Beta
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪

দুই পক্ষকে মানিয়ে বেশি দিন চলা দুরূহ: মুনীরুজ্জামান

আ ন ম মুনীরুজ্জামান
আ ন ম মুনীরুজ্জামান

তিন দশক আগে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর এককেন্দ্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল বিশ্বে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এখন দেশটিকে শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চীন। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে দুই পরাশক্তির রেষারেষিতে অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও পড়ে যাচ্ছে। আধিপত্যের লড়াইয়ে ওয়াশিংটন কোন পথ ধরতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেইন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত এক নিবন্ধে। এই লড়াইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিৎ, তা নিয়ে বলেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজের সভাপতি, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান। অনুলিখনে সকাল সন্ধ্যার প্রতিবেদক জেসমিন মলি।

যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চীনের থেকে ‘প্রাইমেসি’ বা সুপ্রিমেসি মেইনটেইন করতে চাইছে। এই পলিসি থেকে তাদের সরে আসতে পরামর্শ এসেছে ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের লেখাটিতে। এর পরিবর্তে বলেছে এক ধরনের ভারসাম্যমূলক কৌশলের ভেতর দিয়ে যেতে, তাহলে দুটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র এশিয়াতে কোনও না কোনওভাবে বিদ্যমান থাকবে, যেটাকে আমি খুব একটা কার্যকর কিছু হবে বলে মনে করি না। 

গ্রেট পাওয়ার রিলেশনশিপে এ ধরনের উদাহরণ দেখা যাচ্ছে না। এখন যে ধরনের পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, সেখানে আমেরিকা এক ধরনের সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে ‘প্রাইমারি পাওয়ার’ হিসেবে, যার সঙ্গে চীন প্রতিযোগিতা করে করে কাছাকাছি আসতে বা সেটিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই চেষ্টা চালানোর যে গতি, সেটা আরও বেশ কয়েক বছর ধরেই চলতে থাকবে। বাংলাদেশের মতো যারা ছোট রাষ্ট্র বা ‘এসপায়ারিং মিডল পাওয়ার’, তাদের উচিৎ হবে যতটুকু সম্ভব ভারসাম্য বজায় রেখে স্ট্র্যাটিজিক ইকোনমি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। 

তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খুব বেশি দিন ব্যালেন্স করে বা ভারসাম্য রক্ষা করে চলাটা হয়ত দুরূহ হবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে হয়ত কোনও একটি পক্ষের দিকে কিছুটা হলেও ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বা চাপের মুখে হেলে পড়তে হবে। সেজন্যই এখন থেকে আমাদের জাতীয় স্বার্থে কী করা উচিৎ, সেই পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। 

বর্তমানে বিশ্বে যারা ক্ষমতার প্রাধান্য বজায় রাখছে বা এশিয়াতেও, তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব। ওইসব দেশের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন স্বার্থ জড়িত। কাজেই তাদেরকে আমরা খুব বেশি এড়িয়ে চলতে পারব, তা বাস্তবে সম্ভবপর না। সামাজিকভাবে, মনস্তাত্ত্বিকভাবে বা আমাদের শিক্ষার প্রয়োজনে বা অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আমরা তাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছি । তাছাড়া বাণিজ্যের দিক বা বাজার হিসাব করলেও সেটাও প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমা বিশ্বে বা যুক্তরাষ্ট্রে। কাজেই তাদের উপর আমাদের যে ধরনের নির্ভরতা রয়েছে, তা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারব বলে মনে হয় না। 

সাময়িকভাবে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে চীন-ভারত দুই দেশের সঙ্গে এক ধরনের ভারসাম্যমূলক অবস্থান ধরে রাখার একটা প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পেয়েছি। সাময়িকভাবে এরকম চলতে পারলেও এটা খুব বেশিদিন চলতে পারবে বলে আমি মনে করি না। 

একারণে যে বাংলাদেশে চীন এবং ভারতের যে স্বার্থগুলো জড়িত আছে, তাদের যে জাতীয় স্বার্থ জড়িত আছে, সেটাও পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। কাজেই এক দেশকে যদি সমর্থন করতে হয়, তাহলে সেটি অন্য দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যাবে। চীন এবং ভারতের যে ধরনের বৈরী সর্ম্পক, সেখানে আমাদের কোনওভাবেই দুই দেশের সঙ্গে সমান পর্যায়ের সর্ম্পক বজায় রাখা বাস্তবসম্মত হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। 

বর্তমানে মিয়ানমারে এক ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনী বড় ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। প্রাদেশিক অঞ্চলগুলোতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণের মুখে পড়ে তারা বেশকিছু ভূমি হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে ‘থ্রি ব্রাদারহুড’ নামের যে জোট গঠন করা হয়েছে, সেটার আক্রমণের মুখে চীন ও মিয়ানমার সীমান্তে বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটি তারা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া চীনের সঙ্গে কিছু ট্রেডিং চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণও এখন ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের হাতে চলে গেছে।

ইদানীং আমরা লক্ষ্য করেছি চিন প্রদেশের একটি বড় শহর আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে, যেটা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি । কাজেই আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি যে দুটি প্রদেশ আছে চিন এবং আরাকান, সেই দুটিই অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। এই অস্থিতিশীলতার মাত্রা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিৎ হবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কোনদিকে কীভাবে যাচ্ছে, সেটির উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখা। একইসঙ্গে সেখানে যেভাবে পরিস্থিতি প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে, সেটাকে পর্যবেক্ষণে রাখা। 

শুধু সেটাই না, সেই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে আমাদের পদক্ষেপ নির্ধারণ করার কথাও ভাবতে হবে। আমাদের সীমান্ত অবশ্যই আরও সুরক্ষিত করার প্রয়োজন আছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার যেগুলো আছে, সেগুলোর প্রভাব বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর আসার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই সেদিকে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করে সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত