Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

মুসলমানদের নিয়ে কী বলেছেন মোদী, যা নিয়ে এত বিতর্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক বক্তব্য নিয়ে চলছে বিতর্ক। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও শিরোনাম হয়ে উঠছে।

গত ১৯ এপ্রিল ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার অষ্টাদশ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী ১ জুন পর্যন্ত ৪৪ দিনে ৭ দফায় চলবে এই ভোটগ্রহণ। ২৬ এপ্রিল, শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ হবে।

ভোটের প্রচারে রাজনৈতিক নেতারা দেশময় চষে বেড়াচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা মোদীও তাই করছেন। এর মধ্যেই গত রবিবার রাজস্থানে এক সমাবেশে মোদী অংশ নেন। সেখানে তার দেওয়া বক্তব্য ঘিরেই চলছে বিতর্ক।

জনসভায় মোদী বিজেপির প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ক্ষমতায় ফিরলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘যাদের বেশি সন্তান রয়েছে’ তাদের মধ্যে দেশের সম্পদ বণ্টন করে দেবে।

তার কথাটি ছিল এমন- “তারা (কংগ্রেস) যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা বলেছিল সম্পদের উপর মুসলমানদের অধিকার আগে। তারা আপনাদের সমস্ত ধন-সম্পদ একত্র করে তাদের মধ্যে বণ্টন করবে, যাদের বেশি সন্তান আছে। তারা অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে আপনাদের সম্পদ বিতরণ করবে।”

এরপর জনতার উদ্দেশে মোদী আরও বলেন, “আপনার কষ্টার্জিত অর্থ কি অনুপ্রবেশকারীদের দেওয়া উচিৎ?”

বিরোধীরা সুযোগ পেলে মঙ্গলসূত্রও কেড়ে নেবে বলেও মন্তব্য করেন মোদী। হিন্দু বিয়ের রীতি অনুযায়ী স্বামী তার স্ত্রীর গলায় যে হার বেঁধে দেন, তাই মঙ্গলসূত্র।

ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বেশি মুসলমান। দেশটিতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বহু ইতিহাস রয়েছে।

দুই যুগ আগে গুজরাটে দাঙ্গার জন্য রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে দায়ী করা হয়। সেই অভিযোগ নিয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন মোদী। এবার ভোটে জিতলে টানা তৃতীয় বার সরকার প্রধানের দায়িত্ব পাবেন তিনি।

মোদীর মন্তব্যে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরেই মোদী ও বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদের পক্ষে সমর্থন আরও বাড়ানোর জন্য সাম্প্রদায়িক বিভাজনমূলক বক্তব্য ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছেন।

মোদীর বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কি না, তা তদন্ত করতে বিরোধী দলের নেতারা ভারতের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিআই) আহ্বান জানিয়েছে।

ভারতের নির্বাচনী আচরণবিধিতে স্পষ্ট করে বলা আছে, রাজনীতিবিদদের অবশ্যই ‘জাত’ ও ‘সাম্প্রদায়িক অনুভূতির’ ভিত্তিতে ভোটারদের কাছে আবেদন করা উচিৎ নয়।

সম্প্রদায় এবং ধর্মের মধ্যে ‘বিভেদ বাড়াতে পারে বা পারস্পরিক ঘৃণা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে’, এমন কার্যকলাপও অনুমোদিত নয়।

রাজস্থানের স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা মোদীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে দুটি অভিযোগ পেয়েছেন। তাতে তার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করার এবং তাকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) একজন কর্মকর্তা রেনু পুনিয়া জানান, অভিযোগগুলো আজাদ অধিকার সেনা নামের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ও একটি স্থানীয় অলাভজনক সংস্থার কাছ থেকে এসেছে।

ভারতের নির্বাচনী বিধি রাজনীতিবিদদের ধর্মীয় বা বর্ণ বিভাজনমূলক বক্তৃতা ও প্রচার চালাতে নিষেধ করে। কিন্তু অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, নির্বাচনী কর্মকর্তারা খুব ধীরগতিতে কাজ করেন, বিশেষ করে সরকারের প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদীর বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী মিত্রদের অনেক নেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ২০ কোটির বেশি মুসলমানকে কার্যকরভাবে বহিরাগত হিসেবে চিত্রিত করে চলেছেন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আসা মুসলমান আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীরদের বিশেষভাবে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

বিজেপি ও এর মিত্ররা দীর্ঘকাল ধরে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্বও প্রচার করছে যে, ভারতীয় মুসলমানরা জনসংখ্যায় দেশটির হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় বেশি বেশি সন্তান উৎপাদন করে।

কিন্তু বাস্তবে সরকারি তথ্য ও পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, ভারতের মুসলিমদের সন্তান জন্মদানের হার সব সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্রুততম গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে এবং গত তিন দশকে মুসলমানদের জন্মহার প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ মোদীর বিরুদ্ধে রয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং মুসলমানদের গণহত্যার পরে মোদী ত্রাণ শিবিরগুলোকে ‘বাচ্চা উৎপাদনের কারখানা’ বলে উপহাস করেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার দলের অন্যরা এবং জোটের অংশীদাররাও প্রায়ই খোলামেলা ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিচ্ছেন।

বিজেপি অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে সাফল্যকে ভোটের প্রচারে আনলেও এখনও সাম্প্রদায়িকতাই তাদের প্রচারের প্রধান অস্ত্র।

হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক আবেগকে ব্যবহার করেই মোদী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন চরম আকার ধারণ করবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক ভাষ্যকার অসীম আলী বলেন, মোদীর এই মন্তব্য ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে উত্তেজক বক্তব্য এবং তার নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চিহ্নিত করছে।

আলী বলেন, “পাঁচ বছর আগে প্রশ্ন ছিল- কেন মোদী আর চরমপন্থার কণ্ঠে কথা বলছেন না; আর এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীই সবচেয়ে চরমপন্থি প্রচারক।”

মুসলমান সাংবাদিক রানা আইয়ুব এক্সে লিখেছেন, “এটি একটি সম্প্রদায়কে টার্গেট করে সরাসরি ও নির্লজ্জ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য।”

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিনের সভাপতি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, “২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোদী শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা উসকে দিয়েই ভোট পেয়েছেন।”

কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গেও মোদীর বক্তব্যকে ঘৃণার্হ এবং হিন্দু ভোটারদের মনযোগ ভিন্ন খাতে সরানোর একটি সুচিন্তিত চক্রান্ত বলে বর্ণনা করেছেন।

কট্টর হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সঙ্ঘের মূল্যবোধ থেকে যা শিখেছেন, আজ তাই করেছেন। ভারতের ইতিহাসে আর কোনও প্রধানমন্ত্রী তার পদের মর্যাদা মোদীর মতো এত নিচে নামায়নি।”

সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশক ধরে মোদী ও তার দল বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতির সঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণ তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। এই মেরুকরণ বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের দেশটিতে ইসলামভীতির ঢেউ এবং মারাত্মক সাম্প্রদায়িক সংঘাতের জন্ম দিয়েছে।

যদিও বিজেপি বলছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করে না এবং সব নাগরিকের সঙ্গে সমান আচরণ করে। কিন্তু গবেষণা, সংবাদ প্রতিবেদন এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বেড়েই চলছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুসলিমবিরোধী বক্তব্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে ভারতে।

তারা ২০২৩ সালে এমন ৬৬৮টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে।

নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অসচেতন, না কি স্বভাবগত

রবিবারের বক্তব্য দেওরার সময় মোদী কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার ও বিরোধী দলের অতীত বিবৃতিগুলোর উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে কংগ্রেস ভারতের আর্থ-সামাজিক অসমতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে সম্পদ পুনঃবণ্টনের প্রতিশ্রুতি দেয়।

২০০৬ সালে কংগ্রেসের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, ভারতের সমাজের ঐতিহ্যগতভাবে প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলো, ঐতিহাসিক বৈষম্যের শিকার নিচু জাতগুলো এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের দেশের সম্পদের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ।

মনমোহন সিংয়ের ওই মন্তব্যের পর সাবেক বিচারপতির অধীনে সরকার নিযুক্ত প্যানেলের এক প্রতিবেদনেও দেখা যায়, ভারতীয় মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থা দেশটির যে কোনও জাত বা সম্প্রদায়ের চেয়ে খারাপ।

অনেক বিশ্লেষক এবং সাধারণ মুসলমানরা বলছেন, মোদীর মন্তব্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত সহিংসতা উসকে দিতে পারে। এটি ভারতের একটি বড় সমস্যা এবং বর্তমান সরকারের দশক-ব্যাপী শাসনামলে চরম আকার ধারণ করেছে।

সাংবাদিক জেয়াদ মাসরুর খান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হয়ত কংগ্রেসকে বিদ্রুপ করার জন্যই কথাগুলো বলেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা মুসলমানদেরকে ভারতের জন্য সম্পদ নয় বরং সমস্যা হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই আরও স্থায়ী করবে।

“এই মন্তব্য এমনকি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকেও উৎসাহিত করতে পারে।”

জেয়াদ মাসরুর ‘সিটি অন ফায়ার’ নামের বইয়ের লেখক। বইটি উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের এক মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে লেখা হয়েছে।

জেয়াদ মাসরুর বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় বার্তার এই পরিবর্তন মোদীর ‘প্রকৃত স্বভাবের প্রকাশ’।

নয়াদিল্লি-ভিত্তিক সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস) এর গবেষণা প্রোগ্রাম লোকনীতি নেটওয়ার্কের জাতীয় সমন্বয়কারী সন্দীপ শাস্ত্রী আবার মনে করছেন, মোদীর এই মন্তব্য একটি বেফাঁস কথা এবং প্রচার কৌশলে সচেতন কোনও পরিবর্তন নয়।

সিএসডিএস এর জরিপে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী জোটের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি ভোট পাবে।

শাস্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি না যে, এমন কোনও বাস্তব পরিস্থিতি আছে, যে কারণে মোদীকে এমন কৌশল নিতে হবে।”

তবে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেও মোদীর এমন মন্তব্যে হতাশ হয়েছেন।

শাস্ত্রী ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মোদীর সমস্ত ভারতীয়দের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে বলেন, সেই পটভূমিতে রবিবারের মন্তব্য না করলেই ভালো হতো।

“তবে মোদীর অভিপ্রায় যদি তার বক্তৃতার মতোই হয়, তাহলে তা অনেক বড় একটি শঙ্কার বিষয়।”

বিজেপির শাসনে ভারতে ধর্মীয় বিভাজন বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘বাজারে যেতে ভয় লাগে’

রাজস্থানের ৩৫ বছর বয়সী ঠিকাদার আশফাক হুসেন, রবিবারের মন্তব্য সম্পর্কে মোদী বা বিজেপির কাছ থেকে কোনও ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করছেন না। তিনি বলেন, তার যথেষ্ট দেখা হয়ে গেছে।

হুসেন তার কিশোর ছেলের সঙ্গে বসে ছিলেন, যখন তার স্মার্টফোনের স্ক্রিনে মোদীর বক্তৃতার একটি ছোট ভিডিও ভেসে উঠে। তা দেখে তিনি দ্রুত নিউজ ফিড স্ক্রল করেন।

হুসেন আল জাজিরাকে বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসাবে দেখাচ্ছেন। আমি লজ্জিত বোধ করছি এবং এটি অস্বস্তিকর।”

রাজস্থান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণপিটুনিতে হত্যাসহ একাধিক মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষমূলক অপরাধের সাক্ষী হয়েছে।

হুসেন বলেন, “[মোদীর বক্তৃতা] আমার পরিবারের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে এবং ঐতিহাসিক ভ্রাতৃত্বকে মুছে দিয়ে আমাদের সমাজকে আরও বিভক্ত করে।

“আমি সন্ধ্যায় একা বাজারে যেতেও ভয় পাই। লোকে আমার নাম ধরে ডাকে এবং উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে, যা যে কোনও সময় গণপিটুনিতে হত্যায় পরিণত হতে পারে।”

তবে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র জাফর ইসলাম বলেছেন, মোদীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “মন্তব্যটিকে সঠিক প্রসঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। অতীতে, অনেক লোক বাইরে থেকে এসেছে এবং এখন সমাজে মিশে গেছে ও সম্পদ ব্যবহার করছে।”

তার মতে, মোদী অনুপ্রবেশকারী বলতে ভারতে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের কথা বলেছেন, ভারতীয় মুসলমানদের নয়।

জাফর ইসলামের দাবি, ভারতীয় মুসলমানরা মোদীর অধীনে সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে উপকৃত হয়েছে। আর বিরোধী দলগুলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তাদের ভোট দেওয়ার জন্য ভয় দেখানোর উপর নির্ভর করেছিল।

কিন্তু কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, মোদীর ঘৃণাত্মক বক্তৃতা হিন্দু ভোটারদের মনযোগ সরানোর একটি ইচ্ছাকৃত প্রয়াস।

রাজনৈতিক ভাষ্যকার অসীম আলীও তাতে একমত। তিনি বলেন, বিরোধীরা ভারতের অবেহেলিত নিচু জাতের মানুষদের জনসংখ্যার হিসাব বের করার জন্য একটি বর্ণ শুমারির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছিল।

কংগ্রেসের দাবি, এতে বের হয়ে আসতো যে কীভাবে নিম্ন বর্ণের অনগ্রসর জাতগুলো আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অসীম আলী বলেন, নিম্ন বর্ণের মানুষদের প্রতি এই সামাজিক অবিচার ঢাকা দিতেই মোদী মুসলমানদের বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। হিন্দু সমাজের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ঢাকতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করছেন।

“মঙ্গলসূত্রকে খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়। এর কথা তুলে মোদী একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক আক্রমণ করেছেন, যা ধারণা দেয় যে মুসলমানরা হিন্দুদের ব্যক্তিগত, ঘরোয়া জায়গাকেও বিপন্ন করবে। এটি ভারতীয় রাজনীতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক মুহূর্ত,” বলেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত