।

কায়সার হামিদ: প্রথমত, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে একই অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে, একই ধরনের নীতি-প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে বড় পার্থক্য হলো, আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের দৈনন্দিন লেনদেন বা নগদ লেনদেন সুবিধা দিতে পারে না। এছাড়া ব্যাংক সেবা-মাসুলের বিনিময়ে যে ধরনের লেনদেন সুবিধা দেয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা দিতে পারে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি আমানত ও অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে কাজ করে। যেখানে ব্যাংকগুলো চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খোলা থেকে শুরু করে স্বল্প মেয়াদি অনেক ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। ব্যাংক নন-ফান্ডেড অনেক সেবা দিতে পারে, বৈদেশিক লেনদেন সুবিধা, ঋণপত্র সুবিধা দিতে পারে। এসব সেবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না। 

এর বাইরে এসএমই, রিটেইল, করপোরেট লেন্ডিং, বন্ড অর্থায়নসহ অনেক সেবাই আছে, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ই দিতে পারে। এজন্য প্রায় একই ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। 

আমি অনেক বড় ব্যাংকে কাজ করেছি, যাদের কয়েকশ’র বেশি শাখা আছে, কর্মী ১২-১৩ হাজার। আবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে মাত্র ৭টি শাখা, ২০০-২৫০ কর্মী নিয়ে কাজ করছি। আমার কাছে মনে হয়, এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজের যে ভিন্নতা এবং সেই কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া, কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখাই নেতৃত্বের প্রধান গুণাবলী। 

সেক্ষেত্রে গত ৪-৫ বছরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে সমাজে আস্থা তৈরি করা, কর্মী ও স্টেকহোল্ডারদের মূল্যসংযোজন, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণ, সরকারকে কর দেওয়া এবং গ্রাহকের আস্থা অর্জনসহ প্রত্যেকটি সূচকে উন্নতি করেছে। এই কাজগুলোকে আমি আমার নেতৃত্বের প্রধান অর্জন বলে মনে করি। এক্ষেত্রে বড় বা ছোট প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমি আমার কাজের মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখি না। 

বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। একটি বড় চ্যালেঞ্জ বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা, রিজার্ভের ওপর চাপ, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া— এই বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেহেতু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেহেতু খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

সকাল সন্ধ্যা: এনবিএফআই সেক্টরে বর্তমানে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে একজন প্র্যাকটিশনার হিসেবে আপনি মনে করেন? এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সেক্টর লিডারদের কী করণীয়? একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের তরফ থেকে কী ধরনের নীতিগত সহায়তার দরকার আছে বলে মনে করেন?

কায়সার হামিদ: বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। একটি বড় চ্যালেঞ্জ বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা, রিজার্ভের ওপর চাপ, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া— এই বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেহেতু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেহেতু খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি বাড়লে সাধারণ আমানতকারীদের তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে দৈনন্দিন জীবন যাপনের ব্যয় নির্বাহ করতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমানত ও ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের দিক থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অনেকটা সুশৃঙ্খল হওয়ায় এই চ্যালেঞ্জগুলো ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবে বলে আমার মনে হয়। তবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একই। কর ব্যবস্থাপনাও একই। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাজের ব্যাপকতা এক নয়। এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের নীতিকাঠামোয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেভাবে সুনির্দিষ্ট সীমারেখা দেওয়া আছে, সেভাবে আমাদের এখানে নেই। এটা বাংলাদেশে করা সম্ভব হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঠিক পথে পরিচালিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

সকাল সন্ধ্যা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কায়সার হামিদ: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত