Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

কলাম

রিপোর্টার্স ডায়েরি

সারাজীবন রিপোর্টিংয়ে থাকতে পারলেই ভালো লাগত

প্রণব সাহা। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার।

আসলে সারাজীবন রিপোর্টিংয়ে থাকতে পারলেই ভালো লাগত। প্রথম আলোতে প্রথমে ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, পরে চিফ রিপোর্টার আর শেষে নগর সম্পাদক হলেও রিপোর্টিংকেই বেশি উপভোগ করেছি। এখনও চেষ্টা করি তেমন কাজ করার, যাতে বার্তাকক্ষে প্রতিদিন নতুন কিছু যোগ করতে পারি। আর সুযোগ পেলেই ফিরে যেতে চাই রিপোর্টিংয়ের সোনালী অতীতে। এই যেমন ‘সকাল সন্ধ্যা’র সম্পাদক স্নেহাস্পদ গাজী নাসির উদ্দীন আহমেদ খোকন রিপোর্টার্স ডায়েরি লেখার কথা বলল, রাজি হয়ে গেলাম। বছর আটেক আগে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশিস সৈকত ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক থাকার সময় ঈদ সংখ্যায় লিখিয়েছিল রিপোর্টার্স ডায়েরি। বলতে পারি, ২০১৬ সালের সেই লেখার আট বছর পর এবার তার দ্বিতীয় কিস্তি, এবং একই বিষয়ে। কারণ একই রিপোর্টের ফিডব্যাক পেলাম গত বছরও।

প্রথম আলোতে ২০০৩ সালে প্রকাশিত রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটিতে উঠে সরেজমিনে দেখলাম ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে। দারুণ সম্মান দেখালেন সেখানকার নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা। আর ঘটনাক্রমে এমন একজন কর্মকর্তাকে পেলাম যিনি নিজেই আমার ২০ বছর আগের রিপোর্টটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তখনকার কনিষ্ঠ কর্মকর্তা এখন অনেক উচ্চপদে আসীন। দারুণভাবে আপ্লুত হয়ে দ্রুত ছবি তুললাম তার সঙ্গে।

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) ক্যাপস্টোন কোর্স-এর একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে ঢাকার বাইরে সফরও কোর্স কারিকুলামের অংশ। সেজন্য গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজারে। ঢাকা থেকে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজে প্রথম চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটিতে অবতরণ। সেখান থেকে পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে যাবার কথা আগেই জানা ছিল। তখন থেকেই আমার ভেতরে এক দারুণ অনুরণন। কারণ নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা বঙ্গবন্ধু’-কে নিয়েই ছিল আমার ২০ বছর আগের রিপোর্টটা। জাহাজে ওঠার পর একটা ছোট ব্রিফিং ছিল আমাদের জন্য। জাহাজের ভিতরে স্বল্প পরিসরের কক্ষটিতে ব্রিফিং শেষে আমি জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছে দু’মিনিট সময় চেয়ে নিলাম। প্রথম আলোতে ২০০৩ সালের ৩ জুলাই প্রকাশিত আমার সংবাদটির একটা স্থিরচিত্র দেখালাম, আর জানালাম ২০ বছর আগে যুদ্ধজাহাজটি নিয়ে একাধিক রিপোর্ট করলেও কেন জানি এই জাহাজটিতে আসার সুযোগ হয়ে ওঠেনি দুই দশকেও।

প্রথম আলোতে লাল রঙা শিরোনামে ছাপা হওয়া রিপোর্টটি আমার পুরো রিপোর্টিং জীবনের একটি উল্লেখ করার মতো রিপোর্ট। কারণ ঐ সংবাদটি প্রচার হবার পর সেই সামরিক আদালতের বিচারটি আর সম্পন্ন হয়নি। আরও উল্লেখ করার মতো ঘটনা হচ্ছে অভিযুক্ত ১৭ কর্মকর্তার একজন ক্যাপ্টেন জহির উদ্দিন আহমেদ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন।

সম্প্রতি এনডিসির ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশ নেওয়ার সুযোগে যেতে পেরেছিলাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফ্রিগেট বঙ্গবন্ধুতে। এই ব্যতিক্রমী ঘটনা আমাকে এতটাই আপ্লুত করেছিল যে এনডিসির ক্যাপস্টোন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের সামনেও তার উল্লেখ করেছিলাম। আরেকটি কথাও এখানে উল্লেখ করতে চাই। সেটি হলো এই কোর্সে বিভিন্ন পেশার আরও ২৮ জনের সঙ্গে আমার বন্ধু জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ওবায়দুল কবীরও ছিল। প্রথম আলোতে ফ্রিগেট বঙ্গবন্ধু নিয়ে যে আলেচিত রিপোর্টটির কথা বলছি তার প্রাথমিক সূত্র ছিল ওবায়দুল কবীর, যার একজন আত্মীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা, যিনি তখনকার সরকারের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। সেই সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা রিপোর্টটির শিরোনাম ছিল ‘নৌবাহিনীর ১৭ কর্মকর্তা সামরিক আদালতের মুখোমুখি হচ্ছে’।

প্রথম আলোতে লাল রঙা শিরোনামে ছাপা হওয়া রিপোর্টটি আমার পুরো রিপোর্টিং জীবনের একটি উল্লেখ করার মতো রিপোর্ট। কারণ ওই সংবাদটি প্রচার হবার পর সেই সামরিক আদালতের বিচারটি আর সম্পন্ন হয়নি। আরও উল্লেখ করার মতো ঘটনা হচ্ছে অভিযুক্ত ১৭ কর্মকর্তার একজন ক্যাপ্টেন জহির উদ্দিন আহমেদ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন। আর চট্টগ্রামে ‘বানৌজা বঙ্গবন্ধু’ পরিদর্শন শেষে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা টেলিফোন করলেন সেই সাবেক প্রধানকে, অনেকদিন পর আমরা কথা বললাম।

এবার বলি সেই রিপোর্টটির কথা। শিরোনামটি আগেই উল্লেখ করেছি। ২০০০ সালে প্রথম আলোর ডেপুটি চিফ রিপোর্টার আর ২০০১ সালে চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব নিলেও আসলে ছিলাম সিনিয়র রিপোর্টারই। সেই পদে পদোন্নতি পেয়েছিলাম ভোরের কাগজে থাকতেই ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বরে প্রথম আলো প্রকাশের আগেই যোগ দিয়েছিলাম আরও অনেকের সঙ্গে। কিন্তু ২০০৩ সালে সিনিয়র রিপোর্টার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা (Special Correspondent) হিসেবে পদোন্নতির আবেদন করলে সম্পাদক মতিউর রহমান তাৎক্ষণিক তা নাকচ করে দেন এই বলে যে চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন বা তখন রাজনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে সুনাম কুড়ালেও আমি তো কোনও বিশেষ খাতের রিপোর্টিং করি না। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ডেপুটি চিফ রিপোর্টার প্রভাষ আমিনের কাছে দায়িত্ব দিয়ে আমি চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিই। তখন থেকেই রাজনীতি, সংসদ ছাড়াও অন্য একটি খাতে কিছু করার চেষ্টা করি। ভোরের কাগজ থেকেই দেখেছি মতি ভাই সামরিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, নিজেও প্রায়ই কিছু লিখতেন। তো লেগে গেলাম প্রতিরক্ষা খাতে।

উল্লেখ করতেই হয়, ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তার সঙ্গে মতিউর রহমানের যোগাযোগ আগে থেকেই, ভোরের কাগজে তার স্মৃতিকথা ধারাবাহিক ছাপা হয়েছিল। সেটা অনুলিখনের কাজ করতো বন্ধু শাহেদ মুহাম্মদ আলী, কিছুদিন আগেও সে কালের কণ্ঠের সম্পাদক ছিল। তো তার সঙ্গে আমি যেতাম জেনারেল মইনুল হোসেনের গুলশানের বাসায়। রাগী কিন্তু অমায়িক এই সামরিক কর্মকর্তার অনেক স্নেহ পেয়েছি যেমন, তেমন প্রতিরক্ষা খাতের রিপোর্ট করতে নানাভাবে তার সহযোগিতার কথা আমাকে আজীবন উল্লেখ করতে হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে।

২০০৩ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে। চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব ছাড়ার পর আবারও আওয়ামী লীগ বিটের কাজে ফেরার চেষ্টায় প্রায় দিনই সুধাসদনে যেতাম। অবশ্য চিফ রিপোর্টার থেকেও সুযোগ পেলেই রিপোর্ট করতাম আওয়ামী লীগ নিয়ে, নিয়মিত যেতাম সংসদ অধিবেশনে। সংসদীয় কমিটির খোঁজ এবং সেই সূত্রে অনেক রিপোর্ট প্রথম আলোতেই করেছি। এমনকি মিগ-২৯ নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার বিষয়ে তখনকার বিমান বাহিনী প্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার স্মৃতিও এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে আছে আমার। সুযোগ মিললে লিখব কখনও সেই বিষয়ে।

বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তখনকার সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিগ-২৯ ও নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বঙ্গবন্ধু ফ্রিগেট কেনার জন্য দুর্নীতির মামলা করেছে। সেই মামলায় জড়ানোর জন্য নৌবাহিনীর ১৭ জন কর্মকর্তাকে সামরিক আদালতে বিচার করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই খবর পাবার পর প্রতিরক্ষা বিটের রিপোর্টার হিসেবে একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট করতে উৎসাহী হলেও কীভাবে এগুবো তা নিয়ে দ্বিধায় পড়লাম।

যা হোক, আবার ফিরি যুদ্ধ জাহাজ বঙ্গবন্ধু নিয়ে রিপোর্টের স্মৃতিতে। বন্ধু ওবায়দুল কবীর তখন আওয়ামী লীগ বিটের তুখোড় রিপোর্টার। তারই নিকট আত্মীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা যিনি কোরিয়া থেকে ফ্রিগেটটি চালিয়ে এনেছিলেন, তাকে ক্লোজ করা হয় কোর্ট মার্শাল করার জন্য। তার আগে বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তখনকার সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিগ-২৯ ও নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বঙ্গবন্ধু ফ্রিগেট কেনার জন্য দুর্নীতির মামলা করেছে। সেই মামলায় জড়ানোর জন্য নৌবাহিনীর ১৭ জন কর্মকর্তাকে সামরিক আদালতে বিচার করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই খবর পাবার পর প্রতিরক্ষা বিটের রিপোর্টার হিসেবে একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট করতে উৎসাহী হলেও কীভাবে এগুবো তা নিয়ে দ্বিধায় পড়লাম। কারণ তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত, আর দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কোর্ট মার্শাল নিয়ে রিপোর্ট করে সামাল দিতে পারব কি না তা নিয়ে সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলায় তিনি আগে তথ্য জোগাড় আর সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেবার পরামর্শ দিলেন। বন্ধু ওবায়দুল কবীর আর আমি তখন প্রায়ই যেতাম সুধাসদনে। তাই একদিন সাহস করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে নৌবাহিনীর কোর্ট মার্শালের বিষয়টি জানালাম। তিনি দুদিন পরে আবার দেখা করতে বললেন।

আমার তখন রিপোর্ট করার ব্যাপারে উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। নিজ উদ্যোগে খোঁজ নিয়ে জানলাম সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল নুরুল ইসলামও মামলার আসামী হচ্ছেন, তার সঙ্গে দেখা করলাম। যতদূর মনে পড়ে এখনকার বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুও অভিযুক্ত ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে। ১৭ জন নৌবাহিনী কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা বা দেখা করার সুযোগ ছিল না। দু-একজনের আত্মীয় কিছু তথ্য দিয়েছিলেন।

দুদিন পরে আবারও সুধাসদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলাম। উল্লেখ করতেই হয়, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর তারই বিশেষ উৎসাহে বিমান বাহিনীর জন্য রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ এবং কোরিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য ফ্রিগেট কেনা হয়েছিল। শেখ হাসিনা আবারও রিপোর্ট করার কথা বললেন। পরামর্শ দিলেন প্রথম রিপোর্টে কোনও কর্মকর্তার নাম না দেওয়ার জন্য, তাতে তাদের পরিবারগুলো সামাজিকভাবে হেয় হতে পারে। আরও বললেন তার আমলের প্রতিরক্ষা সচিব এম ইদ্রিস আলীর সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং তার রেফারেন্স দিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি করানোর জন্য। ইদ্রিস আলীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছিল, তার উদ্ধৃতি আমার প্রতিবেদনকে জোরদার করেছিল। পরে ইদ্রিস আলী মুন্সিগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় মেজর জেনারেল (অব) মইনুল হোসেন চৌধুরী নানা তথ্য জোগাড় করে দিয়েছিলেন। তার অনুরোধে নৌবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কথা বলেছিলেন, আর কথা বলার আগে শপথ করিয়েছিলেন যে আমি জীবনেও তার নাম প্রকাশ করব না।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বানৌজা বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে নৌবাহিনীর জাহাজের বহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, নৌবাহিনীর নিজস্ব ভাষায় যাকে ‘ডিকমিশন্ড’ বলা হয়ে থাকে। হাস্যকরভাবে তখন প্রতিরক্ষা জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের প্রেসরিলিজে বলা হয়েছিল—“ফ্রিগেটটি নাকি উত্তাল সমুদ্রে চলাচলের অনুপযোগী।” যদিও সেটি কোরিয়া থেকে সমুদ্র পথেই চট্টগ্রাম এসেছিল। যুদ্ধজাহাজটি ডিকমিশন্ড করার সময় জাহাজে কর্মরত নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের চোখের জল ফেলার বিষয়টিও প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল।

একটু পেছনের কথা উল্লেখ করতে হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বানৌজা বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে নৌবাহিনীর জাহাজের বহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, নৌবাহিনীর নিজস্ব ভাষায় যাকে ‘ডিকমিশন্ড’ বলা হয়ে থাকে। হাস্যকরভাবে তখন প্রতিরক্ষা জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের প্রেসরিলিজে বলা হয়েছিল—“ফ্রিগেটটি নাকি উত্তাল সমুদ্রে চলাচলের অনুপযোগী।” যদিও সেটি কোরিয়া থেকে সমুদ্রপথেই চট্টগ্রাম এসেছিল। যুদ্ধজাহাজটি ডিকমিশন্ড করার সময় জাহাজে কর্মরত নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের চোখের জল ফেলার বিষয়টিও প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল।

‘ফ্রিগেট বঙ্গবন্ধু’ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ ছিল সাবমেরিন কেনার আগে পর্যন্ত। এখন নৌবাহিনীর কাছে দুটি চীনা সাবমেরিন আছে। আমার খুব আগ্রহ সে দুটি দেখার। ওই যুদ্ধজাহাজ নিয়ে রিপোর্ট করার ১৯ বছর পর সেটি সরেজমিনে দেখার সুযোগ হয়েছিল। আর জাহাজে ওঠার পর থেকেই সামরিক কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ওখানকার ছবি যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ না করি। অবশ্য একই ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ ফরিদা ইয়াসমিন বানৌজা বঙ্গবন্ধুর ডেকে দাঁড়ানো তার ছবি ফেইসবুকে আপলোড করেছেন। আমিও ভাবছি, এবার হয়তো স্মৃতির জন্য হলেও গতবছরের ছবি প্রকাশ করব।

সবশেষে, প্রতিরক্ষা খাতের রিপোর্টিংয়ে বর্তমানে মাঠে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ— শুধু প্রতিরক্ষা নয়, যে কোনও স্পর্শকাতর ও বিশেষায়িত বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি যা পাওয়া যাবে তার কিছু তথ্য হাতে রাখতে হবে ফলোআপ করার জন্য। তাতে করে কেউ চট করে রিপোর্টারকে ঝামেলায় ফেলতে পারবে না। আর সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান তাকে জোরালোভাবে সমর্থন করে পাশে থাকবে কি না তাও বুঝে নিতে হবে।

লেখক: পেশাদার সাংবাদিক। বর্তমানে সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের বার্তাকক্ষে কাজ করছেন ৩৫ বছর ধরে। সাপ্তাহিক একতা ও ভোরের কাগজে রিপোর্টার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। ছিলেন প্রথম আলোর সূচনাকারীদের একজন, ছেড়েছেন নগর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে। এরপর টেলিভিশন সাংবাদিকতা শুরু করেন একুশে টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক হিসেবে, পরে হয়েছিলেন প্রধান বার্তা সম্পাদক। এরপর এটিএন নিউজের সূচনাকালে দায়িত্ব পালন করেছেন সম্পাদক হিসেবে। উপস্থাপক এবং টক শোর আলোচক হিসেবে টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত উপস্থিতি রয়েছে তার। এখন ডিবিসি নিউজে সঞ্চালনা করেন অর্থনীতির সংলাপ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান।

ইমেইল: pranab67@gmail.com

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত