সংবাদ সম্মেলন শেষ হতেই তহুরা খাতুন, সুরভী আক্তার ইতিদের সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুললেন সাবিনা খাতুন। একই ফ্রেমে বন্দী হওয়া এই নারী ফুটবলারদের অনেকে জাতীয় দলে সাবিনার সতীর্থ। কিন্তু নারী ফুটবল লিগে সবাই সাবিনার প্রতিপক্ষ।
আগামী শনিবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হবে নারী ফুটবল লিগের ষষ্ঠ আসর। এর আগে শুক্রবার বাফুফে ভবনে হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। যেখানে এবারের লিগে অংশ নেওয়া ৯ দলের অধিনায়ক জড়ো হয়েছিলেন এক ছাদের নিচে। কথা বলেছেন এবারের নারী ফুটবল লিগে নিজেদের প্রস্তুতি ও সম্ভাবনা নিয়ে।
শুরুতেই আলোচনায় তাপপ্রবাহ
দেশে ৭৬ বছরের মধ্যে চলছে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ। টানা ২৬ দিন চলছে এমন তাপপ্রবাহ। দাবদাহে সড়কে গলছে পিচ। থমকে আছে জনজীবন। স্কুল কলেজও বন্ধ। গড়ে প্রায় প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকছে ঢাকা শহরে। এই অবস্থায় কমলাপুর স্টেডিয়ামের কৃত্রিম টার্ফ রোদের তাপে প্রচন্ড গরম হয়ে পড়ে। যেখানে ঘাসের মাঠে ফুটবল খেলতেই হাসফাস করেন ফুটবলার, সেখানে প্রচন্ড গরমে দুপুর বেলায় শুরু হবে মেয়েদের লিগ। যদিও সকাল সাড়ে নয়টাও ম্যাচ রাখা হয়েছে লিগে।
এমন গরমে কিভাবে ফুটবল খেলবে মেয়েরা? প্রশ্নটা করতেই বাফুফের মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ অনেকটা অসহায়ের সুরে বলেন, “আমরা নিজেরাও জানি এখানে প্রচুর গরম। এখানে খেলা অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের বাইরে কোনও জায়গায় খেলার আয়োজন চালানোর বিষয়টা ম্যানেজ করতে পারতাম না।”
মাঠ সঙ্কট ও ফ্লাড লাইটের ব্যবহারে অপরাগতার কারণটাকে সামনে আনলেন তিনি, “আমাদের একটাই মাঠ। আর কোনও মাঠ নেই। এই মাঠে প্র্যাকটিস করতে হয়। আবার এই মাঠে খেলতে হয়। যে কারণে সকালে ১০টায় যে খেলা ছিল সেটা অনেক কষ্টে সাড়ে ৯টায় নিয়েছি। তাছাড়া ভোর ৬টা থেকে ন্যাশনাল টিমের প্র্যাকটিস চলে। তাদের জন্য সময় দিতে হয়। এছাড়া স্টেডিয়ামে আমরা ফ্লাড লাইট ব্যবহার করতে পারবো না। কারণ সেটা ব্যবহার করতে গেলে প্রতি ম্যাচ বাবদ সাড়ে ১৩ হাজার করে টাকা বিল আসবে বাফুফের। যে বিলটা আমাদের দিতে হবে এনএসসিকে। এত টাকা আমাদের নেই।”
প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি দুই সহোদর
নারী ফুটবল লিগের প্রথম ম্যাচে শনিবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দল ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী। তারই সহোদর গোলাম রায়হান কোচ হিসেবে আছেন আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজের। ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে।
দুই ভাইয়ের ডাগ আউটের লড়াইটা যে উপভোগ্যই হবে সেটা বললেন আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজের অধিনায়ক তহুরা খাতুন, “প্রথম দিনেই আমরা মাঠে নামব। মাঠের খেলায় আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। এছাড়া দুই ভাইয়ের মধ্যেও একটা লড়াই হবে।”
সেনাবাহিনী দলের অধিনায়ক মেহেরুর আক্তার মীম মুখিয়ে আছেন এই ম্যাচে নামতে, “এবারের লিগের প্রস্তুতির জন্য আমরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাইনি। প্রতিটি ফুটবলার ফিট। আমাদের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন স্যার জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি উনার কাছে। যদিও আতাউর রহমান ভূঁইয়ার সব মেয়ে জাতীয় দলের। কিন্তু আমরাও এটা দেখে ভয় পাচ্ছি না। আশা করি জমজমাট ম্যাচ হবে।”
এক পেশে লড়াই হবে না লিগে
শুধু প্রথম ম্যাচ না পুরো লিগই জমজমাট হবে বলে আশা করছেন সাবিনা খাতুন। গত ৩ আসরে যিনি ছিলেন চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক। আর বসুন্ধরা কিংস মানেই যেন এক পেশে লড়াই। যদিও এবার রহস্যজনক কারণে বসুন্ধরা কিংস মেয়েদের ফুটবল লিগে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। বসুন্ধরা কিংসের সব ফুটবলার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলবে বিভিন্ন ক্লাবে। সেই কারণেই কিনা এবারের লিগে সাবিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করছেন।
সাবিনা এবার খেলবেন নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির হয়ে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দল ও নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির অধিনায়ক বলেন, “এবারের লিগ হবে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আগে যেমন একপেশে ম্যাচ হতো। এবার সেটা হবে না। প্রথম ম্যাচ দিয়েই বুঝতে পারবেন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বী হবে এবারের লিগ।”
এবারের লিগে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবহিনী ফুটবল ক্লাব, আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ দল, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং, উত্তরা ফুটবল ক্লাব, ঢাকা রেঞ্জার্স এফসি, সিরাজ স্মৃতি সংসদ, জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশ, নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি ও সদ্য পুস্করনী যুব স্পোর্টিং ক্লাব।
এবারের নারী ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৫ লাখ টাকা। রানার্স আপ ৩ লাখ। এছাড়া অংশগ্রহণ ফি ৫০ হাজার। নারী ফুটবল লিগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।