Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

বাঁধাকপি, তরমুজসহ অর্গানিক খাবারেও উচ্চমাত্রার কীটনাশক!

পরীক্ষা করা ৫৯টি খাবারের ২০ শতাংশেই ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পরীক্ষা করা ৫৯টি খাবারের ২০ শতাংশেই ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপারমার্কেটে বিক্রি হওয়া অনেক সাধারণ ফল ও শাকসবজির সঙ্গে তরমুজ, সবুজ শিম বা মটরশুটি ও কলাই জাতীয় খাদ্য এবং ক্যাপসিকামেও অনিরাপদ মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার কনজিউমার রিপোর্টসে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

ফল ও শাকসবজিতে কীটনাশকের উপস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সাত বছর ধরে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য পণ্যগুলোতে কীটনাশকের উপস্থিতি সম্পর্কে এযাবতকালের সবচেয়ে ব্যাপক মূল্যায়ন হাজির করা হয়েছে।

ওই সাত বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি অধিদপ্তর (ইউএসডিএ) নিয়মিত কীটনাশক পরীক্ষার অংশ হিসেবে সুপারমার্কেটগুলো থেকে ফল ও সবজির ৩০ হাজার নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে তাজা, হিমায়িত, টিনজাত ও অর্গানিক সব ধরনের ফল ও সবজিই ছিলো।

কনজিউমার রিপোর্টস সাত বছর ধরে ইউএসডিএর সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য একটি বিশাল ডাটাবেইজ তৈরি করেছে। ওই তথ্য বিশ্লেষণের পর তারা কোন খাবারে কী পরিমাণ কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে তার একটি স্কোর তৈরি করে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশও করেছে।

কনজিউমার রিপোর্টসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এর গবেষণায় পরীক্ষা করা ৫৯টি সাধারণ খাবারের প্রায় ২০ শতাংশ খাবারে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত খাবারের মধ্যে রয়েছে- প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতিতে জন্মানো (অর্গানিক নয়) বাঁধাকপি, ব্লুবেরি, আলু ও ক্যাপসিকাম। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে- আপেল, আঙ্গুর, পীচ, টমেটো, পালং শাক ও সেলারি ।

গবেষণায় দেখা গেছে, অর্গানিক ফল ও শাকসবজিতে সাধারণত প্রচলিত পদ্ধতিতে জন্মানো খাবারের তুলনায় অনেক কম কীটনাশক থাকে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো কিছু অর্গানিক খাবারেও কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমদানিকৃত সবুজ শিম ও মটরশুটিতে জাতীয় খাদ্যে উচ্চ মাত্রায় আর দেশীয় আলুতে মাঝারি মাত্রায় কীটনাশক পাওয়া গেছে। এই অর্গানিক ফসলগুলো কীভাবে অর্গানিক চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত নয় এমন উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ কীটনাশক দ্বারা দূষিত হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত খাদ্যের তুলনায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত, প্রচলিতভাবে উৎপাদিত খাদ্যগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। মেক্সিকোতে উৎপাদিত খাবার, যেমন- স্ট্রবেরি ও সবুজ শিম বা মটরশুটি জাতীয় খাদ্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক ছিল। মেক্সিকান স্ট্রবেরিতে অক্সিডেমেটন-মিথাইল পাওয়া গেছে, যা অর্গানোফসফেট নামক একটি কীটনাশক গ্রুপের অংশ। এটি নিউরোটক্সিন বা স্নায়বিক বিষ। এই শ্রেণীর কীটনাশক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে উচ্চ মাত্রায় উত্তেজিত এবং শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ব্যাহত করতে পারে।

পরীক্ষিত সবুজ শিম বা মটরশুটি জাতীয় খাদ্য নমুনাগুলোর মাত্র ৪ শতাংশে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কিন্তু ওই চার শতাংশেই খুব বেশি উদ্বেগজনক মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের একটি সবুজ শিমের নমুনায় মেথামিডোফসের মাত্রা কনজিউমার রিপোর্টসের বিজ্ঞানীরা যতটুকুকে নিরাপদ বলে মনে করেন তার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ছিল। মেথামিডোফোস যুক্তরাষ্ট্র এবং সবুজ শিমের আমদানির ওপর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিষিদ্ধ।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এখনও সুপারমার্কেটের খাদ্য পণ্যগুলোতে এই রাসায়নিকটির উপস্থিতি মিলছে।

তবে সরকারের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিএ) তুলনায় কনজিউমার রিপোর্টসের বিজ্ঞানীদের নিরাপদ খাদ্যের মানদণ্ড অনেক বেশি কঠোর। সরকারি পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা যে মাত্রার কীটনাশকের উপস্থিতি পেলে কোনও খাবারকে অনিরাপদ মনে করে কনজিউমার রিপোর্টসের বিজ্ঞানীরা তার চেয়ে অনেক কম মাত্রার দূষণেই কোনও খাবারকে অনিরাপদ মনে করেন।

কৃষি শিল্প সংস্থা দ্য অ্যালায়েন্স ফর ফুড অ্যান্ড ফার্মিং বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি অধিদপ্তর (ইউএসডিএ) এর পরীক্ষিত ৯৯ শতাংশ শাকসবজিতে সরকার নির্ধারিত মাত্রায়ই কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কিন্তু কনজিউমার রিপোর্টসের গবেষকরাসহ অনেক বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, সরকারের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) কীটনাশক সহনশীলতার যে মাত্রা নির্ধারণ করে দেয় তা প্রায়ই নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে, যা ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

কনজিউমার রিপোর্টসের সিনিয়র বিজ্ঞানী মাইকেল হ্যানসেন বলেছেন, “পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) কীটনাশকের সহনশীলতার যে মাত্রাগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে তার অনেকগুলোই সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই মাত্রাগুলো বেশ কয়েক বছর আগে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তারা এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়নি যেখানে কোনও নমুনায় একাধিক কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ রয়েছে। বর্তমানে তথ্য সহজলভ্য হওয়ায় এবং উন্নত কম্পিউটিং শক্তি থাকায় প্রকৃত ঝুঁকি আরও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।”

কীটনাশকসৃষ্ট বিপদগুলোর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ খামার শ্রমিক ও কীটনাশক প্রয়োগকারীদের কাছ থেকে আসে, যারা ফসলে প্রয়োগ করার সময় এসব ক্ষতিকর রাসায়নিকের অনেক বেশি মাত্রার সংস্পর্শে আসে। কর্মক্ষেত্রে কীটনাশকের সংস্পর্শে আসা পারকিনসন বা স্মৃতিভ্রষ্ট রোগের উচ্চ ঝুঁকি, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গেও যুক্ত।

ভোক্তাদের ক্ষেত্রে কীটনাশক দ্বারা দূষিত খাবার খাওয়ার ঝুঁকি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে। দূষিত খাবার একবার বা দুবার খেলে বেশিরভাগ মানুষেরই তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। তবে মাসাধিককাল বা বছরজুড়ে নিয়মিতভাবে দূষিত ফল ও সবজি খেলে বিপদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

এ ক্ষেত্রে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ কিছু কীটনাশক মানব শরীরের বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে প্রজনন ব্যবস্থার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত